বেকারত্ব একটি সামাজিক ব্যাধি। ইচ্ছে ও কর্মশক্তি থাকা সত্ত্বেও যথেষ্ট পরিমাণ কর্মক্ষেত্র না পাওয়া যে কোনো দেশ বা দেশের নাগরিকদের জন্য অকল্যাণকর। বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় বেকারত্বের আসল রূপ। এক প্রতিষ্ঠান থেকে আরেক প্রতিষ্ঠানে শুধু আনাগোনা চলে রাতদিন। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারদের ক্ষেত্রে সেটা বেশি পরিলক্ষিত হয়। কাজের বাজারের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতি বছরই উচ্চশিক্ষা নিয়ে ব্যস্ত নগরীর শ্রমবাজারে আসা নাগরিকদের প্রায় অর্ধেক বেকার থাকছে অথবা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছে না।
বর্তমান বাংলাদেশে বেকারত্বের এই সমস্যা জটিল ও প্রকটভাবে দৃশ্যমান যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। কর্মহীন এই বিশাল উদ্বৃত্ত জনশক্তি না পারছে দেশের অর্থনীতিতে কোনো অবদান রাখতে, না পারছে নিজের সুন্দর-সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে। বেকারত্বের অসহ্য যন্ত্রণায় তারা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। ফলে রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র দেখা দিচ্ছে বিশৃঙ্খলা। ক্রমবর্ধমান এই সমস্যা-সমাধানে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে অর্থনৈতিক অবকাঠামো যে কোনো সময় ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়বে। কিন্তু কেন এই বেকারত্ব? কি এই বেকারত্বের প্রধান কারণ? প্রধান কিছু কারণ যদি বলা হয় তাহলে প্রথমেই চোখে পড়ে, সুদক্ষ শ্রমিক তৈরির অভাব, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব, শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের অভাব, যুগোপযোগী কারিগরি জ্ঞানের অভাব, আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব এ ছাড়া কৃষি, মৎস্য, পশুপালন ও পোল্ট্রির মতো লাভজনক খাতে শিক্ষিত লোকের কাজে অনীহা। এই বেকারত্বের অন্ধকার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। অধিক জনসংখ্যাকে দেশের বোঝা নয়, সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি করতে হবে বৃত্তিমূলক, কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষার। নারীশিক্ষার সম্প্রসারণে যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করাও বেকারত্ব মুক্তির আরেকটি পথ। কোনো কাজকেই তুচ্ছ না ভেবে কায়িক পরিশ্রমের মর্যাদা দিতে হবে। পরিকল্পিত শিল্পকারখানা গড়ে তুলে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ শ্রমশক্তি গড়তে তোলার চেষ্টা করতে হবে। ভাষাগত দুর্বলতা দেশি-বিদেশি শ্রমবাজারে কর্ম প্রাপ্তিতে একটি বড় সমস্যা আর এজন্যই সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমিকদের ভাষাগত দুর্বলতা কাটিয়ে ভাষাগত দিক থেকে শক্তিশালী করতে হবে। কর্মক্ষম শ্রমিকদের বিদেশে কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেটে আউটসোর্সিং হতে পারে বেকারত্ব হ্রাসের আরেকটি উপায়। এ ছাড়া বেকারত্বের হার হ্রাস করতে দেশে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। বিনিয়োগ বাড়লে বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ, কমবে বেকারত্বের হার, আর কোলাহল কমবে ব্যস্ত নগরীর রাতদিন ধরে ঘুরে বেড়ানো উদাসীন কর্মসন্ধানীদের।
ডি এইচ রনি
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়