গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জরুরি

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যতই দিন যাচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়, বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা বেড়ে যাচ্ছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, পিরোজপুরে বাগান থেকে মাল্টা ছেঁড়ায় তিন শিশুকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনায় শনিবার রাতে স্বরূপকাঠী থানায় মামলা হওয়ায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার সকালে উপজেলার চামি গ্রামের তিন শিশু স্থানীয় আব্দুল জব্বার মিয়ার (৬০) বাগান থেকে কয়েকটি মাল্টা ছিঁড়ে নেয়। এ ঘটনায় জব্বারের ছেলে হাসান শিশুদের চড়থাপ্পড় দিয়ে আটকে রাখেন। পরে জব্বার শিশুদের একটি গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে জুতাপেটা করেন। পরে নির্যাতনের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ শিশুদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় নির্যাতিত এক শিশুর বাবা মামলা করেন। এখানেই শেষ নয়। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁও জেলায়। মোবাইল চুরির অপরাধে দুই কিশোরকে হাত-পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। ওই ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নির্যাতক ব্যক্তি এক কিশোরের মাকে শরীরী প্রস্তাব দেয়। কিশোরের মা রাজি না হওয়ায় তার ছেলে আর ভাতিজার বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির অপরাধ এনে বর্বরোচিত কায়দায় নির্যাতন করা হয়। এমন ঘটনা সমাজে প্রায়ই ঘটছে। মানুষ কতটা বর্বর হলে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়, গ্রামীণ সমাজ এখনো মধ্যযুগে রয়েছে। আমরা মনে করি, সমাজ পরিবর্তন মানে সামাজিক কাঠামো ও সমাজের মানুষের কার্যাবলি ও আচরণের পরিবর্তন। তাদের মানুষিকতার পরিবর্তন। বিশৃঙ্খল অপরাধপ্রবণ অবক্ষয়গ্রস্ত সমাজে বসবাস করে উন্নত রুচি ও সংস্কৃতির অধিকারী হওয়া যায় না। এমন সমাজে হত্যা সন্ত্রাস যৌন হয়রানি ধর্ষণ বর্বরতা ও নানা ধরনের নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ করা সহজ কাজ নয়। আমরা দেশের সচেতনতা চাই, পরিকল্পিত ও বিন্যস্ত সমাজ। নীতিবোধ ও চারিত্রিক মূল্যবোধ সমাজ গঠনের প্রধান শক্তি- যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কোনোভাবেই আমাদের সমাজ যেন আলোর দিকে অগ্রসর হতে পারছে না। কূপমন্ডূকতা যেমন আমাদের সমাজকে দিন দিন গ্রাস করছে, তেমনি নারী ও শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রেও যেন সমাজ দিন দিন আরও নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে। নিষ্ঠুরতার বলি হচ্ছে নারী, শিশু-কিশোরসহ দেশের দরিদ্র অসহায় মানুষ। কোনোভাবেই তা রোধ করা যাচ্ছে না। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও দেশে এমন বর্বর ঘটনা ঘটতে থাকবে- এটা সমর্থনযোগ্য নয়। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে- এ কথা প্রায় সর্বত্র উচ্চারিত হচ্ছিল করোনাকালের আগে। করোনা যেন সবকিছু থামিয়ে দিয়েছে। কিন্তু করোনাকালেও কিছুতেই যে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা যাচ্ছে না, তার কী হবে। সমাজে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ নারী ও শিশু-কিশোররা এবং হতদরিদ্ররা। সরকারের পরিকল্পতি উদ্যোগ এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই কেবল পারে এই চিত্রের বদল ঘটাতে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের বড় ভূমিকা রয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের ভয়াবহ চিত্র ভয়ঙ্করভাবে উদ্বেগজনক। সামাজিক সুস্থতা আনয়নের পাশাপাশি নতুন সমাজ নির্মাণের জন্য এ ধরনের অবক্ষয়কে প্রতিরোধ করতে হবে যে কোনো মূল্যে। এ জন্য ব্যাপকভাবে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। আমরা অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ এই ধরনের ঘটনার দ্রম্নত অবসান চাই। মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ ও সামাজিক সুস্থতার জন্যও বিষয়টি জরুরি।