মোহাম্মদ নাসিমের প্রয়াণ রাজনৈতিক অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম আর নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, তার এই মৃতু্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের এক অপূরণীয় ক্ষতি। জানা যায়, টানা দুই সপ্তাহ হাসপাতালে জীবন-মৃতু্যর সঙ্গে লড়ে শনিবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে চলে গেলেন তিনি। মৃতু্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। মোহাম্মদ নাসিমের মৃতু্যতে দেশে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, রক্তচাপজনিত সমস্যা নিয়ে ১ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। ওই দিনই তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর ৪ জুন তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও ৫ জুন ভোরে তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে দ্রম্নত অস্ত্রোপচার করে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। এরপর দুই দফায় ৭২ ঘণ্টা করে পর্যবেক্ষণে রাখে মেডিকেল বোর্ড। এর মধ্যেই পরপর তিনবার নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি তার শরীরে। কয়েক দিন স্থিতিশীল থাকলেও গত বৃহস্পতিবার রক্তচাপ অস্বাভাবিক ওঠানামা করতে থাকে নাসিমের। এরপর শুক্রবার পরিস্থিতি আরও জটিল হতে থাকে। হৃদযন্ত্রে জটিলতা দেখা দেয়। বলা দরকার, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মোহাম্মদ নাসিম অত্যন্ত পরিচিত নাম এবং আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। পরিবার থেকে রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি হয়। তিনি ছাত্র ও যুব রাজনীতির গন্ডি পেরিয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মন্ত্রীও ছিলেন একাধিকবার। সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন মোহাম্মদ নাসিম। তার মৃতু্যতে স্বাভাবিকভাবেই দেশ হারাল এক লড়াকু রাজনৈতিক যোদ্ধাকে। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা মোহাম্মদ নাসিমের। শৈশব থেকেই পার করেছেন নানা চড়াই-উতরাই। ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা শহিদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হলেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হন। পরে যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেন তিনি। মূলত ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন মোহাম্মদ নাসিম। ওই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে দলের প্রচার সম্পাদক, ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে তাকে কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য হিসেবে রাখা হয়। এরপর ২০১২ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনীতির বিভিন্ন পর্যায়ে মোহাম্মদ নাসিমকে অনেকবার কারাবন্দি হতে হয়েছে। তাকে কারাভ্যন্তরে সহ্য করতে হয়েছে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন। ছাত্রজীবন থেকেই দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রথম সারিতেই থাকতেন তিনি। মোহাম্মদ নাসিম ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এরপর দেশের সব অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রসৈনিক। সর্বোপরি, মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার কারণে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ছিলেন। রাজপথে সব সময়ই সক্রিয় থাকা মোহাম্মদ নাসিমের রাজনৈতিক জীবনে অর্জন ও সাফল্য এসেছে অক্লান্ত পরিশ্রম ও কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। রাজনীতির মাঠেও ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতা ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন (কাজীপুর) থেকে ১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মোহাম্মদ নাসিমের যে ভূমিকা তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা ও দূরদর্শী এই রাজনৈতিক নেতার বিদেহী আত্মার প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা।