রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে

করোনায় দেশে ফিরেছেন ৮ লাখ প্রবাসী

প্রকাশ | ০৩ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাস মহামারিতে সংকটে পড়েছে গোটা বিশ্ব। তাই এর প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৮ লাখ প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। এ সংখ্যাটা সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে অর্থনীতির সবচেয়ে সুবিধাজনক খাত রেমিট্যান্সের সূচকটিও নিম্নমুখী হওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রবৃদ্ধি কমে যাবে বলে মনে করছে সরকার। করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে এবং রেমিট্যান্সনির্ভর জনগোষ্ঠীর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ফলে দেশের অর্থনীতিও আগের অবস্থায় থাকবে না। এ নিয়ে দেশের অর্থনীতিবিদরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এটা আমাদের দেশের জন্য নেতিবাচক ও বিপজ্জনক বার্তা। বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে, তার ওপর একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করেছে সরকার। সরকারের এ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অর্থ, বাণিজ্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্মিলিতভাবে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে নেতৃত্ব দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে করোনা মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই বিপুল পরিমাণ প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিদেশে ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ফলে প্রত্যাগত প্রবাসী বাংলাদেশি এবং তাদের পরিবারের উপার্জন অনেকাংশে কমে যাবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যে। চাহিদা কমে গেলে ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে। করোনা মহামারির প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে, অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে যাবে। ফলে চলতি বছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, অর্থনীতির সবচেয়ে সুবিধাজনক খাত হলো রেমিট্যান্স। করোনা মহামারির কারণে একমাত্র ভালো সূচকটিও নিম্নমুখী হওয়ার পথে। গত জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় ৫ কোটি ডলার কমেছে এবং ফেব্রম্নয়ারিতে তা ১৯ কোটি ডলার কমে গেছে। রেমিট্যান্সের নিম্নগতির প্রবণতা মে মাসেও লক্ষ্য করা গেছে, ৩০ ভাগ কমে গেছে। জুন মাসে আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের নিজেদেরই টাকার দরকার, কারণ তাদের কাজ নেই। তারপরও কিছু টাকা পরিবারের জন্য পাঠাচ্ছে। কিন্তু রেমিট্যান্স পাঠানোর সমর্থটুকু আগামী মাসগুলোতে হয়তোবা থাকবে না। আগামীতে আমাদের কর্মী বিদেশে পাঠানোয় যেমন সমস্যা হবে, তেমন বর্তমানে যারা বিদেশে রয়েছেন তাদের ফেরত আসারও একটা চাপ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রবাসীর মূলত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক। করোনার কারণে জ্বালানি তেলের দাম অনেক কমে গেছে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে কাজের পরিধি কমে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, ইতালি, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোতে শ্রম বাজার রক্ষায় সর্বোচ্চ কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি নতুন শ্রম বাজার সন্ধানের কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। না হলে দেশের অর্থনীতির অবস্থা আরও নাজুক অবস্থায় পড়বে। রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় রিজার্ভ ধরে রাখার বিষয়টি বড় রকমের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। যদিও এখনো রিজার্ভের পরিমাণ খুব একটা কমেনি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপই প্রত্যাশিত।