এভাবে কি বাঁচতে পারব?

অর্থনীতির চেয়ে মানুষের জীবন গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ বাঁচলেই অর্থনীতি বাঁচবে। হয়তো আমরা অর্থনীতির চাকা সচল করতে গিয়ে মানুষের চাকা বন্ধ করার রাস্তায় হাঁটছি। এক সময় অর্থ থাকবে মানুষ থাকবে না।

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২০, ০০:০০

আজহার মাহমুদ
দুশ্চিন্তা আমাদের বড় একটি রোগ। এই রোগটি আমাদের সবারই কমবেশি রয়েছে। কিন্তু আমার লেখার শিরোনামটি কখনো দুশ্চিন্তা হতে পারে না। বর্তমান জীবনের হালচাল বলে দেয় আমরা কেমন আছি। গত ১ জুন থেকে দেশের সব অফিস এবং দোকান-শপিংমল খোলা হয়েছে। রাস্তায় নেমেছে সাধারণ মানুষ। যে যার মতো করে ছুটছেন চাকরি বাঁচাতে। শুধু চাকরি বাঁচাতে বলা ভুল হবে, পেটের তাগিদে। রাস্তায় গণপরিবহণও নেমেছে। এবার আসা যাক মূল বিষয়ে। গণপরিবহণের ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গণপরিবহণেও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা হবে। এ কারণেই ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু প্রথম দিনেই গণপরিবহণে যাত্রীদের যে ঘেঁষাঘেঁষি তা ইতোমধ্যেই আপনারা গণমাধ্যমে দেখে ফেলেছেন। আমিও একজন চাকরিজীবী। অফিস করার জন্য রোজ বের হতে হয় আমাকেও। সড়কে নামলে আগে ভয় থাকতো সড়ক দুর্ঘটনার। এখন ভয় দুটো। যার মধ্যে প্রথম ভয় এখন করোনা। প্রথম দিনেই এই ভয় আরও বেড়ে গেলো। যার কারণ হচ্ছে যাত্রীরা মানছেন না নিরাপদ দূরত্ব। মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। এর মধ্যে ভাড়া হচ্ছে দ্বিগুণ। সরকার যেখানে ৬০ শতাংশ বাড়িয়েছে ড্রইভাররা সেখানে দ্বিগুণ বলবে এটাই তো আমাদের বাংলাদেশে স্বাভাবিক। আরও সহজ করে দিলে চট্টগ্রামের এ কে খান থেকে জিইসি ভাড়া হচ্ছে ১০ টাকা। এখন সেই ভাড়া ২০ টাকা। এই কঠিন সময়ে সাধারণ মানুষের এই কষ্ট কে দেখবে? নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বাড়তি। বাজারে গেলে শাক-সবজির দাম বাড়তি। বাড়তি মাছ-মাংস থেকে শুরু করে চাল-ডাল সবকিছু। গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়তি। এভাবে সবকিছু যখন বাড়তি দিতে হচ্ছে তখন করোনার আগে মানুষ গলায় দড়ি দিয়ে নয়তো অনাহারে মরে যাবে। এর মধ্যে বাসাভাড়া বাড়ানোর কথাও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানে কি বাড়তি বেতন দিচ্ছে বলে শুনছেন? না। উল্টো বেতনের ৪০ শতাংশ কেটে রাখার সংবাদ শুনি। তাহলে মানুষ বাঁচবে কী করে? বাঁচা-মরার এই লড়াইটা একটু সহজ হতো যদি সব বাড়তি দিয়েও ভয় দূর হতো। ভাড়াও না হয় ডাবল দিলাম। কিন্তু যাত্রী কেন সমান সমান থাকবে? সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পাশাপাশি যাত্রী বসা যাবে না। কিন্তু গণপরিবহণের চিত্র সে কথা বলছে না। করোনার আগেও যেমন, এখনো তেমন। তাহলে ডাবল ভাড়া দিয়ে কি আমরা মৃতু্যর দিকে এগুচ্ছি? জানি না এসব প্রশ্নের উত্তর আমায় কে দেবে। একদিকে দ্বিগুণ ভাড়া অন্যদিক দ্বিগুণ যাত্রী! কী চমৎকার আমাদের দেশের ব্যবস্থা। ড্রাইভারকে যাত্রী কম নিতে বলা হলে সে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলে। সাধারণ মানুষ কী বলবে? তার তো নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে হবেই। শুধু তা-ই নয়, যাত্রীর তুলনায় গাড়ি কম। কিছু কিছু টেম্পু এবং বাসে নিয়ম মেনে যাত্রী নিতে চাইলেও সেটা পারছে না। কারণ যাত্রীও নিয়ম না মেনে গাদাগাদি করে উঠে পড়ছে গাড়িতে। কে শুনবে কার কথা। এভাবে কি বাঁচতে পারব? দিন দিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গে মৃতু্যর পালস্নাও ভারী হচ্ছে। সুস্থ হচ্ছে না তা নয়। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেলে সুস্থতার হার কমে যাবে এবং মৃতু্যর হার বেড়ে যাবে। এটা আমাদের মাথায় রাখা জরুরি। বর্তমানে ৫০ হাজারের বেশি আক্রান্ত আমাদের দেশে। এভাবে আর কিছুদিন অতিক্রম করলে অতি শিগগিরই আমরা এক লাখের কোটায় পৌঁছে যাব। আমিও পোপ ফ্রান্সিসের মতো বলতে চাই, অর্থনীতির চেয়ে মানুষের জীবন গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ বাঁচলেই অর্থনীতি বাঁচবে। হয়তো আমরা অর্থনীতির চাকা সচল করতে গিয়ে মানুষের চাকা বন্ধ করার রাস্তায় হাঁটছি। এক সময় অর্থ থাকবে মানুষ থাকবে না। তবুও অনিত্য এই সংসারে আমাদের এগুতে হবে। প্রতিটি মানুষেরই কিছু না কিছু দুঃখ-কষ্ট থাকে। সেসব কষ্টের সঙ্গে করোনার অদৃশ্য ভয়কেও সঙ্গে করে আমাদের চলতে হবে। হুম, চলতেই হবে। কারণ পায়ের তলার মাটি এখন আর পায়ের তলায় নেই। প্রতি মুহূর্তেই মাটি সরে যাচ্ছে পায়ের তলা থেকে। তাই পা বাড়াতেই হবে। ক্ষুধার সঙ্গে যুদ্ধ করেও পারা যাবে না। সন্তানের অনাহারী মুখ দেখে কষ্ট লুকিয়ে রাখার যুদ্ধেও হেরে যেতে হবে আমাদের। এর চাইতে জীবনকে হাতে নিয়ে না হয় আরও একবার ছুটে যাই। হয় জীবন নিয়ে ফিরব, নয়তো কিছু জীবনকে সঙ্গে নিয়ে চলে যাব। হুম, এছাড়া তো কোনো উপায় নেই। এখন উপায় একটাই। সেটা হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা। পরিশেষে বলতে চাই, নিজের জীবনকে নিজে বাঁচাই। অন্তত নিজের পরিবারের জন্য হলেও। কারণ আমার সঙ্গে সঙ্গে আমার পরিবারও আক্রান্ত হতে পারে আমার মাধ্যমে। হুম, চলতে আমাদের হবেই। অফিসে আমাদের যেতেই হবে। তবে সাবধানতা, সচেতনতা আর জীবনের মায়া যেন থাকে। কে কী করছে সেদিকে খেয়াল করে আর কী হবে? এখন সময় নিজের কথা ভাবা। তাই নিজের সেফটি নিশ্চিত করাই এখন প্রধান কাজ। আশপাশের সবাইকে এখন করোনা মনে করে চলতে হবে। প্রত্যেকেই এখন ভাইরাস, এই চিন্তা মাথায় রেখে যতটা সম্ভব সাবধানে চলফেরা করতে হবে। তবেই নতুন দিগন্তে প্রিয়জনদের বুকে জড়িয়ে নিতে পারবেন। আজহার মাহমুদ: প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক