শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অভিবাদন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাহাদাৎ রানা

করোনা মোকাবিলায় শুরু থেকে সরকারের সঙ্গে ফ্রন্টলাইনে আছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। করোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা থাকবেন। তবে প্রার্থনা সেনাবাহিনীর সদস্যরা যেন করোনায় আক্রান্ত না হন। করোনা যুদ্ধে সেনাবাহিনীর অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জানাই অভিবাদন।
নতুনধারা
  ০৬ জুন ২০২০, ০০:০০

বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণের শুরু থেকেই তা রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসন, পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী,র্ যাব ও অন্যান্য সংস্থা যৌথভাবে কাজ করছে। সবাই যার যার অবস্থান থেকে কাজ করছেন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য। এ ক্ষেত্রে তারা সবাই হয়ে উঠেছেন এক একজন যোদ্ধা। কথায় বলে বিপদে বন্ধুর পরিচয়। কেউ যদি বিপদে পড়েন সে ক্ষেত্রে সবার আগে যিনি তার পাশে এসে দাঁড়ান তিনিই হলেন বন্ধু। আর সেই বন্ধু হয়ে ওঠেন প্রকৃত বন্ধু, আপনজন। তবে এখন বন্ধু হয়েও অনেক সময় বন্ধুর বিপদে এগিয়ে আসে না অনেকে। ঝামেলা এড়াতে, এড়িয়ে যান নানা অজুহাতে। তাই আগের মতো বিপদে আর বন্ধুকে পাওয়া যায় না। বিশেষ করে বর্তমানে করোনাকালে অনেক আপনজনও সরে যাচ্ছেন কোনো সাহায্য না করে। কিন্তু কিছু পেশার মানুষ করোনা পরিস্থিতিতে নিবেদিত প্রাণ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিদিন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সাংবাদিকরা সামনে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। সবাই যেন একেক জন করোনা যোদ্ধা। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা অন্যতম। 'সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা সর্বত্র আমরা দেশের তরে', এই স্স্নোগানে উদ্দীপ্ত হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এবার করোনা মোকাবিলায়ও সারাদেশে প্রতিদিন এর প্রমাণ রাখছেন তারা।

গত পয়লা এপ্রিল সচিবালয়ের এক সভা শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন- 'করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুদ্ধিমান নেতৃত্বে সেনাবাহিনী যথাসম্ভব কাজ করছে। সেনাবাহিনী এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বলে জানান তিনি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩১ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ২৪ মার্চ থেকে দিনরাত কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে জেলায় জেলায় শারীরিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মানুষজন যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলেন সে বিষয়ে সবাইকে সচেতনও করছেন শুরু থেকে। পাশাপাশি করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। করোনা রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সাধারণ মানুষের এসব সেবা দিতে গিয়ে অনেকে করোনায় আক্রান্তও হয়েছেন। তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা শুধু সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেননি। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডও পরিচালনা করছেন তারা। প্রতিটি জেলায় দুস্থ ও অসহায় মানুষকে নিজেদের রেশনের টাকায় সহযোগিতা করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাঁধে করে খাদ্য সহায়তা নিয়ে মানুষের বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসছেন। এটা তারা করছেন নিজেদের রেশনের থেকে অর্থ বাঁচিয়ে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এমন কর্মকান্ড সত্যিই সবার জন্য উদাহরণ।

বাস্তবতা হলো- খুব দ্রম্নত করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বিশ্ববাসী। এর বাইরে নয় বাংলাদেশও। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় পর সরকারি ও বেসরকারি অফিস খুলে দিয়েছে। তবে সব কিছু খুলে দিলেও করোনা শুরুর সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সবার মধ্যেই কাজ করছে দুশ্চিন্তা-উৎকণ্ঠা। বাস্তবতা হলো- এমন দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠাকে সঙ্গী করে মানুষও তাদের নিত্যপ্রয়োজনে কাজে বের হচ্ছেন। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এই চলমান পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছেন অনেকে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। বাংলাদেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে। আর কৃষকরাও তাদের পণ্য উৎপাদনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার কৃষিপণ্য উৎপাদনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেই লক্ষ্যে কৃষিপণ্য উৎপাদনও বাড়ছে। তবে কৃষিপণ্য উৎপাদন বাড়লেও দেশের বাজারে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পান না এমন অভিযোগ সব সময়ের। বিশেষ করে করোনার সময়ে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না এমন অভিযোগও উঠেছে। তবে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর কল্যাণে সেই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। কেননা, কৃষকরা বাঁচলে, বাঁচবে দেশের অর্থনীতি। এর প্রেক্ষিতে কৃষি অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

এমন উদ্যোগের বড় প্রমাণ 'এক মিনিটের বাজার'। এবার আসা যাক 'এক মিনিটের বাজার' প্রসঙ্গে। যা বাংলাদেশের জন্য একেবারে নতুন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্যোগে নেওয়া হয় এমন প্রচেষ্টা। যেখানে করোনাকালিন দুর্যোগে সমাজের প্রতিবন্ধী, অসহায়, দুস্থ ও নিম্নআয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এ বাজারের উদ্দেশ্য। নামে বাজার বলা হলেও এখানে অসহায় মানুষ সস্পূর্ণ বিনামূল্যে তাদের পছন্দের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যেতে পারছেন। এ বাজার থেকে মাত্র এক মিনিটে চাল, আলুসহ পছন্দনীয় সব সবজি মিলছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। মাত্র ৬০ মিনিটে ১ হাজারের বেশি মানুষকে চাল-আলুসহ নানা নিত্যপ্রয়োজনীয়সামগ্রী দেয়া হচ্ছে। এমন কর্মকান্ড শুধু দেশের একটি জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সারা দেশেই চলছে এমন কর্মকান্ড। সবচেয়ে বড় কথা- এ ক্ষেত্রে অসহায় মানুষ পাচ্ছেন সহযোগিতা। এখানে আরও ভালো লাগার তথ্য হলো- শুধু অসহায় মানুষ সহযোগিতা পাচ্ছেন এমন নয়, সহযোগিতা পাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরাও। কেননা, অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন কারণে প্রান্তিক কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না। তবে সেনাবাহিনীর এক মিনিটের এ বাজারের কারণে লাভবান হচ্ছেন দেশের অসংখ্য প্রান্তিক কৃষকও। কারণ প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে এসব পণ্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ন্যায্যমূল্যে কেনা হচ্ছে। ফলে করোনাকালিন কঠিন সময়ে কৃষকরা পাচ্ছেন তাদের কষ্টে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য। এতে কৃষকদের মুখেও ফুটে উঠছে হাসি। এক মিনিটের এ বাজারের কারণে একদিকে যেমন অসহায় মানুষ সহযোগিতা পাচ্ছেন তেমনি সরাসরি সহযোগিতা পাচ্ছেন কৃষকরাও। এটা সবার জন্যই ভালো খবর। বিশেষ করে কৃষকদের জন্য। কেননা, কৃষকরা যদি তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান তবে তারা আরও বেশি করে পণ্য উৎপাদনের বিষয়ে আগ্রহী হবেন। এটা দেশের কৃষি অর্থনীতির জন্য অবশ্যই ইতিবাচক খবর। বিশেষ করে করোনাকালিন সময়ের জন্য। সেনাবাহিনীর কল্যাণে রয়েছে আরও অনেক ইতিবাচক খবর। তাদের পক্ষ থেকে গ্রামে গ্রামে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আরও বেশি করে কৃষিপণ্য উৎপাদন করতে সবাইকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে মানসম্মত বিভিন্ন ধরনের সবজিবীজ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এতে যারা এসব বীজ রোপণ করে কৃষিপণ্য উৎপাদন করবেন শুধু তারাই উপকৃত হবেন না। সবাই এর সুফল ভোগ করবেন। এখানে আরও ভালো লাগার খবর হলো- করোনাকালিন সময়ের শুরুতে কৃষকরা কিছুটা মনোবল হারালেও সেনাবাহিনীর এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন কৃষকরা। এখন এমন ধারা অব্যাহত থাকলে কৃষি অর্থনীতির জন্য তা হবে ইতিবাচক খবর।

আমাদের দেশে সেনাবাহিনীর রয়েছে অনেক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের যে কোনো প্রয়োজনে সব সময় নিজেদের জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। এবার করোনা যুদ্ধে আবারও তা প্রমাণ করলেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। নিজেদের জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন তারা। বাস্তবতা হলো একদিন করোনা যুদ্ধে জয়ী হবে মানুষ। সে যুদ্ধে বিজয়ী বীর হিসেবে অনেকের নাম লেখা থাকবে। বিশেষভাবে লেখা থাকবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নামও। সেনাবাহিনীর এমন প্রশংসনীয় কাজ আগামীতে সবার জন্য ভালো উদাহরণ তৈরি করেছে। যে উদাহরণ সামনে রেখে সবাইকে সেবা দেওয়ার মানসিকতাও তৈরি হবে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

করোনা মোকাবিলায় শুরু থেকে সরকারের সঙ্গে ফ্রন্টলাইনে আছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। করোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা থাকবেন। তবে প্রার্থনা সেনাবাহিনীর সদস্যরা যেন করোনায় আক্রান্ত না হন। করোনা যুদ্ধে সেনাবাহিনীর অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জানাই অভিবাদন।

সাহাদাৎ রানা: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<101370 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1