করোনার ঝুঁকি যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ২৩ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ইতিমধ্যে ছড়িয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই। কার্যত বিশ্ব থমকে গেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন। আর করোনার সংক্রমণ রোধে চলছে যেমন বিভিন্ন ধরনের গবেষণা, তেমনি করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নানা ধরনের জরিপও উঠে আসছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ব্রিটেনে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলে দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূতদেরই মারা যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি এবং তার একটি কারণ হলো ডায়াবেটিস। মূলত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ওপর কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণের প্রতিক্রিয়া নিয়ে পৃথিবীতে যত জরিপ হয়েছে তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়। প্রসঙ্গত, জরিপে এমনটি বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় দক্ষিণ এশীয়দের মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া ব্রিটেনের অন্য যেসব জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আছে তাদের কারোরই মৃতু্যর সম্ভাবনা দক্ষিণ এশীয়দের চেয়ে বেশি নয়। তথ্য মতে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার দরকার হয়েছে- তাদের প্রতি ১ হাজার দক্ষিণ এশীয়র মধ্যে গড়ে ৩৫০ জন মারা যায়; কিন্তু শ্বেতাঙ্গদের ক্ষেত্রে এই হার হচ্ছে গড়ে ২৯০ জন। আর একটা বড় কারণ ডায়াবেটিস। প্রসঙ্গত এটাও উলেস্নখ্য, ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য দপ্তর পিএইচইর এক জরিপে কোভিড-১৯ সংক্রমণে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মৃতু্যর উচ্চ ঝুঁকি সম্পর্কে তথ্য উঠে এসেছে। যেখানে বলা হয়, বিশেষত বয়স্ক মানুষ ও পুরুষদের করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বয়স ও লিঙ্গ বাদ দিলে কোভিড-১৯ এ মারা যাওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি হচ্ছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের। এমনটিও বলা হয়ে হয়েছে, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের কেসগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায় বয়স, লিঙ্গ, আর্থ-সামাজিক বঞ্চনা- এগুলোর প্রভাব বাদ দিলে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের কোভিডে মৃতু্যর ঝুঁকি শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের দ্বিগুণ। আমরা মনে করি, জরিপে উঠে আসা বিষয়টিকে আমলে নেওয়ার পাশাপাশি, দেশের সংশ্লিষ্টদের সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখা দরকার, মহামারি শুরু হওয়ার পর ডায়াবেটিসসহ গুরুতর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে- এমন খবর প্রকাশিত হয়েছিল। আর এটাও উলেস্নখ্য, সম্প্রতি এমন তথ্যও সামনে এসেছে, ১৮৮টি দেশের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষকরা ধারণা পেয়েছেন, বিশ্বে সত্তরোর্ধ্ব জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা ফুসফুসের রোগের মতো কোনো না কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন। তারা নতুন করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এলে অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। বলা দরকার. ডায়াবেটিস একই সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, আবার সংক্রমিত হওয়ার পর বাঁচার সম্ভাবনাও কমিয়ে দিতে পারে এমনটিও উঠে এসেছে। জানা গেছে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত হলে করোনাভাইরাস সংক্রমণে দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। কৃষ্ণাঙ্গ ও এশিয়ানদের (বাংলাদেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানি) ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি এমনও জানা যাচ্ছে। ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য দপ্তর পিএইচইর জরিপে বলা হয়েছে, এ দুটি স্বাস্থ্য সমস্যাই তাদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া সবশেষ জরিপে যুক্তরাজ্যের ২৬০টি হাসপাতালে প্রায় ৩৫ হাজার কোভিড-১৯ রোগীর উপাত্ত পরীক্ষা করে বলা হয়, করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার ঝুঁকির পেছনে একটা কারণ হচ্ছে ডায়াবেটিস। সঙ্গত কারণেই আমরা বলতে চাই, সংশ্লিষ্টদের ডায়াবেটিসসংক্রান্ত ঝুঁকির বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ডায়াবেটিস করোনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, এমনটি যেমন সামনে আসছে তেমনি কিছু জরিপে আভাস দেওয়া হয়েছে, যাদের দেহে ভিটামিন-ডি'র অভাব এবং হৃদরোগের মতো সমস্যা আছে তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যর ঝুঁকি বেশি। অর্থাৎ আমরা মনে করি, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ঝুঁকির বিষয়গুলো যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।