পাঠক মত

করোনাকালে বাবা সন্তানের ভালোবাসা

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০২০, ০০:০০

আফসারুল আলম মামুন শিক্ষার্থী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
আমার মামা মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন করপোরাল। বর্তমানে সাভার সেনানিবাসে কর্মরত। তার দুই সন্তান। বড় ছেলেটার বয়স সাড়ে চার বছর নাম অভি আর ছোট মেয়েটা ২ বছরের মতো। ডাক নাম নোহা। বাবার জন্য এই দুজন যেরকমভাবে পাগল তেমনি বাবাও সন্তানদের ছাড়া অন্যকিছু ভাবতেই পারে না। ময়মনসিংহে বাড়ি যাওয়ায় দেখা যেত সন্তানের টানে মামা প্রতি মাসেই দুই থেকে তিনবার বাড়ি আসত। বাড়িতে থাকাকালে সবসময় সন্তানদের সঙ্গেই খেলাধুলায় মত্ত থাকত। মার্চের করোনা প্রকোপের আগেই মামা দুই মাসের ছুটি পায়। ছুটির সময়টাতে এক এক করে কাটতে এক একটি দিন। সন্তানের কাছে যেইরকম আনন্দ ভালোবাসার নহর বইছিল তেমনি বাবার কাছেও যেন প্রতিটি দিনই ঈদের দিনের মতো মনে হচ্ছিল। কিন্তু সময় তো আর থেমে থাকে না। দেখতে দেখতে মাস দুই শেষ হয়ে যায়। যাত্রার দিন বাবার বুকের কষ্ট, সন্তানের চোখে যেন প্রতিফলিত হওয়া শুরু হলো। বাবাও বুঝতে পারছে এবার সেনানিবাসে গেলে করোনা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ছুটি ভাগ্যে জুটবে না। মনের ভাব যেন কেমন করে সন্তানের কানে চলে যায়। বাবাকে তারা কোনোভাবেই ছাড়বে না। মামার ছোট মেয়েটা ভালো করে কথাও বলতে পারে না। কিন্তু সেদিন কেন জানি অস্পষ্ট কথায় হাজারো বার বলতে চাচ্ছে বাবা তুমি যেও না। ছেলেটা তো বাবার পা জড়িয়ে বসে আছে। বাবা আমার কিছু খেলনাই লাগবে না। তুমি বাড়িতে থাক। বাবার মুখ তখন অবরুদ্ধ। সন্তানের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা বাবার জানা নেই। যখন অভি আর নোহা বুঝতে পারল তাদের বাবা চলেই যাবে তখন বুকের আর্তনাদ গগনবিদারী কান্না হিসাবে বের হতে লাগল। মামির কোল থেকে নোহা যেন মামার সঙ্গে চলেই যাবে। মাসুম বাচ্চাদের এমন অবস্থা দেখে সেই মুহূর্তে একজন বাবা তার বুকের হাহাকার কি আটকিয়ে রাখতে পারে! সন্তানের সঙ্গে বাবারও কান্না। বাবা-সন্তানের কান্নার আওয়াজ শুনে উপস্থিত সবার চোখই যেন টলমল করছে। এই কান্নার জন্য কারও কাছে কোনো অভিযোগ দায়ের করা যায় না। কখনো যায় না। তাই বুকের কষ্টকে বুকে লালন করেই দেশের ভালোবাসায় মামা কিন্তু সেদিন চলেই আসে। কারণ একজন সৈনিকের কাছে দেশটাই সবচেয়ে বড়। আমার এক মামা না, এ দেশে এমন হাজারো মফিজুল আছে যারা তাদের কলিজার সন্তানকে বাড়িতে রেখে, সন্তানের ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য জীবন বাজি করে লড়ে যাচ্ছে। স্যালুট সেই সব বীরদের।