মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক-মত

আরও একবার নিশ্বাস নিতে চাই

নতুনধারা
  ১৪ জুন ২০২০, ০০:০০

পৃথিবী সুন্দর এটা আদিকাল থেকে। পৃথিবী তার স্বরূপ পেয়েছিল সে অনেকদিন হয়ে গেছে। তখন হাসি ছিল, দুঃখ ছিল, যুদ্ধ ছিল, পাখির কলরব ছিল, কোলাহল ছিল। এখন শুধু পাখির কলরব আর কোলাহলই আছে। থমকে যাওয়া পৃথিবীটা যেন অসহায় পথিকের মতো ক্লান্ত ভরা মন নিয়ে সৃষ্টিকর্তার দিকে তাকিয়ে আছে। এখন আর আগের মতো মানুষের আনাগোনা নেই। নেই জলবায়ু দূষণের মতো কান্ডকারখানা। মানুষের আনাগোনা কমে গেছে মৃতু্যভয়ে, ঘরে থাকাটা নিজের নিরাপদের উত্তম মাধ্যম। সমুদ্র তার গর্জন ঠিকই দিচ্ছে, কিন্তু উপভোগ করার মানব আজ অনেক অসহায়। আর সবুজ বৃক্ষ! সে তো সবুজের লোকারণ্য নতুন যৌবনের দীপ্ত নীলিমায় মন রাঙিয়ে দিচ্ছে। ঝিমিয়েপড়া ঘাসগুলো মাথা উঁচু করে নিজের অবস্থান জানান দেয়। রাস্তার দুই পাশে কৃষ্ণচূড়ার গাছগুলো যেন রঙিন করে দিচ্ছে পৃথিবীর রং। রংধনু সাত রং আগের থেকে অনেক বেশি উজ্জ্বলতা ধরন বর্ণনা করছে। পরিবেশ গবেষকরা বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। আশ্চর্য বিষয় এই যে বর্তমানে জলবায়ুর অবস্থা ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দূষণের পরিমাণ কমে গেছে অনেক হারে। যেটা পৃথিবীর জন্য অনেক বড় সুখবর সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাগর পাড়ে ডলফিন, লাল কাঁকড় নিজেদের মতো খেলা করছে। পাখি নীড়ে ফিরতে শুরু করেছে। বড় অদ্ভুত লাগে যুদ্ধে লিপ্ত থাকা অশান্ত পৃথিবীটা এখন কত শান্ত। সময়ের সব থেকে ব্যস্ত মানুষ আজ তার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে ঘরবন্দি হয়ে। এখন মানুষ পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছে না। মেলবন্ধনের জায়গাটা এখন হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে একে অন্যের থেকে অনেক দূরে। মানবকুল চলে যাচ্ছে সম্পর্কহীন ভালোবাসার জীবনে, প্রতিটা ক্ষণে মানুষ দিন কাটাচ্ছে বিষণ্নময়। আর এই মরণোত্তর মানুষের দুই হাতের কামাই, জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ প্রকৃতির সৌন্দর্য বন উজাড় করছে। বনের গভীরে থাকা ভাইরাসবহনকারী বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে আসার কারণে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বন্যপ্রাণীর সংস্পর্শে মানুষ যত আসছে ততই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা বলেছেন জলে এবং স্থলে যত বিপর্যয় নেমে আসবে সব কিছু মানবকুল তার কর্ম দ্বারা অর্জন করেছে। বর্তমান পৃথিবীতে এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। যেটা মানুষকে খুব সহজে মৃতু্যর খেলায় আলিঙ্গন করে নিচ্ছে। প্রতিটা ক্ষণে প্রতিটা সময় যেন মৃতু্য তাড়া করে বেড়াচ্ছে। মানুষ দিন দিন আটকা পড়ে যাচ্ছে এই অচেনা ভাইরাসের মধ্যে। করোনাভাইরাস মানুষের সম্পর্ককে অনেক দূরত্ব সৃষ্টি করে দিয়েছে। লকডাউন অবস্থায় পড়ে আছে ঘরবন্দি জেলখানায় মাসের পর মাস, সময়ের পর সময়। থমকে যাওয়া কর্মজীবনে মানুষ বাঁচার চেষ্টা করছে নিজের মতো করে। মানুষের আবেগ ভালোবাসা এখন বিচ্ছিন্ন একটা অংশ। করোনাভাইরাস ইতিমধ্যে মৃতু্যর সংখ্যা কয়েক লাখ, আক্রান্ত হয়েছে প্রায় অর্ধ কোটির বেশি মানুষ। থমকে যাওয়া পৃথিবীতে চারদিকে যেন এক হাহাকার নেমেছে। বিশেষ করে যারা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার ও নিম্নবিত্ত পরিবার তাদের জন্য এই জীবনটা বড় দুরূহ হয়ে উঠেছে। কষ্টসাধ্য জীবনটাকে মানুষকে বিষণ্নময় এক দিন গুণতে হচ্ছে। বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধ লাখ ছাড়িয়েছে, মৃতু্য হাজার খানেক। এমন অবস্থায় সরকারের সরবরাহকৃত ত্রাণের বস্তা হাতিয়ে নিয়েছে অনেক নেতা। যেখানে খাবারের জন্য হাহাকার চলছে সেখানে চোরের মাতামাতি বেশ লক্ষণীয়। আর এরা নাকি জনসেবার নাম লিখিয়েছে সঙ্গে নিয়েছে শপথ। জনসাধারণ কত আসা করে তাদের নেতা বানিয়েছে আর তারা হয়েছে চোর, বিষয়টা বড় মজার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর হিসাব অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতিতে সেবা খাতের অবদান প্রায় ৫০ শতাংশ, শিল্প খাত ৩৫ শতাংশ এবং কৃষি ১৪ শতাংশের মতো। বর্তমান প্রতিটা দেশে চলছে লকডাউন, থমকে যাওয়া পৃথিবীর অর্থনৈতিক অবস্থা বড় নাজুক। ব্যবসা-বাণিজ্য, খেলাধুলা সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, যার ফলে অর্থনৈতিক চাকা আর ঘুরছে না। যার ফলে চাকরি হারাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ, কর্মহীন সময় কাটাচ্ছে দিনের পর দিন। ভাবনার বিষয় এখন রপ্তানি খাত। বাংলাদেশের গার্মেন্টশিল্পের জন্য হুমকি তৈরি করেছে করোনাভাইরাস। পোশাক রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশ যেসব দেশে পোশাক রপ্তানি করে সব থেকে বেশি সেসব দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার লাভ করেছে অনেক হারে। ফলে রেমিট্যান্স নিয়ে অনেক বেশি ভাবতে হচ্ছে। কারণ পশ্চিমা অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের ভাগ্য অনেকটা জড়িয়ে আছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গার্মেন্ট ও রেমিট্যান্স এই দুটি খাত মিলে জিডিপির পরিমাণ ১৮ শতাংশ। করোনার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রেমিট্যান্স ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। কারণ পশ্চিমা দেশগুলোতে কর্মরত শ্রমিকরা অনেক অংশ চাকরি হারাবে এবং মজুরিও কমে যাবে। হয়তো আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে অনেক; কিন্তু তার থেকে মূল্যবান মানুষের জীবন। বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে অর্থনৈতিক চাকাকে সচল করার জন্য। তাই সব পরিবেশ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা খুঁজতে হবে আমাদের। এই আটকে থাকা সময়ে আরও একবার মন ভরে নিশ্বাস নিতে ইচ্ছা করে। এই নিস্তব্ধ অন্ধকার শুধু কাটিয়ে দিতে পারে আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তবে পারব মন ভরে নিশ্বাস নিতে এই অপরূপ লীলাভূমিতে। সবুজ ঘেরা পৃথিবীটা রং ছড়িয়েছে বেশ। আবারও ফিরে আসুক মানুষের কর্মচঞ্চলতা, আনন্দে ভরে উঠুক আমাদের জীবনের প্রতিটি সময়।

মো. আশরাফুজ্জামান শাওন

\হশিক্ষার্থী

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<102355 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1