এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ শিক্ষার যথাযথ মান নিশ্চিত হোক

প্রকাশ | ০১ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রোববার প্রকাশিত হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এবারে পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন। তথ্য মতে, রোববার বেলা ১১টার পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এর আগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ফলপ্রকাশ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, এবারে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন পরীক্ষার্থী। গতবারের চেয়ে এবার ৩০ হাজার ৩০৪ জন বেশি পরীক্ষার্থী ফলের সর্বোচ্চ এই সূচক অর্জন করেছে। গতবার মোট ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। আর আলাদাভাবে শুধু নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মাদ্রাসা দাখিলে ৮২ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং কারিগরির বোর্ডের এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় পাসের হার ৭২ দশমিক ৭০ শতাংশ। চলতি বছর উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীকে আমরা অভিনন্দন জানাই। প্রসঙ্গত বলতে চাই, এটা অস্বীকার করা যাবে না- শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে এবং শিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপও নিশ্চিত হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে বছরের প্রথম দিন থেকেই শুরু হচ্ছে শিক্ষাপঞ্জি। একই দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হচ্ছে নতুন বই। বছরের শুরুতে নতুন বই প্রাপ্তি ও শিক্ষাপঞ্জি শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন পাঠের আগ্রহ বেড়েছে, তেমনি বৃত্তি-উপবৃত্তি সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যাপারে অভিভাবকদেরও আগ্রহী করেছে। কমেছে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। আমরা দেখতে পাই নানা সমস্যা ও নেতিবাচকতার মধ্যেও শিক্ষায় সাফল্য এসেছে। ফলে এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে শিক্ষার সামগ্রিক অগ্রগতি এবং যথাযথ মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর আগে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে, কেবল পরিমাণগত বা সংখ্যা বৃদ্ধিই শিক্ষার মানোন্নয়নের স্মারক নয়। শিক্ষার মানোন্নয়ন দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আজকের দিনে বৈশ্বিক বিবেচনায় উন্নত বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদের শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের দেশে উপযুক্ত শিক্ষাবিদ আছেন। তাদের সহযোগিতা নিয়ে শুধু পরিমাণ বৃদ্ধি নয়, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার উপায় খুঁজে বের করা কঠিন হবে না। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। নৈতিকতা, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে সমাজ-রাষ্ট্রের নানা নেতিবাচক কর্মকান্ডও দূরীভূত হবে- যা আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। উলেস্নখ্য যে, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এ বছর ৩ হাজার ২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে এমনটি জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে এটাও উলেস্নখ্য কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও ১০৪টি। ফলে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফলাফল এমন ঘটছে সেগুলোকে আমলে নিয়ে সংকট খতিয়ে দেখে গ্রহণযোগ্য ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এছাড়া এর আগে বিভিন্ন সময়েই, এমন বিষয় আলোচনায় এসেছে, শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের চেয়ে কোচিংয়ে বেশি মনোযোগী, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যা আমলে নিয়ে এসবের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোতে মানসম্মত শিক্ষক নিশ্চিতও করা দরকার। ভুলে গেলে চলবে না, আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। দেশের সেই ভবিষ্যৎ নাগরিকদের গড়ে তোলার দায়িত্ব যাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে তাদের মান নিশ্চিত হওয়া অপরিহার্য। আর এই লক্ষ্যে সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে শিক্ষা বিস্তৃত হওয়ার পাশাপাশি যথাযথ মানও নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।