শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে

৮৫ জন জনপ্রতিনিধি সাময়িক বরখাস্ত

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নগদ অর্থ সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে  আরও ১১ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে চারজন ইউপি চেয়ারম্যান ও ছয়জন ইউপি সদস্য এবং একজন পৌর কাউন্সিলর। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে মোট ৮৫ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করল মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে ২৮ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ৫১ জন ইউপি সদস্য, একজন জেলা পরিষদ সদস্য, চারজন পৌর কাউন্সিলর এবং একজন উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান রয়েছেন। জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করার মধ্য দিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট হলো- ত্রাণের সুষ্ঠু বণ্টন হয়নি। ত্রাণের চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে হাজার হাজার বস্তা চাল এবং শত শত বোতল ভোজ্যতেল উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা আগেও বলেছি ত্রাণের সুষ্ঠু বণ্টন হওয়া জরুরি। এটা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। মনে রাখতে হবে, দুর্যোগকালে কর্মহীন গরিব মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা একটি গণতান্ত্রিক সরকারের অবশ্য কর্তব্য। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে এ পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় দেড় কোটি পরিবারের সম্ভবত সোয়া ছয় কোটি মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে সরকার। করোনাভাইরাসের মতো দুর্যোগে সারা দেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে ত্রাণ সহায়তা সরকার অব্যাহত রেখেছে। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ। ৬৪ জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ১ জুন পর্যন্ত সারা দেশে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় এক লাখ ৯২ হাজার টন। এতে উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৪১ লাখ ১৮ হাজার ৪৮৮ এবং উপকারভোগী লোকসংখ্যা ৬ কোটি ২৩ লাখ ১৪ হাজার ৪০৯ জন। এছাড়া নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয় ৮৬ কোটি ৪৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা এবং বিতরণ করা হয় প্রায় ৭৫ কোটি ৭১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এতে উপকারভোগীর পরিবারের সংখ্যা ৮৪ লাখ ৭ হাজার ১০৭ এবং উপকারভোগী লোকসংখ্যা ৩ কোটি ৭৬ লাখ ১৫ হাজার ৭৯ জন। এটা সত্য, টানা ৬৬ দিন দেশ লকডাউনে থাকার কারণে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছিল। দৈনিক রোজগার করতে না পেরে থমকে গিয়েছিল তাদের জীবনযাত্রা। এমন পরিস্থিতিতে সরকার তাদের পাশে দাঁড়ায়। তবে দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের তালিকা প্রণয়নে দলীয়করণের অভিযোগ তোলা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। এসব মানুষের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করতে সরকার সারাদেশে যেসব চাল বরাদ্দ করেছে ইতিমধ্যে এসব চাল বিতরণের জন্য তৈরি করা তালিকা নিয়ে দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে। ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ গরিবের ত্রাণ মেরে খাওয়া বড় অপরাধ। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাণঘাতী থাবায় আতঙ্কিত মানুষ। দেশে প্রতিদিন বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আর এ সংকটের সময়ে ত্রাণের সুষ্ঠু এবং সমন্বিত বণ্টন প্রয়োজন। সরকার কর্তৃক হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ যারা আত্মসাৎ করছেন তাদের কেবল বরখাস্ত নয়, কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কারণ গরিবের ত্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার তাদের নেই। এর ফলে একদিকে যেমন সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে অন্যদিকে দেশের হতদরিদ্ররা বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগই কেবল পারে এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে। .