বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

শুদ্ধতায় সুবাসিত হোক চারপাশ

বাংলাদেশের রাজনীতির পথপ্রদর্শক আওয়ামী লীগ। দলটির অসাম্প্রদায়িক চেতনা আজও বিশ্বে অনন্য নজির হিসেবে পরিগণিত। বাংলাদেশের যা কিছু মহৎ অর্জন ও বিকাশ তার প্রায় পুরোটাই আওয়ামী লীগের হাত ধরে হয়েছে। সে কারণে আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের প্রত্যাশাও বেশি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি জনগণের যেমন আস্থা ছিল, তার চেয়েও বেশি আস্থা তৈরি হয়েছে তার কন্যা শেখ হাসিনার ওপর।
সোহেল হায়দার চৌধুরী
  ২৩ জুন ২০২০, ০০:০০

আজ বাংলাদেশের এক অনন্য দিন। বাঙালি জাতির মর্যাদার প্রশ্নে ইতিহাসের নিক্তিতে এই দিনটি অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। জাতির ইতিহাসে এই দিনটি মহৎ বলেই বিবেচনার দাবি রাখে। কারণ এই দিনে রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের সামগ্রিক মুক্তির প্রথম ইতিহাস। এই দিনেই বাঙালি জাতি আশার নতুন দিশা খুঁজে পেয়েছিল। হাজার বছরের নিপীড়িত-নির্যাতিত, লাঞ্ছিত-বঞ্চিত বাঙালির অধিকার আদায় ও দাবি প্রতিষ্ঠার মাহেন্দ্রক্ষণটিই ছিল আজকের এই দিন। বিরোধিতার কারণে অনেকেই সমালোচনা বা বিতর্ক করতে পারেন। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশের যা কিছু মহৎ অর্জন তার বীজ বোপিত হয়েছিল আজকের এই দিনে।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যে দলটির জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের কৃতী পুরুষদের হাত ধরে সে দলটিই পরে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই শুরু করেছিল। ঐতিহাসিক সে রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। সময় বিবেচনায় দলটির নামের সঙ্গে 'মুসলিম' শব্দটি রাখা হলেও সময়ের পরিক্রমায় শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় ও পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আওয়ামী লীগের জন্মের ঐতিহাসিক কারণ থাকলেও দলটি মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই গতিশীল হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান দলটিকে বাঙালিদের হৃদস্পন্দনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। এ যাত্রায় তার সঙ্গী হিসেবে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানের কথা উলেস্নখ করতেই হয়।

ধর্মভিত্তিক চেতনার অপরাজনৈতিক কৌশল বিবেচনায় ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ বিভাগের পরে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে পাকিস্তানে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটে। এর মধ্যদিয়েই মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূূচনা হয়। সাহসী লড়াই-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ বাঙালিদের মানস চেতনার মর্মমূলে যেভাবে নাড়া দেয় তা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে গবেষণার বিষয়। আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে বাঙালির গৌরবময় অর্জনগুলো। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভু্যত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানকে ধরাশায়ী, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। প্রতিটি ধাপেই আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর অসীম ত্যাগ, দুর্দান্ত সাহসিকতা ও সময়োপযোগী রাজনৈতিক কৌশল নতুন পথের সূচনা করে।

বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, লড়াই-সংগ্রাম, অর্জন-উন্নয়নের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত আওয়ামী লীগ। জনগণের প্রত্যাশা ও দাবির বিষয়টি মাথায় রেখে বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে যে কটি দল প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে আওয়ামী লীগ তার মধ্য অন্যতম। সার্বজনীন অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চেতনা মাথায় রেখে দলটি বিকশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে সব ধর্ম-বর্ণের জনগণের প্রিয় একটি সংগঠনে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার আগে বা পরে যেসময়ই ধরা হোক না কেন, আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের সংগঠন বলে বিবেচিত। একদিকে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী-সমর্থক, অন্যদিকে সাধারণ জনগণের একটি বড় অংশের কাছে আওয়ামী লীগই বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার কান্ডারি হিসেবে পরিচিত। জনগণ এই দলটির মাধ্যমে তার সব আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের স্বপ্ন দেখে।

দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহাসিক জনপ্রিয় দল হিসেবে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক মহলে সমীহ পেয়ে আসছে বরাবরই। দলটির প্রতি জনগণের প্রত্যাশা দেশে সক্রিয় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তুলনায় বেশি। আশা-নিরাশার দোলাচলে থাকা মানুষ মনে করে আওয়ামী লীগই শেষ পর্যন্ত হতাশার মধ্যে আশার আলো জাগাতে পারে। সে কারণেই দলটিকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বেশি। নেতৃত্ব ও কর্মকান্ড নিয়ে গবেষণা এবং পর্যালোচনা বেশি। আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডের দিকে জনগণের নজর অন্যান্য অনেক দলের চেয়ে বেশি থাকে। দেশের প্রাচীন ও ঋদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই নতুন কিছু পেতে চায় জনগণ। এককথায় ত্যাগ-মহিমা ও ধারাবাহিক অর্জন দলটিকে 'স্বপ্নসারথী' মনে করা হয়।

'আওয়ামী লীগই পারে, আওয়ামী লীগই পারবে'-আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ কথাটি শুধু একটি উক্তি নয়, জনভাবনারও অংশ বটে। বঙ্গবন্ধুর পরে মেধা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, প্রতু্যৎপন্নমতিতা, সাহস, ও সময়োপযোগী কৌশলের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দলটিকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। পিতার মতো প্রবল বিরোধিতা ও জীবনশঙ্কাকে তুচ্ছ করে তিনি জীবনের জয়গান গেয়ে চলেছেন। এর পেছনে মূলত দেশ ও মানুষের প্রতি ঈর্ষণীয় মমত্ব এবং নিজের প্রতি অগাধ আস্থা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ও যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি কার্যকর, সমুদ্রজয়, ছিটমহল বিনিময়, পদ্মা সেতু, ধারাবাহিক উন্নয়ন, নানা সঙ্কটেও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, সর্বশেষ শুদ্ধি অভিযান- সবক্ষেত্রেই শেখ হাসিনা হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড।

আজও বাংলাদেশ বলতে বঙ্গবন্ধুকে বোঝায়, আর উন্নয়ন বলতে শেখ হাসিনার পারঙ্গমতাকে দিকনির্দেশ করে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা অর্জনের পাশাপাশি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগঠনে যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন ইতিহাসে তা আলোকোজ্জ্বল হয়ে আছে। আর তার কন্যা শেখ হাসিনা হাজারো অর্জনের ধারাবাহিকতায় শুদ্ধি অভিযান চালু করে দেশের মানুষের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলেছেন। সেই প্রত্যাশা আজও মানুষের অন্তরে ঘুরে ফিরছে। বাংলাদেশের জনগন এখন সর্বস্তরে শুদ্ধতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। রাষ্ট্র, সরকার, দল, প্রতিষ্ঠান সব জায়গায় অশুদ্ধতার যে জগদ্দল পাথর চেপে আছে তার নিরসন চায় জনগণ। সে কারণেই ৭১ বছর বয়সি আওয়ামী লীগের দিকে আজও জনগণের চোখ। নতুন এই পথযাত্রায় আওয়ামী লীগ দেশবাসী বা রাজনীতির জন্য নতুন কি বার্তা দেয় সেটির অপেক্ষায় সবাই। দেশে চলমান শুদ্ধি অভিযানের পথ ধরে এই সম্মেলনের মাধ্যমে কতটা শুদ্ধতা ছড়িয়ে দিতে পারবে আওয়ামী লীগ তা নিয়ে অধীর আগ্রহ নানা মহলে।

বাংলাদেশের রাজনীতির পথপ্রদর্শক আওয়ামী লীগ। দলটির অসাম্প্রদায়িক চেতনা আজও বিশ্বে অনন্য নজির হিসেবে পরিগণিত। বাংলাদেশের যা কিছু মহৎ অর্জন ও বিকাশ তার প্রায় পুরোটাই আওয়ামী লীগের হাত ধরে হয়েছে। সে কারণে আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের প্রত্যাশাও বেশি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি জনগণের যেমন আস্থা ছিল, তার চেয়েও বেশি আস্থা তৈরি হয়েছে তার কন্যা শেখ হাসিনার ওপর।

দেশের জনগণ মনে শেখ হাসিনাই পারবেন পিতার অসমাপ্ত প্রত্যাশাগুলো পূরণ করে বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে বিশ্ব দরবারে মর্যাদাসম্পন্ন একটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে। সেজন্য জনগণের চাহিদা অনুযায়ী আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজাতে হবে। দুষ্টচক্র হিসেবে পরিচিত 'হাইব্রিড', 'কাউয়া' 'অনুপ্রবেশকারী'দের দল থেকে সরিয়ে দিতে হবে চিরতরে। শুদ্ধতার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ধারা সূচনার দায়িত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকেই নিতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর পরে আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য ও সমর্থ দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে শেখ হাসিনাই সক্ষম হয়েছেন। সে অবস্থায় দলের কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে যে অনৈতিক কাজ করেছেন বা করছেন তার পরিণতি দেখার অপেক্ষায় জনগণ। দলপ্রধান শেখ হাসিনার দেশপ্রেম, সততা, সংযম, সাহস, মানবপ্রেম, ও ঔদার্য নিয়ে কারও কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু দলে থাকা সিজনাল রাজনীতিবিদ, ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্য দেওয়া নেতা, দলকে ব্যবহারকারী, নেতৃত্বে বিভাজন সৃষ্টির পাঁয়তারাকারীদের নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। বঙ্গবন্ধুর আমলে যেমন আদর্শ ও নেতৃত্বের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাকের দেখা পাওয়া গেছে, তেমনি বর্তমান আওয়ামী লীগেও কিছু মোশতাক রয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে শোনা যায়। জনগণ ও আওয়ামী লীগের তৃণমূল এ ধরনের নেতাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে দূরে রাখার পক্ষে। তারা মনে করেন, ব্যবসার সুবাদে বা আর্থিক সক্ষমতার কারণে কেউ দলকে ব্যবহারের সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগ গণমানুষের চরিত্র হারাবে। জনগণ চায়, ৭১ বছরের রাজনৈতিক পথপরিক্রমার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন যাত্রায় আওয়ামী লীগকে আরও শুদ্ধ ও ঋদ্ধ করে তুলবেন শেখ হাসিনা।

রাজনীতিবিদ গড়ে ওঠেন ওরিয়েন্টেশন বা প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে। বিষয়টি মাথায় রেখে 'বাই চান্স নেতা' বা 'ভোগী নেতাদের' পরিহার করা সময়ের দাবি। অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগে থাকা শীতের পাখি বা সুবিধাবাদীরা তাদের নিজস্ব বলয় তৈরি করে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বিক্ষুব্ধ করে দলের শক্তি-সামর্থ্য নষ্ট করছেন। ফলে দলটির সুষ্ঠু বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মতো মর্যাদাশীল একটি দল এ ধরনের নেতাদের কারণে বিতর্কিত ও বিব্রত হতে হয়েছে একাধিকবার। এই পরিস্থিতির অবসান হওয়া জরুরি। জনগণ চায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৭১ বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শুদ্ধতার সর্বোচ্চটুকু প্রতিষ্ঠা করবে।

জনগণ মনে করে শেখ হাসিনাই এখন বাংলাদেশের কান্ডারি। তার নেতৃত্বে দেশের অগ্রগতির চাকা যেমন এগিয়ে চলছে, তেমনি রাজনৈতিক শুদ্ধতার সংস্কৃতি তার মাধ্যমেই বিকশিত হবে। -জনআকাঙ্ক্ষা ও দলের মর্যাদার বিষয়টি মাথায় রেখে শেখ হাসিনাকে আরও কঠোর হতে হবে। রাষ্ট্র, সরকার ও দল পরিচালনায় সততা-একনিষ্ঠতা ও শুদ্ধতার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। এই সময়ে রাজনীতিবিদদের রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে অসুর বধ করে সুরময় সুবাসিত বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন সেই প্রত্যাশা দেশবাসীর। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সুবাসে সুবাসিত হবে বাংলাদেশ ও বিশ্ব এমনটি গণমানুষের একান্ত বাসনা।

সোহেল হায়দার চৌধুরী : বিশেষ সংবাদদাতা, দৈনিক যায়যায়দিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<103389 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1