করোনাকালেও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি

একটি শক্তিশালী চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে আক্রমণ করে যাচ্ছে দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে। অতীতেও দেখেছি, জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছে। একাত্তরের চেতনার বিরোধিতা করতে গিয়ে পুরো রাষ্ট্রকে পাকিস্তান বানানোর পাঁয়তারা করা হয়েছে।

প্রকাশ | ১৯ জুন ২০২০, ০০:০০

তাপস হালদার
করোনাভাইরাস মহামারি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ, অঞ্চল নেই যেখানে ভাইরাসটি আঘাত করেনি। ধনী, গরিব, দুর্বল, সবল, পারমাণবিক অস্ত্রধারী, যাদের ক্ষমতার দম্ভে পৃথিবী কেঁপে উঠত সেই সব পরাক্রমশালী রাষ্ট্রনায়কদেরও একটি ক্ষুদ্র অদৃশ্য ভাইরাসের কাছে অসহায়ত্ব সবাই দেখেছে। ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, আমেরিকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে করোনা এখন দক্ষিণ এশিয়ায় আক্রমণ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেছেন, এটি একটি যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমাদের অবশ্যই বিজয়ী হতে হবে। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৩০ লাখ শহিদের জীবনের বিনিময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আজ জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনাযুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা, গণমাধ্যম একযোগে সম্মুখ যোদ্ধা হয়ে এই যুদ্ধে লড়াই করছে। ৭১ সালেও যেমন এক শ্রেণির দালালরা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল আজও জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত করতে মিথ্যা অপপ্রচার করে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন নির্দেশ দিয়েছেন তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জীবনকে তুচ্ছ করে জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সবাই জানি, করোনাভাইরাস একটি স্পর্শকাতর ছোঁয়াছে রোগ। মানুষের সংস্পর্শে এলে রোগটি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। যুদ্ধের ময়দানে যেমন একজন সৈনিককে মৃতু্যঝুঁকি নিয়েই যুদ্ধ করতে হয়, ঠিক এ সময়ে যারা সম্মুখ যুদ্ধ করছে তাদের করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। করোনাযুদ্ধে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, জননেতা মোহাম্মদ নাসিম, গোপালগঞ্জের গণমানুষের নেতা, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুলস্নাহ, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য হাজি মকবুল, সিলেটের সাবেক মেয়র বদরুদ্দিন কামরানসহ অসংখ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী শহিদ হয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পার্বত্য চট্টগ্রামে মন্ত্রী বীর বাহাদুরসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের হাজার হাজার নেতাকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যম কর্মীরা কাজ করতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন। লাখ লাখ মুজিব আদর্শের সৈনিকরা মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। সেই দিনের পাকিপ্রেতাত্মারা আজও শহিদের মৃতু্য নিয়ে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমে বিকৃত উলস্নাস ও নৃত্য করছে। সময় বদল হলেও এদের চরিত্র বদল হয়নি। পাকিস্তানিপ্রেমী চক্রটি আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে যার নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি জামায়াত চক্রটি, তাদের পোষা কিছু স্বঘোষিত সুশীল। তাদের একমাত্র টার্গেট শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সরকারকে বিপদে ফেলা। শেখ হাসিনার সাফল্য এরা সহ্য করতে পারে না, তাদের গায়ে জ্বালা ধরে। দেশে কোনো ধরনের ইসু্য তৈরি হলেই তারা ষড়যন্ত্র শুরু করে যে কোনো উপায়ে সরকারকে বিব্রত করতে হবে, আর শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসতে হবে। সব কিছুতেই সুযোগ খুঁজে, ক্ষমতার গন্ধ পেতে চায়। এত উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা থাকার পরও ইউরোপ-আমেরিকায় যেভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপের কারণে শততম দিনে মৃতু্যর সংখ্যা এক হাজার পার করেছে (যদিও একটি মৃতু্যও আমাদের কাম্য নয়)। এখানেই তাদের গাত্রগাহ। লাখ লাখ লোক মারা যাবে, তারা ঘরে বসে আলুপোড়া খাবে। সে আশার গুড়েবালি হওয়ায় এতদিন চুপচাপ থাকলেও এখন ষড়যন্ত্রকারীরা নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্থবির। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একদিকে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ অন্যদিকে সব অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকান্ড স্বাভাবিক রেখে জীবনযাত্রা সচল রেখেছে। নির্দিষ্ট সময়ে পেশ করা হয়েছে জাতীয় বাজেট। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, করোনার পরে এশিয়ায় অর্থনৈতিকভাবে ভালো অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি থাকবে। অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৫.২ শতাংশ নির্ধারণ করেছেন- যা বর্তমানে ৮.২ শতাংশ আছে। এক শ্রেণির পন্ডিতরা অবাস্তব বলে শোরগোল শুরু করে দিল। অথচ ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট কিছুদিন আগেই বলেছে, চারটি সাধারণ দিক যেমন, জিডিপির শতাংশ হিসেবে সরকারি ঋণ, বৈদেশিক ঋণ, ঋণের সুদ ও রিজার্ভ বিবেচনা করে ৬৬টি উদীয়মান অর্থনীতির দেশের তালিকায় নবম স্থানে থাকবে বাংলাদেশে। যেখানে ভারত (১৮), পাকিস্তান (৪১), শ্রীলংকা (৬১)তম তালিকায় থাকবে। মানব সভ্যতার ইতিহাসের এই মহাদুর্যোগেও স্বাধীনতার পরাজিত শত্রম্নরা বসে নেই। অতীতের মতো মিথ্যা গুজব, অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে সরকারের কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেশ-বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এক সময় সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে এই জিগির তুলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করা হয়েছিল। ৫ মে হেফাজতের সমাবেশে হাজার হাজার লোক মারা গিয়েছিল অপপ্রচার করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছিল। আজও সে প্রচেষ্টা থেমে নেই। এই অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে কোনো তথ্য লুকানো যায় না জেনেও মূর্খরা আক্রান্ত ও মৃতু্যর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে যাচ্ছে। সরকারকে অস্থিতিশীল করতে পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে হামলা করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার দুর্যোগকালীন সময়ে ত্রাণ ও বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি লোককে খাদ্য সহযোগিতা করেছে। শুরুতে কিছুটা সমন্বয়হীনতা হলেও এখন সুন্দরভাবে ত্রাণকার্যক্রম চলছে। যারা ত্রাণ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তবে অবাক করা বিষয় হলো, এদের অধিকাংশই বিএনপি জোট থেকে দলে অনুপ্রবেশকারী। মির্জা ফখরুল, রিজভী সাহেবরা মাঝে মাঝে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে ভিডিও বার্তায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করে। মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন, তারা দুই কোটি লোককে ত্রাণ দিয়েছে। দুই কোটি লোককে ত্রাণ দিয়েছে অথচ এটি কেউ টের পেল না। কোনো মিডিয়া সংবাদ জানল না। একটা প্রবাদ আছে, এমন মিথ্যা বলিস না রে, ঘোড়ায় শুনলে হাসবে। মির্জা ফখরুল সাহেব খালেদা-তারেকের মিথ্যা বুলি পাঠ করতে গিয়ে অনেক আগেই জোকারে পরিণত হয়েছে। লকডাউনের ফলে যখন ধান কাটার কৃষকের সংকট, আগাম ঝড় বন্যার জন্য কৃষকের ধান কাটা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিল, তখনই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান কেটে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। তখন যারা সারাদেশে দুর্ভিক্ষের আশায় বসেছিল তখন তারা হতাশ হয়ে পড়ল। কাঁচা ধান কাটার তত্ত্ব বানিয়ে হাজির হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গরম করতে শুরু করল। মিথ্যার বেসাতি বেশিক্ষণ থাকে না। করোনার এ সময়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন লকডাউনের মাধ্যমে সামাজিক দূূরত্ব নিশ্চিতকরা, বাজার নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর্ম সূচি, ত্রাণ কার্যক্রম, মৃত ব্যক্তিদের সৎকার, সামাজিক ও সহযোগিতা কর্মকান্ডে ব্যস্তথাকায় এই সুযোগে জঙ্গি সংগঠনগুলো আবার মাথাচাড়া দিতে চেষ্টা করেছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতিমধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা জাগ্রত আছে। ইতিহাসে কাসিমবাজার কুঠি ষড়যন্ত্রের কথা আমরা সবাই জানি, সেদিন ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছিল মীরজাফর, রাজ বলস্নভ, রায় দুর্লভ, জগৎশেঠ, ইংলিশ ওয়াটসসহ অন্যরা। আজ কাসিমবাজার কুঠিখ্যাত ফিরোজা ভিলায় বসে দুর্নীতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া সরকারের কৃপায় জামিনের সুযোগ নিয়ে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবে ডাক্তার কিন্তু আমরা দেখতে পাই মান্না, ফখরুল সাহেবদের নিয়ে মিটিং করতে। ওখান থেকে বের হয়েই নতুন নতুন তত্ত্ব দিয়ে গর্জন দিচ্ছে ফখরুল সাহেবরা। মুহম্মদ ইউনূস, আসিফ নজরুল, দেবপ্রিয়, বদিউল আলম মজুমদাররা একই সুরে কথা বলছে। মনে হচ্ছে এক জায়গা থেকে শেখানো বুলি। অথচ গত সাড়ে তিন মাসে কোথাও এক ছটাক চাল নিয়ে জনগণের পাশে এদের দাঁড়াতে দেখা যায়নি। একটি শক্তিশালী চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে আক্রমণ করে যাচ্ছে দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে। অতীতেও দেখেছি, জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছে। একাত্তরের চেতনার বিরোধিতা করতে গিয়ে পুরো রাষ্ট্রকে পাকিস্তান বানানোর পাঁয়তারা করা হয়েছে। \হজননেত্রী শেখ হাসিনাকে নানাভাবে আক্রমণ করে দুর্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনাকে দুর্বল করা মানে বাংলাদেশকে দুর্বল করা, উন্নয়নকে স্তব্ধ করা, রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করে দেয়া। পরাজিত শত্রম্নদের একমাত্র টার্গেট শেখ হাসিনা, উদ্দেশ্য ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ। অর্থনীতি ধ্বংস হোক, গার্মেন্টেসের অর্ডার বাতিল হোক, দেশ গোলস্নায় যাক কোন সমস্যা নেই। যে কোনো ইসু্যতেই শেখ হাসিনার সমলোচনা করতে হবে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলতে হবে। তারা জানে গণতন্ত্রের পথে কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ষড়যন্ত্রই তাদের একমাত্র পথ। সাত মণ তেলও পুড়বে না, রাধাও নাচবে না। অতীতের মতো এবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী জনগণ তাদের সব ষড়যন্ত্র রুখে দেবে। প্রয়োজনে ষড়যন্ত্রের গ্রিনরুম কাসিমবাজার কুঠি জনতা গুঁড়িয়ে দেবে। তাপস হালদার : সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও সাবেক ছাত্রনেতা যধষফবৎঃধঢ়ধং৮০@ মসধরষ.পড়স