পাঠক মত

মেয়রদ্বয়ের কাছে প্রত্যাশা

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সম্প্রতি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে দুজন নয়া নগরপিতা পেয়েছে রাজধানীবাসী। সম্মানিত মেয়রদ্বয় শপথ গ্রহণ করে দায়িত্বও বুঝে নিয়েছেন। দুজনেই বাসযোগ্য ঢাকার প্রতিশ্রম্নতি ব্যক্ত করেছেন। বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর রাজধানী ঢাকা। গত প্রায় দুই দশক থেকে নানা সংকট ও সমস্যায় জর্জরিত রাজধানী ঢাকা শহর। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা যে করা হয়নি তা নয়; তবে সমন্বিত, দূরদর্শী ও পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। চার বছর পরপর দুই সিটি করপোরেশনে নতুন মেয়রদ্বয় নির্বাচিত হয় আর নগরবাসী আশায় বুক বাঁধে। নগরবাসী ভাবে এবার বুঝি যানজট সমস্যার সমাধান হবে, এবার বুঝি সব ধরনের দূষণ থেকে মুক্তি মিলবে! ঢাকা শুধু বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহরই নয়- বসবাস অযোগ্য বিশ্বের প্রথম সারির শহরগুলোর একটি! নগরের প্রধান তিনটি সমস্যা হলো- বিভিন্ন দূষণ, যানজট ও জলাবদ্ধতা। শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণের কবলে পড়ে মানুষের আয়ু কমে যাচ্ছে, জনস্বাস্থ্যের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যানজটে পড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, যার অর্থনৈতিক মূল্য অনেক। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ঢাকাবাসীর যেন অমোঘ নিয়তি! এ সমস্যা সমাধানে নগরের ড্রেনেজ লাইনের প্রবাহ ও খাল উদ্ধারে জোর দেওয়া জরুরি। আশা করি নব্য মেয়রদ্বয় জলাবদ্ধতা সমাধানে গুরুত্ব দেবেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা 'ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট' (ইআইইউ) প্রধান পাঁচটি বিষয়ের (স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা, ভৌত অবকাঠামো এবং স্থিতিশীলতা বা শৃঙ্খলা) ওপর ভিত্তি করে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বসবাসযোগ্যতার তালিকা করে। এই তালিকায় প্রায় প্রত্যেক বছর ঢাকা প্রথম বা দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় স্থানেই অবস্থান করে। নব্য দুই মেয়রদ্বয়ের কাছে নগরবাসীর আশা-ভরসা অনেক। নগরবাসী এটাও জানে হঠাৎ করে জাদুকরের ইশারায় সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে না! তবে নগরের প্রধান সমস্যাগুলোর সমাধান যেন দ্রম্নত হয় এটাই কাম্য। নগরের অন্যান্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে- মশার যন্ত্রণা, চাঁদাবাজি, তারের জঞ্জাল, চুরি-ছিনতাই, মাদক, অপরিকল্পিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, পানিদূষণ, সড়ক দুর্ঘটনা, দুর্বল ট্রাফিকব্যবস্থা ইত্যাদি। মশা নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্কের শেষ নেই। করোনা মহামারির মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। গত বছর রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। গত বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় ১ লাখেরও বেশি মানুষ। মৃতু্য হয়েছিল প্রায় ২০০ জনের। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঋতুবৈচিত্র্য ও বৃষ্টিপাতের ধরন বদলে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বিভিন্ন রোগের যেমন সম্পর্ক আছে, ফলে একই রোগ ভিন্ন ভিন্ন ধরন ও লক্ষণ নিয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে প্রভাব পড়ছে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার ওপর। আগে যেসব জায়গায় মশা টিকতে পারত না, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সেসব জায়গায় মশার বংশবিস্তার হচ্ছে! আবার বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় এডিস মশার বংশবিস্তার বেশি হচ্ছে। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় পানি জমে থাকার কারণে এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এডিস মশার ভয়াবহতা বিবেচনায় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে হবে। মশা নির্মূলে প্রত্যেক বছর ব্যাপক বাজেট হয়, আলোচনা-সমালোচনা-পর্যালোচনা হয়, কিন্তু পরের বছর আবার সেই চিরচেনা আতঙ্ক! ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার কামড়ে যখন নগরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ যখন বৃদ্ধি পায় ঠিক তখনই কেবল কর্তৃপক্ষের চেতনায় সাড়া পড়ে! মূলত ডেঙ্গুর মৌসুম ধরা হয় এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়কে। যদিও গত বছর এ সময়ের আগে-পরেও ডেঙ্গু জ্বরে অনেকে আক্রান্ত হয়েছিল। তথ্য মতে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ১ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৩০৭ জন। দুজন বাদে সবাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে রাজধানীতে প্রতিদিনই কেউ না কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশসহ সবার মনোযোগ এখন বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের দিকে। তবুও এ সময় ডেঙ্গু মোকাবিলায় বিশেষ প্রস্তুতি দরকার। এ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু মোকাবিলায় রাজধানী ঢাকাসহ জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু কর্নার স্থাপন করতে হবে। তা না হলে ডেঙ্গু 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' হিসেবে এ বছরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে! ডেঙ্গুতে কারও মৃতু্য না হোক- এটাই কাম্য। ঢাকা শহরকে জল-সবুজে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার কথা বেশ কয়েক বছর ধরে শোনা গেলেও তা এখনো শুরুর পর্যায়ে রয়েছে! সবুজে সবুজে সবুজায়ন করতে হলে ছাদবাগানের ওপর জোর দিতে হবে। নগরে সব ধরনের জলাশয় টিকিয়ে রাখতে হবে। খালগুলো উদ্ধার করে তা বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার চিন্তা করতে হবে। গণপরিবহণ সংকটে নগরবাসীকে প্রায়ই ভুগতে হয়। নারীবান্ধব গণপরিবহণব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয় ও চলাচলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্তারোপ করে তা সীমিত করা যেতে পারে। পার্ক-উদ্যানগুলোর সবুজায়ন ঠিক রাখার পাশাপাশি শহরের সব ধরনের ফাঁকা জায়গায় বৃক্ষ রোপণে নগরবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নগরের টেকসই বর্জ্যব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে। নগরের ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে হবে। নগরে যত্রতত্র বিল্ডিং না করে পরিকল্পিত আবাসনের ওপর জোর দিতে হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) পুরান ঢাকার ওপর আলাদা গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। নতুন মেয়রদ্বয়ের নতুন চিন্তা-ভাবনায় ঢাকাবাসীর পুরনো সমস্যার সমাধান হবে, ঢাকা হয়ে উঠবে পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব নগর- এটাই প্রত্যাশা। সাধন সরকার নারিন্দা, সূত্রাপুর, ঢাকা