শেখ হাসিনাকে কেন নিরাপদ থাকতে হবে?

শেখ হাসিনা নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তিনি যে পিছু হটার মানুষ নন, সেটা তিনি প্রমাণ করেছেন। এখন তাকে নিরাপদ রাখা, তার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা জাতির কর্তব্য। বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎমুখী নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি বর্তমানে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ নেই।

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০২০, ০০:০০

বিভুরঞ্জন সরকার
ঘুরেফিরেই করোনা প্রসঙ্গ আসছে। চেষ্টা করেও করোনা থেকে আমরা আর মনোযোগ সরাতে পারছি না। করোনা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটা বৈশ্বিক সমস্যা। করোনা পৃথিবীকে এক অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এই অতিমারির কাছে মানুষ কত অসহায় তা প্রমাণ হয়েছে। দুয়েকটি দেশ করোনা মোকাবিলায় সফল হলেও বেশির ভাগ দেশের অবস্থা বেসামাল, লন্ডভন্ড। আমেরিকার মতো দেশের কী অবস্থা! স্বাস্থ্য খাত সুরক্ষিত না করার মাশুল গুনতে হচ্ছে এখন বহু দেশকে। অর্থনীতি বেহাল হয়ে পড়ছে। কর্মহীন মানুষের হাহাকার দেশে দেশে। অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়বে, অনাহারে মৃতু্যর আশঙ্ক্ষা করা হচ্ছে।. করোনাকালে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ- সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। পরিবর্তন আসছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের পরিসরেও। সন্দেহ, অবিশ্বাস, আতঙ্কে মানুষে মানুষে দেওয়াল তোলার প্রবণতা বাড়ছে। কিছু মানুষ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহযোগিতা না করে, ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত না করে বেপরোয়া মনোভাব দেখাচ্ছেন। এরা রোগের বিরুদ্ধে না দাঁড়িয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মারমুখী আচরণ করছেন। মানুষের মধ্যে ক্ষেত্রবিশেষে সংকীর্ণতা বাড়ছে, উদারতা কমছে। মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরার স্বাধীনতা ব্যাহত হওয়ায় অনেকে হতাশ। মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন অনেকে। আমরা এটা জানি, অধিকাংশ রোগ-ব্যাধিই অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের পরিণতি। টাটকা খাবার খাওয়া, হাত-মুখ পরিষ্কার রাখা, যেখানে-সেখানে কফ-থুতু না ফেলা, বাইরের পরিধেয় ব্যবহারের পর ধুয়ে ফেলা, জুতা-সেন্ডেল ঘরের বাইরে রাখা- এগুলোকে এক সময় কান্ডজ্ঞান বলা হতো। আমাদের সাধারণ কান্ডজ্ঞান যত লোপ পেয়েছে, রোগ-বালাই ততই আমাদের শরীরে জেঁকে বসেছে। এই যে এখন করোনাকালে মাস্ক ব্যবহার, বারবার হাত ধোয়াসহ যেসব প্রতিরোধ ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো কী খুব নতুন কিছু? কিছু বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ সাধারণ মানুষের হাতে নেই। আবার মানুষের সম্মিলিত চেষ্টায় যে অসাধ্য সাধন করা যায়, সেটাও আমাদের অজানা নয়। করোনা মোকাবিলায় এবার ভিয়েতনামের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। দৃশ্যমান শত্রম্নর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতা যত সহজ, অদৃশ্য শত্রম্নর বিরুদ্ধে লড়াই ততটাই কঠিন। করোনা কখন, কীভাবে, কোন বাহকের মাধ্যমে, কার শরীরে প্রবেশ করছে তা বোঝা যায় না। করোনার আচরণ অস্বাভাবিক। কারও শরীরে এর উপসর্গ দেখা যায়, আবার কারও শরীরে এটা ঘাপটি মেরে থাকে এবং নীরবে ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। করোনার আক্রমণ সর্বগ্রাসী। কার কী সামাজিক অবস্থান, কে কোন পেশার মানুষ, কার ক্ষমতা-প্রতিপত্তির জোর কতটা- এসবে করোনার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। এরই মধ্যে আমরা জেনেছি, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, কানাডার প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীসহ আরও কয়েকটি দেশের সরকারপ্রধান করোনার ছোবলে পড়েছেন। করোনার এই স্বেচ্ছাচারী আচরণের লক্ষণ আমাদের দেশেও দেখা যাচ্ছে। কয়েকজন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষাবিদ, শিল্পপতি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন মৃতু্যও বরণ করেছেন। চারদিকে ভয়ের পরিবেশ। প্রশ্ন উঠছে, কার পরে কে? এই অবস্থাটা কষ্টের, বেদনার। করোনা মোকাবিলায় যাদের সামনে থেকে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা, তারাই যদি সংক্রমিত হন, মৃতু্যবরণ করেন, তাহলে কে কাকে ভরসা দেবেন, সাহস জোগাবেন? এই অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে অনেকের মধ্যই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন, আবেগ সব কিছুই এখন শেখ হাসিনাকে ঘিরে। তিনি শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি ১৭ কোটি মানুষের অভিভাবক। দেশ এখন এক বড় অস্থিরতার মধ্যে আছে। সব দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও মানুষ মনে করেন, শেখ হাসিনা যখন আছেন, তখন তিনি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উপায় ঠিকই বের করবেন। কারণ তিনি অতীতে অনেক রাজনৈতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেছেন অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সঙ্গে। যদিও তাকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯টি উদ্যোগের কথা এখন কারও অজানা নয়। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ একাধিকবার প্রকাশ্যে আর একটি '১৫ আগস্ট' ঘটানোর হুমকি দিয়েছে। ঘটানো হয়েছে ২১ আগস্টের মর্মন্তুদ ঘটনাও। তার প্রাণনাশের আশঙ্কা তাই অমূলক নয়। কিন্তু তিনি মৃতু্যভয়ে ভীত নন। তিনি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য তার জীবন উৎসর্গ করে রেখেছেন। এই করোনাকালেও তিনি মানুষের জীবন রক্ষার জন্য সম্ভাব্য সব উপায়ে চেষ্টা করছেন। প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে তিনি হয়তো সব কিছু তার মতো করে সম্পন্ন করতে পারেন না; কিন্তু তার আন্তরিকতা, নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। শেখ হাসিনা একাধিকবার এটা বলেছেন, তার হারাবার কিছু নেই। মৃতু্যচিন্তা তাকে বিচলিত করে না। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা, মা, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রীসহ অনেক নিকট আত্মীয়কে হারিয়েছেন। অধিক শোকে তিনি পাথর হয়ে আছেন। আওয়ামী লীগের হাল ধরার পর থেকে কত নেতাকর্মীর মৃতু্য শোক তাকে সহ্য করতে হয়েছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে কত রাজনৈতিক সহযোদ্ধার নৃশংস হত্যাকান্ডের দুঃসহ বেদনাভার তিনি বহন করে চলেছেন। করোনাও কেড়ে নিয়েছে তার কয়েকজন বিশ্বস্ত সহকর্মীকে। তিনি একজন মানুষ। তারও শোক-দুঃখ বহনের একটি সীমা আছে। শরীর মনের ওপর প্রচন্ড চাপ নিয়েই তিনি নিরলস পরিশ্রম করছেন। তারও বিশ্রাম দরকার। দরকার একটু মুক্ত নিশ্বাস নেওয়ার সময় ও সুযোগ। শেখ হাসিনা নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তিনি যে পিছু হটার মানুষ নন, সেটা তিনি প্রমাণ করেছেন। এখন তাকে নিরাপদ রাখা, তার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা জাতির কর্তব্য। বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎমুখী নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি বর্তমানে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ নেই। বিভুরঞ্জন সরকার : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক