কবুতরের রাজ্য পাবিপ্রবি

প্রকাশ | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

বিএম মিকাইল হোসাইন
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) খুব বেশি প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে এখন আর সমৃদ্ধ নেই। ৩০ একরের এই ক্যাম্পাসে এখন আছে কংক্রিটের আস্তরণে আচ্ছাদিত ইট পাথর আর বালুর সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা উঁচু উঁচু ইমারত। যেখানে প্রকৃতি ও কৃত্রিমত্তা একে অপরের সঙ্গী। এতসব কিছুর মাঝেও এই ক্যাম্পাসে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের আধিপত্য বেশ দৃশ্যমান। ক্যাম্পাসে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, তবে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে জালালি কবুতর। এই কবুতরেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের দেওয়ালে বাসা বেঁধে ক্যাম্পাসে এক অপার সৌন্দর্যের আবহ তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন এবং প্রশাসনিক ভবনসহ প্রায় প্রতিটি ভবনের কর্নার বা প্রান্তে কবুতরের উপস্থিতি চোখে পড়ে। তারা এসব ভবনের ছোট ছোট ফাঁকা জায়গা, দেয়ালের খাঁজে, বা অন্দর কোণে নিজেদের বাসা গড়ে তুলেছে। সকাল বেলায় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে কিংবা ছুটির সময় এই কবুতরের ঝাঁক আকাশে উড়ে যেতে দেখা যায়, যা এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তৈরি করে। পাবিপ্রবির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই কবুতরের দল এখানে বাস করছে। এক ধরনের স্থায়ী বাসিন্দার মতো তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে এবং বংশবিস্তার করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই সবুজ বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ থেকে এরা দল বেধে খাবার সংগ্রহ করে। নীল আকাশে জালালি কবুতরের এই দল বেধে ডানা ঝাপটানো দেখলে যেন পাবিপ্রবির বুকে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয়। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কবুতর জন্ম নিচ্ছে এবং ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে আরও রঙিন করে তুলছে। কবুতরের সংখ্যা এখন কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে। তাদের অবাধ চলাচল এবং দলবদ্ধ উড্ডয়ন ক্যাম্পাসে এক ধরনের শান্তি এবং প্রশান্তি নিয়ে আসে, যা আমাদের জন্যও মানসিক স্বস্তির উৎস জোগায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই এই কবুতরদের সাথে এক ধরনের অন্তর্নিহিত সম্পর্ক তৈরি করেছে। তাদের উড়তে দেখা, দুপুর বেলায় ভবনের ছাদে বসে বিশ্রাম নেওয়া বা ফাঁকা সময়ে খাবারের সন্ধানে ঘোরাফেরা করার দৃশ্যগুলো শিক্ষার্থীদের মনকে আন্দোলিত করে। অনেক শিক্ষার্থী তাদের ক্যাম্পাস জীবনের একাংশ হিসেবে এই কবুতরদের দেখতে শুরু করেছে। এমনকি শিক্ষার্থীরা মাঝে মাঝে তাদের জন্য খাবারও রেখে দেয়। কবুতরদের এই অবাধ চলাফেরা ক্যাম্পাসের সামগ্রিক পরিবেশে একটি বিশেষ আবহ তৈরি করেছে। প্রকৃতির সাথে মানুষের সহাবস্থানের এক সুন্দর উদাহরণ হয়ে উঠেছে পাবিপ্রবি ক্যাম্পাস। কবুতরের নির্ভরতা, তাদের স্থায়ী আবাস এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের অবস্থান কেবল মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যই বাড়ায়নি, বরং এটি প্রাকৃতিক ভারসাম্যের প্রতীক হিসেবেও স্থান পেয়েছে। পাবিপ্রবির এই অনন্য কবুতরের রাজ্য যেন এক জীবন্ত প্রকৃতির গল্প বলছে। এটি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মনের খোরাক জোগাচ্ছে এবং ক্যাম্পাসকে আরও জীবন্ত ও প্রস্ফুটিত করে তুলছে।