আওয়ামী লীগ: বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা-যুগ

মূলত জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।

প্রকাশ | ২৩ জুন ২০২০, ০০:০০

মিল্টন বিশ্বাস
২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। 'মুজিববর্ষে' এই রাজনৈতিক সংগঠনটির জন্মদিন উদযাপনের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। অন্যদিকে করোনাভাইরাসের মহামারিতে মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা দলটির জনসেবার প্রাচীন ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আসলে এদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনাযুগের যা কিছু অর্জন তা এই রাজনৈতিক সংগঠনটির নেতাকর্মীদের আত্মত্যাগে সঞ্চিত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর দলটির নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে সততার সঙ্গে সংগঠনকে টিকিয়ে রাখতে হয়েছে, দু'একটি ব্যতিক্রম ছাড়া তারা নিজেদের জীবনকেও সেভাবে গড়ে তুলেছেন। তারা জানেন, সততাই হলো সব থেকে বড় শক্তি। যা উঁচু গলায় কথা বলার সাহস জোগায়। শেখ হাসিনার মতে, 'আওয়ামী লীগ সব সময় নীতি-আদর্শ নিয়ে চলেছে। এজন্য আওয়ামী লীগের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারেনি।' ১৯৮১ সালে থেকে আজ পর্যন্ত দলটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় তিনি সেই বাস্তবতা যথার্থই উপলব্ধি করেছেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। প্রায় দুই দশক পর এই দলটির নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে ৫০-এর দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। এরপর ১৯৬২ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণঅভু্যত্থানে নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ। আসলে 'বাঙালির যা প্রাপ্তি, তা আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে। যে দলের নেতা (বঙ্গবন্ধু) সংগঠনের জন্য মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছিলেন, সে দলের শিকড় এদেশের মাটির গভীরে প্রোথিত। উলেস্নখ্য, মুসলিম লীগের প্রগতিশীল একটি অংশের উদ্যোগে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'। প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দলটির সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। নতুন নাম হয়-'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ'। স্বাধীনতার পর 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ' নাম নেয় দলটি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘসময় এই দলটি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থার স্থান তৈরি করে। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দেন বঙ্গবন্ধু, যাকে বাঙালির মুক্তির সনদ নামে অভিহিত করা হয়। ৬ দফার ভিত্তিতেই ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগের অবদান এই ক্ষুদ্র পরিসরে বলে শেষ করা যাবে না। কেবল দলের ভেতর বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও শেখ হাসিনাযুগে অর্জিত উন্নয়নের ধারা বর্ণনায় নেতৃত্বের গুরুত্ব তুলে ধরা যেতে পারে এখানে। ২. আগেই লিখেছি, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় এবং জেলে থাকা অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান এ দলের যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। জুলাই মাসের শেষের দিকে তিনি মুক্তিলাভ করেন। এরপর ১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে শেখ মুজিবুর রহমান দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ মুজিব দলের নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব পেশ করলে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রম্নয়ারিতে আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় কাগমারিতে এবং একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় এক বিশাল সাংস্কৃতিক সম্মেলন। ৩০ মে দলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, একই ব্যক্তি একসঙ্গে সরকার ও সংগঠনের দুটো পদে থাকতে পারবেন না। শেখ মুজিব দলকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তার বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। ওই সভায় দেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটের মাধ্যমে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি এবং সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় সংবলিত প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভায় মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও শেখ মুজিবুর রহমান যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৬ দফা উপস্থাপনের বছর ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এর পর তিনি ৬ দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সারা পূর্ববাংলায় গণসংযোগ সফর শুরু করেন। ১৯৭০ সালের ৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পুনরায় আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হন। ৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী লীগ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের মহিলাসহ ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসনে জয়লাভ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেও ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন হলে তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। জাতীয় সংসদের বিদায়ী নেতা বঙ্গবন্ধু সংসদে তার দ্বিতীয় বিপস্নবের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ২৬ জানুয়ারি জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি ও এম মনসুর আলীকে প্রধানমন্ত্রী করে সতেরো সদস্যের মন্ত্রিপরিষদ ও নয়জন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগদান করেন। ১৮ ফেব্রম্নয়ারি বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে মন্ত্রীদের সম্পত্তির হিসাব দিতে হবে বলে যুগান্তকারী এক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২৪ ফেব্রম্নয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু নতুন গঠিত এই জাতীয় দলে যোগদানের জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দল ও নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। ৬ জুন বঙ্গবন্ধু জাতীয় দল 'বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ'-এর কার্যনির্বাহী ও কেন্দ্রীয় কমিটি এবং গঠনতন্ত্র ঘোষণা দেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে বাকশাল গঠন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে এদেশের মানুষের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিলেন। তার মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের অভু্যদয় ছিল বিশ্ববাসীর কাছে বিস্ময়। একইভাবে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শেখ হাসিনা এ দেশকে উন্নয়নের ধারায় উন্নত রাষ্ট্রের মহিমা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। লেখাবাহুল্য, আওয়ামী লীগের ইতিহাস যেমন বাংলাদেশের ইতিহাস তেমনি আওয়ামী লীগের ইতিহাস বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা যুগের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ইতিহাস। ৩. মূলত জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। কেবল নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় নয়- শেখ হাসিনা যে কোনো দলীয় অনুষ্ঠানে বলে থাকেন, তরুণদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তার নেতারা নিজেদের বর্তমানকে উৎসর্গ করছেন। কারণ এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অগ্রগতি অসামান্য। বিশ্বের অন্যতম উন্নত রাষ্ট্র হতে যাচ্ছে এটি। বিশ্বের ১১তম সুখী দেশের তালিকায়ও আছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ৬ষ্ঠতম ভাষা হিসেবে বাংলা অনেক আগে থেকে স্বীকৃত। আসামের শিলচরের ভাষা সংগ্রামীদের কথা মনে রেখেও বলা যায় আমরাই একমাত্র ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি। অন্যদিকে বাংলাদেশ শক্তিশালী ১০টি মুসলিম দেশের একটি। এখানে (কক্সবাজারে) রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় লোনাপানির ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন এখানে অবস্থিত। নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্বের দীর্ঘ 'পদ্মা সেতু'র নির্মাণ কাজ শেষ হতে যাচ্ছে আগামী বছরে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি সৈন্য প্রেরণ করেছে বাংলাদেশ। এ দেশটি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বে ২৭তম, গার্মেন্টশিল্পে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ দেশটি ২০৫০ সালে বিশ্বের অন্যতম ১০টি ক্ষমতাধর দেশের একটিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। একাত্তরের প্রধান প্রধান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করে এ দেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করার পুরো কৃতিত্ব বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটির নেতাকর্মীদের। আর তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবির দাপট দেখিয়ে চলেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এজন্য শেখ হাসিনা বলেছিলেন, জামায়াতের জন্য দরদের কারণে বিএনপি নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তিনি সেদিন যথার্থই বলেছিলেন। ৪. রাজনীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশ ও জনগণের উন্নয়ন। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ব্যাপক। গত নির্বাচনী প্রচারণায় আমরা দেখতে পেয়েছি অসাধারণ উপস্থাপনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তাদের সাফল্যগুলো নিরন্তর কয়েকটি টিভি চ্যানেল ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করে চলেছে। সেখানে তথ্যাদির নিরিখে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড প্রচার করা হয়। আর তা যে সম্পন্ন হয়েছে এটা জনগণের কাছে স্পষ্ট। না হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া কিংবা কোনো ভুল বা অতিরঞ্জিত তথ্য পরিবেশিত হলে তার সমালোচনা করা কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি তখন। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে যদিও কেউ কেউ মিথ্যাচার করেছেন। তবে উপস্থাপিত তথ্যাদি বা সরকারের উন্নয়ন না হওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি কেউ। সরকারের উন্নয়নের ব্যাপারে কোনো চ্যালেঞ্জ না করে নির্বাচনকে ভন্ডুল করার জন্য উদ্ভট আর মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছিল বিএনপি-জামায়াত। তারা আসলে সরকারের উন্নয়নকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। উলেস্নখ্য, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারণায় বর্ণিত উন্নয়নের ব্যাপারে সরকারকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারেননি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সমুদ্র সীমানাসংক্রান্ত মামলায় মিয়ানমারের কাছে জয়ী হওয়া, বিশাল সমুদ্র অঞ্চল প্রাপ্তি, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট নিক্ষেপ করা, জোট সরকারের চেয়ে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অতিরিক্ত বিদু্যৎ উৎপন্ন হওয়া, বনানী ফ্লাইওভার, যাত্রাবাড়ীতে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার ও কুড়িল উড়াল সড়ক তৈরি হওয়া, মেট্রো রেল ও পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলা, কর্ণফুলির ট্যানেল তৈরির কাজ দ্রম্নত সম্পন্নের দিকে এগিয়ে যাওয়া, সেনাবাহিনীর জন্য মেকানাইজড ব্রিগেড ও ব্যাটালিয়ন গঠন করা, রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি কিংবা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়া সবই হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সদিচ্ছায়। মূলত মিডিয়ায় প্রচারিত তথ্যাদি, সরকারের সাফল্য, আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন দিবালোকের মতো সত্য। রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে আওয়ামী লীগ বিপুলসংখ্যক আসনে জয়ী হয়েছিল জনগণের আস্থা অর্জনের কারণে। বিএনপি ও অন্যরা জোট বেঁধে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও তাদের পরাজিত করার কোনো সুযোগ ছিল না। এজন্য বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে জয়ী হওয়া নিয়ে যুক্তিহীন বিরোধিতা মূল্যহীন ছিল। তারা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার রাজনীতিতে অপপ্রচার-নিন্দাবাদ করে কোনো মীমাংসায় উপনীত হতে পারেনি। বিদেশি কূটনৈতিকদের সঙ্গে আলোচনা করেও লাভ হয়নি। বিগত সাড়ে ১১ বছরে বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট বলে আসছিল সরকার পতনের আন্দোলন জোরদার করা হবে, বিরোধী জোট আরও শক্তিশালী হবে, কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে। কিন্তু তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সরকারের পতন হয়নি বরং একটানা তৃতীয়মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত হয়েছে সফলভাবে। তবে অতীতে রাজনীতির নামে হরতাল-অবরোধ দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, হত্যা করছে বিএনপি-জামায়াত। নেতিবাচক এসব গুণের কারণেই তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আজ। ৫. আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত সাড়ে ১১ বছরে (২০০৯-২০২০) দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী রাজাকার ও বদরবাহিনী প্রধানদের ফাঁসি কার্যকরের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা শতগুণে বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। যারা একসময় ভাবতে শুরু করেছিল এই দলটি ব্যর্থ, কোনোকিছু গোছাতে পারছে না তারা মহামারির মধ্যেও বলতে শুরু করেছে সাহসী দল হিসেবে এবং নির্ভীক নেতারূপে শেখ হাসিনাই এদেশের সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম। অন্যদিকে বর্তমানে আন্দোলন গড়ে তোলা, সরকার উৎখাত করা বা অন্যকিছু করার মতো ইসু্য ও সাংগঠনিক শক্তি বিএনপি ও জামায়াত কিংবা অন্য কোনো দলের নেই। এ অবস্থায় দেশের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। লকডাউনের মধ্যে ভিডিও বার্তায় মিথ্যা কথা প্রচার করে আর হুমকি দিয়ে জনগণের সমস্যা সমাধানে বিঘ্ন সৃষ্টির পাঁয়তারা বা অপপ্রয়াস চালাচ্ছে দেশবিরোধী শক্তিগুলো। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জনগণের প্রত্যাশা ও দাবি, আসুন আমরা মানুষকে বিভ্রান্ত করার রাজনীতি পরিহার করে দেশ ও জনগণের উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠনমূলক রাজনীতি শুরু করি; রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে সরকার পরিচালনায় সহায়তা করি। কারণ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী লীগ এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশকে বিশ্বসভার মধ্যমণিতে আসীন করার জন্য। আর ২০২০ সালের পর ভবিষ্যতে সফল বাংলাদেশ দেখতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই এদেশে। ড. মিল্টন বিশ্বাস : কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ৎিরঃবৎসরষঃড়হনরংধিং@মসধরষ.পড়স