চিকিৎসক-নার্স সংকট যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ১৯ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে থমকে গেছে পুরো বিশ্ব। দেশেও সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে। বাড়ছে লাশের সংখ্যা। এমন অবস্থায় যদি চিকিৎসক-নার্সের সংকট সৃষ্টি হয় তবে তা কতটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য যে, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর তুলনায় চট্টগ্রামে দেখা দিয়েছে চিকিৎসক-নার্স সংকট। এ পর্যন্ত ৬ জন চিকিৎসকের মৃতু্য হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। এ ছাড়া এটাও উলেস্নখ করা দরকার, ইতিমধ্যে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নগরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে রোগীভীতি। জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ১০০ শয্যার করোনা ইউনিটে নতুন নিয়োগ পাওয়া ৩০ জন চিকিৎসক ও ১৬৬ জন নার্স চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। অথচ বিশেষ এই ওয়ার্ডে এখন রোগীর ভিড় বেশি। আমরা বলতে চাই, বর্তমান পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি চিকিৎসক নার্সের সংকট সৃষ্টি হয় তবে তা অত্যন্ত উৎকণ্ঠাজনক, যা আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। আরেকটি বিষয় উলেস্নখ করা জরুরি, খুলনায় রোগীর স্বজনদের হামলায় এক চিকিৎসকের মৃতু্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়। খুলনা বিএমএ এ ঘটনার প্রতিবাদে সংগঠনের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, এই ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করা সাপেক্ষে দ্রম্নত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, বর্তমান সময়টা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর, সারা বিশ্বই ভীতিপ্রদ অবস্থার মুখোমুখি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে। দেশে যেমন বাড়ছে এই সংক্রমণ, তেমনি স্বাস্থ্যবিধি না মানাসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের খবরও সামনে আসছে। এমন অবস্থায় চিকিৎসক-নার্স সংকট যেমন অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়, তেমনিভাবে স্বজনদের ঝামেলায় চিকিৎসকের মৃতু্য হবে এটাও কাম্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রম্নত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনাভাইরাসের ভয়ঙ্কর সংক্রমণে সবকিছুই যেন থমকে গেছে এবং মানুষের বসবাসের স্বাভাবিকতাও ব্যাহত হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে লকডাউন করা হলেও তা শিথিল করা হচ্ছে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে। করোনা রোধের উপায় খুঁজতে যেমন নানা ধরনের প্রচেষ্টা চলছে, তেমনি এর প্রভাব সংক্রান্ত নানা বিষয়ে গবেষণাও হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে জোনভিত্তিক লকডাউনের বিষয়টিও সামনে আসছে। আর যদি এখন চিকিৎসক-নার্সের সংকট সৃষ্টি হয় সেটা অত্যন্ত ভীতিকর। এ ছাড়া মনে রাখা দরকার, করোনা সংক্রমণ রোধে যেমন সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে তেমনি অন্যান্য রোগের চিকিৎসাও যেন নিশ্চিত হয় সেটিও আমলে নিতে হবে। এর আগে এমন বিষয়ও খবরে এসেছিল, বাত, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মানসিক রোগ, ক্যান্সার, কিডনি, কলেরা, বসন্ত, যক্ষ্ণা, টাইফয়েড, হাম, পোলিও, ডায়ারিয়া, ইনফুয়েঞ্জাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা পাচ্ছেন না। আর সম্প্রতি এমন বিষয়ও সামনে আসে, দেশে একটি তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের সরবরাহ না থাকায় ক্যান্সার, হার্ট, কিডনি এবং লিভারের সমস্যায় ভোগা রোগীদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। ফলে কার্যত বন্ধ রয়েছে তাদের চিকিৎসা। দেশের বিভিন্ন স্থানে হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা এমনটিও সামনে এসেছে। হাতে-পায়ে ধরেও মিলছে না চিকিৎসা। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক এই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব ও সচেতনতার অপরিহার্য। এটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে, একই সঙ্গে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে হবে এবং সব ধরনের রোগের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসক-নার্সসহ যে কোনো ধরনের সংকট দূর করে করোনা রোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।