প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন

রোগীরা চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যতই দিন যাচ্ছে দেশে করোনার সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এ ক্ষেত্রে উদ্বেগের বিষয় হলো, করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় অন্যান্য রোগে আক্রান্তরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এমন বিষয় বারবার আলোচনায় আসছে। একদিকে করোনা আতঙ্ক, অন্যদিকে যদি নানা ধরনের রোগে আক্রান্তরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন, তবে বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই পরিস্থিতি কতটা ভীতিপ্রদ। এ ব্যাপারে বারবার বলা সত্ত্বেও সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন রয়েছে। ফলে মৃতের হার বাড়ছে। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় এমন খবর প্রকাশিত যে, গত দুমাস ধরে দেশে একটি তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের সরবরাহ না থাকায় ক্যান্সার, হার্ট, কিডনি এবং লিভারের সমস্যায় ভোগা রোগীদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। ফলে কার্যত বন্ধ রয়েছে তাদের চিকিৎসা। যেখানে ২০১৪ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৫ লাখেরও বেশি ক্যান্সার রোগী রয়েছেন। সেখানে যদি ক্যান্সারসহ জটিল রোগের চিকিৎসা থেকে রোগীরা বঞ্চিত হন তবে বিষয়টি কতটা উদ্বেগের বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ছাড়া সম্প্রতি এমন খবরও সামনে এসেছে যে, অসুস্থ বাবাকে নিয়ে হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন এক ছেলে। কিন্তু করোনা ভেবে কোনো হাসপাতালেই ভর্তি করানো যায়নি তাকে। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা না পেয়ে মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়েন ওই বাবা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা এমনটিও সামনে এসেছে। হাতে-পায়ে ধরেও মিলছে না চিকিৎসা। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক এই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। করোনারভাইরাসের কারণে বাত, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মানসিক রোগ, ক্যান্সার, কিডনি, কলেরা, বসন্ত, যক্ষ্ণা, টাইফয়েড, হাম, পোলিও, ডায়ারিয়া, ইনফ্লুুয়েঞ্জাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা পাচ্ছেন না বলেও এর আগে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ফলে বলার অপেক্ষা রাখে না, সবমিলিয়ে একটি আতঙ্কজনক অবস্থার চিত্রই পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, যত দ্রম্নত সম্ভব সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিশ্চিত করা। লক্ষণীয়, করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর কিডনি-হৃদরোগসহ অন্যান্য অসুখে গুরুতর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে- এমন চিত্র এর আগে খবরে উঠে এসেছিল। এ ছাড়া এমন আশঙ্কার বিষয়ও তখন সামনে এসেছিল, করোনার চেয়ে সাধারণ রোগে আক্রান্ত অনেক বেশি মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে পারে। সঙ্গত কারণেই এটা আমলে নেওয়া দরকার, করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন। একদিকে করোনা আতঙ্ক, আবার যদি সাধারণ চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হয় তবে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। আমরা মনে করি, করোনা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সব ধরনের কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে একই সঙ্গে যে কোনো মূল্যে সব ধরনের রোগের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসাব্যবস্থা যেন ভেঙে না পড়ে সেটি আমলে নিয়ে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দেশের মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব ও সচেতনতার অপরিহার্য। এটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে, একই সঙ্গে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে হবে এবং সব ধরনের রোগের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখা দরকার, এর আগে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর ফিরে যাওয়ার অভিযোগসহ চিকিৎসাসেবার নানা নাজুক অবস্থার কথাও সামনে এসেছিল। সঙ্গত কারণেই রোগীরা যেন চিকিৎসাবঞ্চিত না হন সেটি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য। সরকারের কার্যকর উদ্যোগই কেবল পারে দেশের জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে।