বাস ভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি অযৌক্তিক ও যাত্রী স্বার্থের পরিপন্থি

প্রকাশ | ০১ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাস সংকটকালে আজ থেকে আবার চালু হচ্ছে গণপরিবহণ। প্রথমে বাস ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল বিআরটিএর গণপরিবহণ ভাড়া নির্ধারণ কমিটি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রতিটি বাসে ৫০ ভাগ সিট খালি থাকবে বলে ভাড়া সমন্বয় করতেই এই নতুন ভাড়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। প্রত্যেক বাসে ৫০ শতাংশ সিট খালি থাকলে বাস মালিকরা লোকসানে পড়বে। সঙ্গতকারণে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি বিবেচনায় এই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বলে মত দিয়েছিল বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। তারা এও বলেছিল, এটা সব যাত্রী ও মালিকদের মেনে নিতে হবে। পরে দেশের সচেতন মহলের সমালোচনার মুখে সরকার ভাড়া ৬০ ভাগ বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যা আজ থেকে কার্যকর হবে। আমরা মনে করি, করোনা মহামারির এই সংকটকালে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের অজুহাতে জনগণের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া গণপরিবহণের ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া বৃদ্ধি অযৌক্তিক ও যাত্রী স্বার্থের পরিপন্থি। যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধের পদক্ষেপ না নিয়ে, জ্বালানি তেলের মূল্য না কমিয়ে, পরিবহণের চালক-শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ সম্পর্কিত কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ না দিয়ে, গণপরিবহণ চালুর মধ্যদিয়ে জনগণকে একদিকে যেমন চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। অন্যদিকে সড়কে নারকীয় পরিবেশের কোনো উন্নতি না ঘটিয়ে উল্টো গণপরিবহণের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে সরকার সড়কে নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি আরও বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করেছে। যে কোনো সংকটে বা অজুহাতে দেশে গণপরিবহণের ভাড়া বাড়ালে তা স্বাভাবিক সময়েও কমানোর কোনো নজির নেই। সরকার ১ লাফে ৬০ শতাংশ ভাড়া বর্ধিত করলেও প্রকৃতপক্ষে বাস মালিকরা নানা ছল-চাতুরি করে যাত্রীদের কাছে থেকে আরো বেশি ভাড়া আদায় করে থাকে। তাদের এই ধারণা একেবারে অমূলক নয়। এর মধ্যে বন্ধ থাকা বাস, লঞ্চ, ট্রেন চালুর নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধিনিষেধ নিশ্চিত করে গণপরিবহণ, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারবে। তবে সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, লঞ্চ, ট্রেন বিমানের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। অথচ বাসের ভাড়া ১ লাফে ৬০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। এটা একদিকে যেমন নজিরবিহীন অন্যদিকে যাত্রীস্বার্থ মারাত্মকভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ যারা তারা কীভাবে বাসে যাতায়াতের সময় দেড়গুনের বেশি ভাড়া গুনবে। এমনিতেই দুই মাসের বেশি সময় দেশ লকডাউনে থাকার কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ পড়েছে চরম দুর্দশায়। এখন তাদের জরুরি যাতায়াতের সময় অস্বাভাবিক ভাড়া গুনতে হবে। এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়, যে শ্রমিক বা রিকশাচালক গ্রামের বাড়িতে রয়েছে এবং ঢাকায় আসতে তার ভাড়া লাগত ৫০০ টাকা এখন তাকে ৮০০ টাকা দিতে হবে। এই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য তার রয়েছে কিনা। যদি না থাকে তা হলে সে কীভাবে কাজের জন্য ঢাকায় আসবে। অন্যদিকে বাস মালিক চালক ও কন্ডাক্টরদের যে মানসিকতা তাতে তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীসেবা দেবে এটা কতখানি বিশ্বাসযোগ্য? আমরা বলতে চাই, অনতিবিলম্বে গণপরিবহণের বর্ধিত ভাড়া আরো কমাতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে যাত্রীস্বার্থ।