বর্ণবাদ ও সহিংসতা বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আমেরিকার মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক আফ্রিকান-আমেরিকানকে ২৫ মে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে নির্যাতন করেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক চাওভিন। আর এতে সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় ফ্লয়েডের মৃতু্য হয়। এক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের ভিডিও ফুটেজে চাওভিন ফেঁসে যান। যে ভিডিওতে দেখা যায়, গলায় হাঁটু চেপে ধরায় ফ্লয়েড নিশ্বাস না নিতে পেরে কাতরাচ্ছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিনেসোটা থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ আর তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো আমেরিকায়। কৃষ্ণাঙ্গদের পাশাপাশি অনেক শ্বেতাঙ্গও এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। আর এ ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আবারও বর্ণবাদ এবং সহিংসতার বিষয়টি আলোচনায় আসছে। উলেস্নখ্য, আমেরিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এই উত্তাপ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ইউরোপের দেশগুলো ও আফ্রিকার উলেস্নখযোগ্য শহরগুলোতেও বস্ন্যাক লাইফস ম্যাটার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্ণবাদের ইতিহাস নতুন নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই বর্ণবাদকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে বারবার। ১৯৬৪ সালে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ পাওয়ার পর বিশ্বব্যাপী বর্ণবাদবিরোধী লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। যদিও তার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শুরু ওই ঘটনারও অনেক আগে। আফ্রিকা আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়েই বর্ণবাদের বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। ঘটেছে সহিংস ঘটনা। লক্ষণীয়, প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, বর্তমানে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আমেরিকা জ্বলছে। পুলিশের গাড়ির সাইরেনে আমেরিকার বড় বড় নগরীর রাত কাটছে এখন। ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ আর লুটপাটের বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে আমেরিকার নাগরিক আন্দোলনের নতুন মাত্রা পাচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের উচ্চারণে এখন শুধু পুলিশের হাতে নিহত জর্জ ফ্লয়েডের বিচার নয়, জনতার দাবিও বিরাট হয়ে উঠেছে। স্থানে স্থানে সামাজিক সাম্যের দাবিতে রাস্তায় অবস্থান করছেন বিক্ষোভকারীরা। কারফিউ ভেঙে চলছে ক্ষুব্ধ মানুষের উত্তাল আন্দোলন। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে অশ্বেতাঙ্গদের অধিকার সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত করার বেলায় সংবিধান আর মাঠপর্যায়ের বৈপরীত্য আছে বলেও জানা যায় এবং সেটা যুগ যুগ ধরে? জর্জ ফ্লয়েডের মৃতু্যর মধ্যদিয়ে এখন বর্ণবাদের বিষয়টি তুমুলভাবে আলোচনায় আসছে সারা বিশ্বেই। ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া অস্থিরতা নিয়ে বর্ণবাদ ও সহিংসতার নিন্দাও জানিয়েছেন। জাতীয় ঐক্য ও শান্তিরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এ কথা বলা দরকার, বিশ্ব এগিয়ে চলেছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সভ্যতার অগ্রযাত্রার এই কালে যেভাবে বিভিন্ন সময়েই বর্ণবাদ, বৈষম্য নিয়ে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। মনে রাখা দরকার বর্ণবাদ, বৈষম্য এবং সহিংস পরিস্থিতি কখনও পৃথিবীর জন্য শুভ হতে পারে না। ফলে আমেরিকায় এখন যা ঘটছে তা যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি পৃথিবী থেকে বর্ণবাদ, সব ধরনের বৈষম্য দূর করা, সহিংসতা রোধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। কেননা যা পৃথিবীর মানুষের বসবাসকে অসুন্দর করে তোলে, তা কখনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকান্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নৈরাজ্য, লুটপাট ও সহিংস ঘটনা ঘটেছে। নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরের ডিপার্টমেন্ট স্টোরে নজিরবিহীন লুটতরাজ করা হয়েছে। ডেকে ডেকে লুটের মালপত্র বিতরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া বর্ণবাদকে 'আমেরিকার মহামারি' হিসেবে আখ্যায়িত করে অভিনেতা জর্জ ক্লুনি, গত ৪০০ বছর ধরে এর টিকা উদ্ভাবনে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বর্ণবাদ, বৈষম্য কিংবা সহিংসতার দরুন মানুষের প্রাণ ঝরে যাবে, শান্তি বিনষ্ট হবে এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই বর্ণবাদ, মানুষে মানুষে বৈষম্য পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে উদ্যোগ নিতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। বর্ণবাদের ইতিহাস অনেক পুরনো। সভ্যতার এই কালে বর্ণবাদ, বৈষম্য ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি সংকটাপূর্ণ হতে থাকবে এটা কাম্য হতে পারে না।