স্বপ্ন থেকে বাস্তবতা

ঢাবি যাত্রার পূর্ণাঙ্গ প্রতিচ্ছবি

প্রকাশ | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

মো. ফেরদৌস নাঈম রাফি
'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়' দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে স্বপ্নের মতো। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই এটি জ্ঞানের আলো ছড়ানোর কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। কেউ দেখে এর ঐতিহ্যের গৌরব আবার কেউ চায় এখান থেকে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে। তবে ঢাবির গেট পেরোনোর আগে শিক্ষার্থীরা যে স্বপ্ন আঁকে, তার কতটুকু বাস্তব হয়? প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার এই চিত্রটি প্রতিটি ঢাবি শিক্ষার্থীর জীবনের এক ভিন্ন গল্প বলে। এই গল্পে আছে কঠিন ভর্তিযুদ্ধ, ঢাবিকে আপন করে পাওয়ার আনন্দ, হল জীবন, টিউশন করে খরচ নিজ খরচ চালানোর মতো বাস্তবতার কঠিন রূপ। এবার আসা যাক কেন ঢাবি শিক্ষার্থীদের কাছে স্বপ্নের মতো? কারণ ব্যবসায় শিক্ষা কিংবা মানবিক বিভাগ থেকে সদ্য এইচএসসি পাশ করা ছেলে কিংবা মেয়েটি জানে বাংলাদেশে পড়াশোনার আকাঙ্‌ক্ষায় তার জন্য সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এই 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়'। এছাড়া বুয়েট কিংবা মেডিকেল এর পর পরই বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে এই ঢাবি। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা ছেলেটা জানে নামি-দামি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোথাও পড়াশোনা করার জন্য তার সামর্থ্য নাই। এজন্য যেভাবেই হোক ঢাকামুখী শিক্ষাব্যবস্থায় সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তার পছন্দের শীর্ষে রাখে। এমন হাজারো শিক্ষার্থী আছে যে জীবনে প্রথমবার ঢাকায় আসে এই ঢাবির স্বপ্ন জয় করার জন্য এডমিশন কোচিং করতে। এই কঠিন ভর্তিযুদ্ধের সময়টায় সেই শিক্ষার্থী বার বার ভেঙে পড়ে আবার স্কটিশ রাজা রবার্ট ব্রম্নসের কথা ভেবে নিজেকে নিজে অনুপ্রেরণা দেয়। সেই শিক্ষার্থী মানসিক চাপ নিয়ে পরিবার ও সমাজের প্রত্যাশা পূরণ করতে অধিক পরিশ্রম করতে থাকে। অনেক শিক্ষার্থী প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের পদচারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে। ফলাফল প্রকাশ হলো আর সে যখন দেখলো সে 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়' -এর একজন শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছে তখন নিজ পরিবার, সমাজ কিংবা কাছের মানুষজনের প্রত্যাশা তার ওপর কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এবার আসা যাক ঢাবির বাস্তবতায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের সেই ছেলেটি কিংবা মেয়েটি যখন ঢাবিতে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে তার সর্বপ্রথম চাওয়া থাকে তার নিজের থাকার ব্যবস্থার জন্য হলে তার বৈধ সিট বুঝে নেওয়া, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির ভয়াল থাবা থেকে নিজেকে রক্ষা করা, একাডেমিক ও ক্লাসের পরিবেশ এর সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া। কিন্তু শুরুতেই তাকে নিজের বৈধ সিট পেতে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সংগ্রাম করতে হয়। গ্রামের যে ছেলেটি কিংবা মেয়েটি এতোদিন বাংলা মিডিয়ামে পড়াশোনা করে আসছে তাকে এসেই ইংলিশ মিডিয়াম এর সাথে মানিয়ে নিতে হচ্ছে। শুরুতে স্ট্রাগল করলেও এক পর্যায়ে নিজেকে মানিয়ে নেয় ঠিকই। অনেকে নিজের খাবার কিংবা পড়াশোনার খরচ পরিচালনা করতে সে বার বার পরিবারের দ্বারস্থ হয় আবার অনেকে নিজেই নিজের এসব খরচ পরিচালনা করে। এক পর্যায়ে নিজেকে এসব কিছুর সাথে মানিয়ে নিয়ে ছুটে চলে অবরাম। শত বাধা পেরিয়ে পরবর্তী স্বপ্নকে ছুঁয়ে পেতে চায় প্রতিনয়ত। এই টানাপোড়েন একজন শিক্ষার্থীকে তার পড়াশোনা পরবর্তী চাকরি জীবন কিংবা উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনেও অনেক অবদান রাখে। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। এটি স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্ন পূরণের একটি প্রতীক। এখানে প্রত্যাশা ও বাস্তবতার টানাপোড়েনে শিক্ষার্থীরা জীবনের মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করে। ঢাবি শিক্ষার্থীদের কেবল পাঠ্যপুস্তক শেখায় না বরং শেখায় জীবনের গভীর পাঠ। যদিও বাস্তবতা কখনো কখনো প্রত্যাশার চেয়ে কঠিন তবুও এই প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত শিক্ষা ও মূল্যবোধ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের পথচলায় আলোর মশাল হয়ে থাকে। ঢাবি আমাদের স্বপ্ন দেখায় আবার সেই স্বপ্ন পূরণের সাহস দেয় এবং জীবন গড়ার পথপ্রদর্শক হয়ে থাকে।