মানবতার জয় হোক

আমরা যদিওবা বৈরী সময় অতিক্রম করছি, তাতেও আত্মতৃপ্তি আছে। সরকারপ্রধান যেভাবে দেশ পরিচালনা করছেন এতে আমরা কেউ অভুক্ত নই। ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছি।

প্রকাশ | ১৮ জুন ২০২০, ০০:০০

শতদল বড়ুয়া
প্রকৃতির রূপ বদলানো শেষ হচ্ছে না। আদৌ শেষ হবে কিনা তাও বলা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে। করোনাভাইরাস যে হারে বিস্তার করছে তা থেকে কে কাকে বাঁচাবে? আধুনিক এই ডিজিটাল যুগে মানুষ বেঁচে থাকার জন্যে নানা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশ-বিদেশের গবেষক, বিজ্ঞানী, চিন্তাবিদসহ উচ্চ মার্গের ব্যক্তিরা নব নব আবিষ্কারের পাশাপাশি বর্তমান সময়ের এই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সময়ে সময়ে আশার বাণী শোনা গেলেও নিরাশেরও কিছু কিছু সংবাদ পাচ্ছে বিশ্ববাসী। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রতিষেধক উদ্ভাবন চলমান। এ বছরের শেষ দিকে কোনো না কোনো সুফল পাবে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞমহলেরও একই অভিমত। এখন কথা হলো- মাঝখানে যেই সময় বয়ে যাচ্ছে, এই সময়টুকুতে আমাদের অবস্থা কী হবে আমরা কেউ জানি না। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ উন্নত দেশের কর্ণধাররা স্ব স্ব রাষ্ট্রের জনগণের কল্যাণের পাশাপাশি অন্যান্য রাষ্ট্রের সাধারণ জনগণের কথাও ভাবছেন। এখন কথা হলো এই ভাবার গতিবেগ কত? সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারতের ওপর দিয়ে আম্পান নামক যেই ঘূর্ণিঝড়টি তান্ডব চালাল তা সবাই অবগত। এর আলোকে বলতে চাই গতিবেগের কথা। আম্পানের শুরুর গতিবেগ এবং শেষের গতিবেগ বিষয় চিন্তা করলে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশ-ভারতের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হলো। মারা গেল অনেকে। কত যন্ত্রণা সইব আমরা! বাইরের রাষ্ট্রের গতিবেগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হলেও আমাদেরও কিছু নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। যার উৎকৃষ্ট প্রমাণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে সব সমস্যা মোকাবিলায় এগিয়ে যাচ্ছেন। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সময়মতো সিদ্ধান্ত তিনি আমাদের দিয়েছেন বিধায় করোনাভাইরাসের গতিবেগ আগামীতে কমে আসবে বলে আশা করছি। বাংলাদেশে প্রথমে ঢাকা, পরে নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাস তান্ডব চালাল। সেখানে আক্রান্তের হার দ্রম্নত বাড়িয়ে দিয়ে গতিবেগ অন্য দিকে বাড়িয়ে দিল। চট্টগ্রামে তান্ডব চালানো অব্যাহত রাখলেও চট্টগ্রামবাসীরা এটিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। বিজ্ঞমহলের বক্তব্য- গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। শেষের মারটা চট্টগ্রামবাসীই মারবে। কারণ চট্টগ্রাম হলো বারো আউলিয়ার পুণ্যভূমি। এই পুণ্যভূমিতে অরাজকতা বেশি দিন চলতে পারে না। করোনার বিনাশের জন্য আমাদের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। তাহলো সচেতনতা। আমরা সচেতন না হলে কারোই কিছু করার থাকবে না। আমাদের শক্তি এবং জোর হলো- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তো অহোরাত্র আমাদের কল্যাণে ব্যস্ত রয়েছেন। প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশের জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সরকারি সাধারণ ছুটি আর বাড়ছে না। তবে রেড জোনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে সবকিছু শীতল করে দেওয়া হবে। গণপরিবহণ, রেল, বিমান, লঞ্চ সবকিছু প্রথমে সীমিত আকারে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অফিস-ব্যাংকও চলবে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক। গার্মেন্ট শিল্পও সচল রয়েছে। আন্তর্জাতিক রুটে বিমানও চলছে। সরকারপ্রধান যা যা সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন তা সবগুলো জনকল্যাণমুখী। এখন কথা হলো-দেশে যে করোনাভাইরাসের তান্ডব চলছে তা কীভাবে প্রতিহত করা হবে। সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ডেঙ্গু নামক আরেক মরণব্যাধি। বিগত কয়েকমাস ধরে সরকারিভাবে আমাদের এই দিকনির্দেশনা দিচ্ছে, এখনো নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। এর থেকে আমরা কী শিখলাম। এখন সাধারণ জনগণের সামনে কঠিন সময় আগত। অরাজকতার গতিবেগ থামেনি। সামনে বাড়ার সমূহসম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমাদের আরও ধৈর্য ধারণ করে বিপদ মোকাবলায় সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে হলে সাধারণ জনগণের ভূমিকা একটা অপরিহার্য বিষয়। প্রতিনিয়ত সরকারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্যবিধির প্রচার অব্যাহত রয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যথেষ্ট পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রচারিত নিয়মাবলি পালনে ব্যর্থ হলে সর্বনাশ হবে আমাদের। বর্তমান সময়ে বেশি বেকায়দায় আছে বেসরকারি চাকরিজীবীরা। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে অনেকে চাকরি চু্যত হয়েছে। অনেকে চাকরি হারানোর ভয়ে আছে। সরকার এসব কারণ বিবেচনায় এনে সরকারি সাধারণ ছুটি বাতিলসহ নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারিভাবে ত্রাণসামগ্রীসহ আর্থিক সুবিধা দিয়ে আসছেন এই দেশের নাগরিককে। আমরা বাঙালি অনেক ভাগ্যবান। নিজ হাতে ভাত খাচ্ছি অনেক সুখে-আহ্লাদে। দুঃখ এবং কষ্ট দুইজন সহোদর। এরা সক্রিয় আছে বলে আমরা অনেকটা হুশে আছি। ভাত খাওয়াও কষ্টের ব্যাপার হতে পারে। এর পেছনে অনেক কার্যকারণ রয়েছে। ভাতের থালা তো সামনে এমনি আসেনি। এতে কোনো জাদু-মন্ত্রেরও কীর্তি কাহিনী নেই। আছে কী পরিশ্রম ও সচেতনতা বোধ। আমরা অকৃতজ্ঞ বাঙালি। নিজের বিবেকবোধকে গলাটিপে মেরে অন্যের সমালোচনায় মেতে উঠি। সমালোচনা করব কেন? কারও কর্মকান্ড ভালো না লাগলে, পছন্দ না হলে এতে তো কারও কোনো আপত্তি নেই। পারলে জনকল্যাণমুখী কিছু করে দেখান, মানুষের অন্তরে চিরকাল বেঁচে থাকার পথ পরিষ্কার করুন। সমালোচনা বা বদনামি করা তো পাপের ভাগীদার হওয়া। কথায় আছে না- পাপ বাপকেও ছাড়ে না। বর্তমান ক্ষণটা বিবেকবোধের পরিচায়ক। মানবতার কাজে এগিয়ে আসুন। অসহায়দের পাশে দাঁড়ান। দেখবেন আপনাকে সাহস ও শক্তি যোগানোর জন্যে একটা পক্ষ সক্রিয় হয়ে উঠবে। সহায়ক হিসেবে তো আছেন আমাদের সুখ-দুঃখের সাথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের মানুষ কষ্টে আছে, অশান্তিতে আছে একথা ঠিক। এর জন্যে কেউ কাউকে দায়ী না করে স্বস্ব অবস্থান থেকে দেশের উন্নয়নে নিজেকে নিবেদিত করা গেলে ক্ষণিকের জন্যে হলেও প্রশান্তি পাওয়া যাবে। আমরা যদিওবা বৈরী সময় অতিক্রম করছি, তাতেও আত্মতৃপ্তি আছে। সরকারপ্রধান যেভাবে দেশ পরিচালনা করছেন এতে আমরা কেউ অভুক্ত নই। ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। আমার জানা মতে আমাদের এই মমতাময়ী বাংলাদেশে কেউ না খেয়ে মারা যাই নি। কর্মফল ভোগে অনেকের সলিল সমাধি ঘটছে। মানবতার জয় হোক। এগিয়ে চলুক বাংলাদেশ। শতদল বড়ুয়া : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক