প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে

স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সারা বিশ্বেই। বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিভিন্ন দেশে লকডাউন করা হলেও ধীরে ধীরে তা শিথিল করা হচ্ছে। দেশেও করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ। প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এমন অবস্থায় জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে এবং গণপরিবহণ চলছে। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, বারবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হলেও তা মানা হচ্ছে না- এমন বিষয় সামনে আসছে। এছাড়া কোভিড-১৯ বা নতুন করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমা তো দূরের কথা, দিন দিন বাড়ছে দেশে। যদিও হটস্পট বা রেড জোনে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক এই পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং রেড জোনগুলোর দিকে বাড়তি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। তথ্য মতে, বর্তমানে মহাখালী, যাত্রাবাড়ী ও মিরপুরের পরিস্থিতি ভয়াবহ রকমের অবনতি হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা থেকে দেখা গেছে, রাজধানীতে করোনায় আক্রান্ত শীর্ষ তিন এলাকা মহাখালী, মিরপুর ও যাত্রাবাড়ী। অথচ কয়েকদিন আগেও শীর্ষে ছিল রাজারবাগ আর কাকরাইল। ৪০৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় শীর্ষে রয়েছে মহাখালী। অন্যদিকে জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বাজে অবস্থা বিরাজ করছে চট্টগ্রামে। এর পরেই আছে নারায়ণগঞ্জ। আমরা বলতে চাই, যখন দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্তর সংখ্যা অর্ধলক্ষ ছাড়িয়ে গেছে এবং মৃতু্য হয়েছে সাতশর বেশি মানুষের, ফলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। একই সঙ্গে রেড জোনগুলো অর্থাৎ যেসব এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি সেগুলোকে প্রয়োজনে পুনরায় লকডাউন করা বা সংক্রমণ রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, যখন লকডাউন শিথিল করা হয়েছে এবং গণপরিবহণও চলছে তখন সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে। আরেকটি বিষয় অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে, করোনাভাইরাসের কারণে টানা দুই মাস বন্ধ থাকার পর গত ৩১ মে থেকে সারা দেশে নৌপথে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ পরিচালনার নির্দেশনা থাকলেও তা পুরোপুরি পালন করতে দেখা যায়নি বলেই জানা যাচ্ছে। এছাড়া মাস্কের সঠিক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি অর্ধেকের বেশি যাত্রীকে। ফলে একে অন্যের কাছ থেকে সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে যাত্রীরা- আর এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা কতটা ভয়ানক হবে সহজেই অনুমেয়। জানা গেছে, লঞ্চের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রীরা শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও ব্যতিক্রম দেখা গেছে ডেকের তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীদের। তারা শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই যাতায়াত করছেন। আর এর ফলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও লঞ্চ মালিকদের শারীরিক দূরত্ব মানাতে হিমশিমও খেতে হয়েছে। যদিও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ কার্যক্রমে অবহেলা করায় বিআইডবিস্নউটিএ'র চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করাসহ অতিরিক্ত যাত্রী বহনের অপরাধে সুন্দরবন-৮ লঞ্চকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবু আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যে কোনো মূল্যে সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সেটি নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সারা বিশ্বে ৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ মারা গেছে করোনা আক্রান্ত হয়ে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একই সঙ্গে দেশেও বাড়ছে ক্রমাগত আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ফলে পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আর এমন পরিস্থিতিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারলে অবস্থা আরও ভয়ানক হয়ে উঠবে এমন আশঙ্কাও অমূলক নয়। সঙ্গত কারণেই, রেড জোনগুলোর সার্বিক অবস্থা খতিয়ে দেখে বাড়তি সতর্কতার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। একই সঙ্গে মানুষ যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক এমনটিই কাম্য।