পাঠক মত

আত্মহত্যা নয় আত্মরক্ষা করতে হবে

প্রকাশ | ২৯ মে ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বর্তমানে বিশ্বের মারাত্মক সমস্যাগুলোর মধ্যে আত্মহত্যা বড় সমস্যা। আত্মহত্যার মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, তরুণ-তরুণী এবং ৩৫ বছরের নিচে যাদের বয়স তারাই বেশি আত্মহত্যা করে মরছে। আত্মহত্যা কি? আত্মহত্যা হলো নিজের জীবনকে নিজেই বিনাশ করা। আমাদের দেশে আত্মহত্যা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়েছে গেছে। আত্মহত্যার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে হতাশা, দারিদ্র্য, পরিবার থেকে বিচ্ছেদ, বিবাহ বিচ্ছেদ, প্রেমে ব্যর্থতা, বেকারত্বের অভিশাপ, পরীক্ষায় ফেল করা, জীবনে আশানুরূপ উন্নতি করতে না পারা, মাদকাসক্ত প্রভৃতি উলেস্নখযোগ্য। হতাশা হলো একটি বড় ধরনের মানসিক সমস্যা। একজন ব্যক্তি যখন হতাশায় ভোগে তখন সবকিছুই তার কাছে বিষাদময় লাগে। ভালো-খারাপ কোনোকিছুরই বিচার-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা ব্যক্তির ভিতরে থাকে না। নিজেকে একজন ব্যর্থ মানুষ মনে করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত পরিবারের। অভাবের করাল গ্রাসে জীবনযাত্রা হয়ে ওঠে জটিল। পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে না পেরে অনেকে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। পারিবারিক সব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। যা মোটেও কাম্য নয়। পরিবার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। বাবা, মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি ইত্যাদি নিয়েই পরিবার। বর্তমানে যৌথ পরিবার তেমন দেখা যায় না। এগুলো ভেঙে একক পরিবার তৈরি হচ্ছে। বাবা-মা সন্তানদের থেকে দূরে থেকে যায় আবার সন্তানও বাবা-মা থেকে আলাদা হয়ে যায়। এই বিচ্ছেদের কারণেই অনেক সময় মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। আর এই সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তির জন্য ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। আবার বিবাহ বিচ্ছেদ বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য কিছু ঘটলে তাদের ভিতরে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। একাকিত্বের নিঃসঙ্গতা তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয় নিজেকে। অনেকে মনে করে এই নিঃসঙ্গতা দূর করতে আত্মহত্যাই হলো প্রধান ফরমুলা। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে অনেকে আত্মহত্যাকে বরণ করে নিচ্ছে। এরা মনে করে আত্মহত্যার মাধ্যমেই সব যন্ত্রণা ভুলে থাকা সম্ভব। কিন্তু আসলেই কি সম্ভব? কখনো সম্ভব নয়। কারণ একটি জীবনের মূল্য কেউ দিতে পারবে না। আবেগপ্রবণ হয়ে এই পথ বেছে নেয়া ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে যে, সব সমস্যারই সমাধান আছে। আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারত্বের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। দীর্ঘদিন বেকারত্বের কারাগারে বন্দি থাকায় তাদের মনে চরম হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই হতাশাকে চিরতরে বিদায় দেয়ার জন্য অনেকে আত্মহত্যার পথকে শান্তি-দাতার পথ মনে করে। পরীক্ষায় ফেল করা বা ভালো রেজাল্ট করতে না পারার ফলে অনেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। পরিবার থেকে তো বাড়তি চাপ থেকেই যায় যা আত্মহত্যার পথকে আরও সহজ করে দেয়। জীবনে আশানুরূপ উন্নতি করতে না পেরে মানুষের এ ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া মোটেও উচিত নয়। এখন প্রশ্ন হলো আত্মহত্যা কি সব সমস্যার সমাধান হতে পারে? কখনোই সমস্যার সমাধান হতে পারে না। কেননা নিজের জীবনকে বিনাশ করে সমস্যার সমাধান হয় না। অন্যদেরও ভালো রাখা যায় না। 'আমি আত্মহত্যা করব, আমি বাঁচতে চাই না, এই জীবন ব্যর্থ, আমিই সব সমস্যার জন্য দায়ী।' এরূপ চিন্তা যখন একজন ব্যক্তি করে তখনই তার আত্মহত্যার পথে ধাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব কথা কারও কাছ থেকে শুনলে সেই ব্যক্তিকে অবশ্যই ভালো পরামর্শ দিতে হবে। ইতিবাচক কথা বা আলোচনার দ্বারা ব্যক্তির চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আত্মহত্যার আগে ব্যক্তির সব সমস্যা পরিচিত মানুষের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে। তাহলে নিশ্চয় একটি ভালো সমাধান আসতে পারে যা ব্যক্তির জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। সুতরাং আত্মহত্যা নয়, আত্মহত্যা রক্ষা করতে হবে। জীবনকে গড়ে তুলতে হবে সুন্দরভাবে। জুয়েল নাইচ শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ