এই বাজেট কতটা যুব সমাজবান্ধব?
প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২০, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
করোনার এই মহাসংকটের মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করা হলো বাজেট। সিগারেট ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ানো সেই সঙ্গে করোনাভাইরাস টেস্ট কিট ও স্বর্ণের দাম কমিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করা হয়েছে।
যতটুকু শুনলাম, মানুষের জীবন রক্ষা আর জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে 'অর্থনৈতিক উত্তরণ : ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা' শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে, যেখানে ৬ শতাংশ ঘাটতির কথা বলা হয়েছে (চলতি বছরের তুলনায় যা ১ শতাংশ বেশি)।
এই সংকটকালে সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি তা মোকাবিলায় সবার মুখে ভাত ও সবার হাতে কাজের নিশ্চয়তাও দিতে হবে সরকারের। দেশের সার্বিক বিপুল বেকারত্ব পরিস্থিতির সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হওয়া ৩ কোটি ৬০ লাখ কর্মহীন জনগোষ্ঠীর তীব্র সংকটের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। দেশের মোট শ্রমশক্তির বিপুল অংশকে কর্মহীন রেখে প্রকৃত উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। করোনা পরিস্থিতির ফলে সৃষ্ট বিপর্যয়ে যা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। ২০০৮ সালের ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট বেড়ে পাঁচ লাখ কোটি অতিক্রম করলেও কর্মসংস্থান সংকট মোকাবিলায় পৃথক কোনো উলেস্নখযোগ্য বরাদ্দ কখনই রাখা হয়নি। বর্তমান সরকার নির্বাচনের আগে অঙ্গীকার করেছিল প্রতি ঘরে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে। তবে বাস্তবে তা কার্যকরে কোনো পদক্ষেপ কখনো নেওয়া হয়নি। এই দেশের এখনকার আনুমানিক ৬০ শতাংশ জনসংখ্যা ৩৫ বছরের নিচে। এই জনগোষ্ঠীর অন্যতম এবং প্রধান চাহিদা কী? চোখ বন্ধ করেই বলা যায়- চাকরি আর কর্মসংস্থান। আমাদের বাজেটের মাপকাঠি ধীরে ধীরে বেকারত্বহীন হয়ে উঠছে। আমাদের দেশে বেকার সমস্যা একটি কঠিন সমস্যা। এই দেশের যুবকরা বিদেশে গণরুমে গাদাগাদি করে থেকে দেশে টাকা পাঠায়। মরু ডিঙিয়ে নৌকায় সাগর পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের দেশে পাড়ি জমাতে চায়। কাজের খোঁজে তারা নৌকায় বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ড বা মালেশিয়ার গহিন জঙ্গলে গণকবরে শেষ পরিণতি বেছে নেয়। এ কথা অনস্বীকার্য, যুবকদের সম্পৃক্ততা ছাড়া বিশ্বের কোথাও কখনো কোনো সংগ্রাম বা বিপস্নব সংঘটিত হয়নি। এ দেশে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সিপাহি বিপস্নব, কৃষক বিদ্রোহ, নীলকরদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, '৯০-র গণঅভু্যত্থান, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন, জাতীয় সম্পদ রক্ষা আন্দোলন, গণআদালত, সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদবিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সৃষ্টি ইত্যাদি বহুবিধ কর্মকান্ডে এ দেশের যুবসমাজ এক সাহসী-উদ্যোগী ভূমিকা রেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অগ্রসর ও প্রগতিশীল যুবসংগঠন বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে স্যানিটাইজার উৎপাদন, মাস্ক উৎপাদন, খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, স্বাস্থ্য হেল্পলাইন চালুর কাজ করছে। এ ছাড়া হাওর অঞ্চলে প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে ধানকাটার কাজে অংশও নিয়েছে তারা। এ সংগঠনটি ১৯৭৬ সালের ২৮ আগস্ট থেকে একটি কার্যকর যুব আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। দেশের বন্যা-খরায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে, করোনা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পাড়ায় পাড়ায় কাজ করেছে এবং সবশেষে আম্পানের প্রবল ঝড়ে বিধ্বস্ত প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে কারা? এ দেশের যুবসমাজই। বাংলাদেশে বেকারত্বের ভয়াবহতা জানতে কোনো জরিপের প্রয়োজন হয় না। বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস কিংবা অন্য কোনো খাতে একটি শূন্য পদে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা দেখলেই সেটি অনুমান করা যায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি। আইএলওর হিসাবটিকেই পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশের প্রকৃত বেকারের সংখ্যা বলে মনে করেন। এ ছাড়া এই করোনার সময় বেকার হতে পারে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ।
তাহলে এসব বেকার মানুষ কোথায় যাবে? বাজেটে কি এদের কথা এসেছে?
আজহার মাহমুদ
খুলশী-১, চট্টগ্রাম