পাঠক মত

বেপরোয়া মানবপাচারকারী চক্রের লাগাম টেনে ধরা দরকার

প্রকাশ | ০৭ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ভালো চাকরি আর নিরাপদ জীবনযাপনের আশায় বিদেশ যাত্রা। দালালের হাতে লাখ লাখ টাকা দিয়ে এমন স্বপ্নচারী মানুষ যখন ঘর থেকে বের হন- তখন থেকেই বিপদ শুরু হয়। তাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় দালালচক্র। প্রকান্তরে তখন থেকেই তারা জিম্মি হয়ে পড়েন। কাঙ্ক্ষিত দেশ পর্যন্ত যেতে দেশে দেশে দালালচক্রের কাছে বিক্রি হন। বিক্রি হতে হতে কারও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে ধাপে ধাপে বিরাট অংকের টাকা দিয়ে বিদেশ যেতে পারেন। আবার যাদের ভাগ্য সহায় হয় না- তারা বিভিন্ন দেশের জেলে স্থান পান। ইউরোপ পাচারকারীদের প্রথম 'ট্রানজিট পয়েন্ট' লিবিয়া। লিবিয়ায় দালালরা তাদের একটি ঘরে বন্দি রাখে। এরপর শুরু হয় লোমহর্ষক ভয়ঙ্কর সব ঘটনা। ইউরোপগামীদের ওপর দালালচক্র চালায় নির্মম নির্যাতন। দফায় দফায় টাকা নেওয়ার পর সাগর পথে পাঠানো হয় ইতালির উদ্দেশে। সেখানেও দালালচক্রের আরেকটি অংশের হাতে আটক থাকতে হয়। যারা তীরে ভিড়তে পারেন তাদের কাছ থেকে আবারও টাকা আদায়ের নির্যাতন চলে। কয়েক দফা টাকা দেওয়ার পর ভাগ্য সহায় হলে অবৈধভাবে কাজের সুযোগ পান অনেকে। আবার কেউ কেউ জেলহাজতে স্থান পান। অনেকে ইতালির উপকূলে পৌঁছাতে পারেন আবার অনেকে সাগরে ডুবে মারা যান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য মতে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত ১৭ হাজার অভিবাসী সাগর পথে ইউরোপে ঢুকেছেন। মানব পাচারের সবচেয়ে বড় রুট এখন ভূমধ্যসাগর। এই ঝুঁকিপূর্ণ পথে বাংলাদেশের লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। ভাগ্য বদলাতে অনেকে দেশি-বিদেশি মানব পাচারকারীদের প্রলোভনের শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি লিবিয়ায় ২৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশি মানব পাচারকারীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর সরকারের টনক নড়ে। ঠিক একইভাবে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া পাঠানোর নাম করে দেশি- বিদেশি চক্র আরেক বিপজ্জনক খেলায় মেতে উঠেছে। এরা আন্তর্জাতিকভাবে বেশ সক্রিয়। গত বছরের মাঝামাঝিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একের পর এক মানব পাচারকারী নিহত হওয়ার পর এ চক্রের অপতৎপরতা কিছুটা কমলেও নতুন করে তারা ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তবে এবার তারা গতানুগতিক মানব পাচারের ধরন পাল্টে অসহায় রোহিঙ্গা সুন্দরী তরুণীদের টার্গেট করে তাদের সমুদ্র পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর চেষ্টা করছে। এ চক্রের সঙ্গে মিয়ানমার থাইল্যান্ডসহ চার দেশের অসংখ্য দালাল সরাসরি জড়িত রয়েছে। যারা নানাভাবে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকা থেকে তরুণীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সের পুরুষ জোগাড় করছে। এরা স্বল্প খরচে সমুদ্র পথে বিদেশে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তারা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব ব্যক্তির সঙ্গে দেশ-বিদেশের আলাদা আলাদা সিন্ডিকেটের যোগসূত্র রয়েছে। এরা দিনকে দিন চরম বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে এবং এসব মানব পাচারকারীদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এরা বলগাহীন ঘোড়ার মতো বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা খুবই জরুরি, অন্যথায় এরা মানুষের জীবন নিয়ে বিপজ্জনক খেলা খেলতেই থাকবে। মো. জিলস্নুর রহমান ব্যাংকার ও লেখক, সতিশ সরকার রোড, গেন্ডারিয়া, ঢাকা