মহামারিতে বন্যা

যথাযথ উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ২১ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাস আতঙ্ক সারা বিশ্বেই। দেশেও বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এরই মধ্যে এ মাসের শেষদিকে অথবা জুলাইয়ের প্রথম ভাগে দেশে বন্যার শঙ্কা করা হচ্ছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তায় প্রবল বৃষ্টিতে আগামী দুই সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় নদ-নদীর পানি বাড়ার আভাস থাকায় সংলগ্ন জেলার নিম্নাঞ্চলে মধ্যমেয়াদি বন্যা হতে পারে বলে বৃহস্পতিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া জানা যাচ্ছে, ধারাবাহিক পানি বাড়ার কারণে জুনের শেষ সপ্তাহে বা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার বিভিন্ন স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম করবে। এর ফলে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না। উলেস্নখ্য, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে দেশের সর্বোচ্চ ৩০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। পাঁচ বছর আগে এই কক্সবাজারেই ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঘটেছিল। আমরা বলতে চাই, ভারী বৃষ্টির কারণে পার্বত্য এলাকা, হাওর ও উত্তরাঞ্চলের রংপুর, লালমনিরহাটে বন্যার আশঙ্কা আছে এমন বিষয় যখন সামনে আসছে, তখন এটি আমলে নিতে হবে। একই সঙ্গে লক্ষণীয়, বান্দরবানে দুদিনের অবিরাম টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এমন বিষয় সামনে আসছে। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে জেলার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়ে পড়েছে। দুদিনের ভারী বৃষ্টিতে জেলার সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়ে পড়েছে। ভারী বর্ষণে বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে, প্রবল বৃষ্টিতে কোথাও কোথাও সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। বান্দরবানে একদিকে করোনার সংক্রামক বৃদ্ধি আর অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় চলছে লকডাউন তার ওপর ভারী বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। ফলে এই পরিস্থিতি আমলে নেওয়া অপরিহার্য। আমরা বলতে চাই, শঙ্কার বিষয়টিকে সামনে রেখে এখনই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এর আগে এমন ঘটনা বারবার ঘটেছে যে, বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষের জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। মনে রাখা দরকার, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে এড়ানো না গেলেও উপযুক্ত পদেক্ষপ নিশ্চিত করার মধ্যদিয়ে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। বন্যা বানভাসি মানুষের দুর্ভোগই শুধু চরমেই ওঠে না, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী নেই এমন খবরও সামনে আসে। বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দেয়। একই সঙ্গে যোগ হয় পানিবাহিত নানা রোগ। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করে বন্যাকবলিত মানুষ। আমরা মনে করি, আগাম শঙ্কার বিষয়টিকে আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এ কথা ভুলে যাওয়া যাবে না, বন্যায় পানিবন্দি হয়ে মানুষের মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় এবং খাদ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের বিপর্যস্ত পরিস্থিতি নেমে আসে। ফলে যত দ্রম্নত সম্ভব এই ধরনের বিষয়গুলোকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ সম্পন্ন করতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বন্যার শঙ্কাকে সামনে রেখে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ প্রস্তুতি সম্পন্ন করুন। বসতবাড়ি ভেসে যাওয়া এবং পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা না পেয়ে যেন মানুষকে মানবেতর দিন যাপন করতে না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিন। করোনাকালে বন্যার মতো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত রাখা অপরিহার্য।