করোনায় শিক্ষা ও শিক্ষক রক্ষায় করণীয়

একেকজন শিক্ষক সমাজ ও জাতির আলোকবর্তিকা। তারা কখনোই বেতনের অঙ্ক কষে জীবিকা নির্বাহ করেন না। তাদের ছোট-বড় বিচার করা অসম্মানের। তাই করোনা ক্রান্তিলগ্নে শিক্ষকদের পাশে সরকার দাঁড়াবে এই প্রত্যাশায় আমার মতো কোটি শিক্ষানুরাগীর।

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০২০, ০০:০০

শান্তা ফারজানা
'গুরু শিষ্যকে যদি একটি অক্ষরও শিক্ষা দেন, তবে পৃথিবীতে এমন কোনো জিনিস নেই, যা দিয়ে সেই শিষ্য গুরুর ঋণ শোধ করতে পারে।' শিক্ষা ও শিক্ষকের গুরুত্ব প্রসঙ্গে প্রাচীন অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক চাণক্যের বিখ্যাত এই উক্তিটি আজ ধূলি ধূসরিত। করোনা ক্রান্তিলগ্নে সারা পৃথিবী যেমন স্থবির হয়ে গেছে, তেমনি অন্ধকারে ছেয়ে গেছে বাংলাদেশের মানবজীবন ও অর্থনীতি। শিথিল, সীমিত, অঘোষিত লকডাউনের চরকায় ঘুরপাক খাচ্ছে প্রায় ১৮ কোটি মানুষের জীবন। এমতন অবস্থায় শিক্ষকদের অবস্থা বর্তমানে সবচেয়ে উপেক্ষিত। কোটি শিক্ষার্থীর জীবন গঠনের কারিগর, দেশের হাজার হাজার নন-এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজে কমর্রত লাখ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীরা করোনাকালে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। করোনা অস্থিরতার কারণে একদিনের নোটিশে ১৮ মার্চ থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। করোনার ভয়াবহতার মধ্যে স্কুলের পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যায় টিউশনি কর্মও। নিরুপায় শিক্ষকদের হাত পাততে পারেন না বলে তারা তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। তারা প্রধানমন্ত্রীর ২৫০০ টাকা সহযোগিতা থেকেও বঞ্চিত। বিদ্যালয় বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে সম্মানীও। আজকের এই নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অসহায়ত্বের মধ্যে অনাহারে-অর্ধহারে জীবনযাপন করছেন। অনেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন বেঁচে থাকার যন্ত্রণা নিয়ে। অন্যদিকে, বেসরকারি স্কুলের মালিকরা আছেন করোনা ক্রান্তিলগ্নে সৃষ্ট বাড়িভাড়া সমস্যা নিয়ে। শিক্ষকদের খানিকটা সহযোগিতা করাও তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। শতকরা ৯৫ ভাগ শিক্ষাঙ্গনের পরিচালকরা আজ বড় অসহায়। অথচ তারা প্রচলিত কিন্ডারগার্টেন এনসিটিবি কারিকুলাম অনুসরণ করে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। পিইসি পরীক্ষাসহ সরকার ঘোষিত সব জাতীয় ও বিশেষ দিবস স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে যাচ্ছেন তারা। যদি কিন্ডারগার্টেন স্কুল না থাকত তবে সরকারকে আরও ৪০ হাজার স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হতো। ৪০ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সরকারকে বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করতে হতো। কিন্ডারগার্টেন স্কুল এ দেশে শিশু শিক্ষায় বিশাল অবদান রেখে চলছে। অথচ আজকে করোনাকালে তারা সবচেয়ে অসহায় ও অবহেলিত। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের দেখভাল করার দায়িত্ব তেমন পালন করছেন না। বর্তমান করোনাকালে তাদের খোঁজখবর রাখায় কেউ দৃশ্যমান নয়। করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী সর্বস্তরে তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমকি নন এমপিও কওমি মাদ্রাসাও বাদ পড়েনি। একমাত্র এখনো অন্তর্ভুক্ত হয়নি কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো কখনো সরকারের কাছে আর্থিক অনুদান বা সহযোগিতা দাবি করেনি। একটা বিষয় উপেক্ষিত নয় যে, করোনাভাইরাস স্বাভাবিক অবস্থায় না আনা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে এনে পাঠদান মোটেই কাম্য নয়। তবে দীর্ঘ সময় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থকলে যাতে শিক্ষক-কর্মচারী, প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব বিপন্ন না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি। দেশের শিশুশিক্ষা বিপন্ন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এবং এ দেশের শিশুশিক্ষায় বিশাল অবদানের জন্য তার সুদৃষ্টির বিকল্প নেই। এই করোনা ক্রান্তিলগ্ন একশ্রেণির মানুষকে বানিয়ে দিয়েছে স্বার্থবাদী, অমানবিক। নিরাপদে থাকার অজুহাতে তারা বদ্ধ জানালার পর্দাটুকু নাড়িয়ে পর্যন্ত দেখে না! অথচ, শেওলাপড়া প্রাচীরের ওপারে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসমাজ আজ নিরণ্ন জীবনযাপন করছেন। কে রেখেছে কার খোঁজ! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক এখন রাজমিস্ত্রী! অথচ ভালোই চলছিল তার জীবন-জীবিকা। হঠাৎ করোনানামক ঝড় যেন তার সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে তার স্কুল সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে টিউশনি। স্কুলের পরিচালকের দুরবস্থা দেখে বিবেকের তাড়নায় মাসিক প্রাপ্য বেতন চাইতে পারছেন না, সম্মানের ভয়ে রাস্তায় লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণও নিতে পারছেন না, কাউকে কষ্টের কথা বলতেও পারছেন না, এই পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকেও কোনো সহায়তা পাননি, বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবারের আর্থিক কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে রাজমিস্ত্রীর জোগালির কাজ করছেন এই গুণী শিক্ষক। একজন শিক্ষকসমাজের বাতিঘর; তার কলমের ছোঁয়ায় আলোকিত হয় কোটি শিক্ষার্থীর জ্ঞানচক্ষু। অথচ, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া এই শিক্ষক পরিবারের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য আজ কলমের বদলে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন ছেনি-সিমেন্ট। গণমাধ্যমের সুবাদে আমরা জানতে পেরেছি, জীবন-জীবিকার চাকা ঘোরাতে শিক্ষক আজ অটোরিকশার প্যাডেল ঘোরাতেও বাধ্য হচ্ছেন। শিক্ষক সবার শ্রেষ্ঠ। জাতির বিবেক। মানুষ গড়ার কারিগর। অথচ, সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই জ্ঞানার্জনের পথ কখনোই মসৃণ ছিল না। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের (খ্রি.পূ. ৪৬৯-৩৯৯) সময় থেকেই জ্ঞান বা শিক্ষাপিপাসুদের হতে হয়েছে নানারকম বাধাবিপত্তির সম্মুখীন। কখনো কখনো রাজনৈতিক আন্দোলন কিংবা ষড়যন্ত্র আবার কখনো কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। আজ আমরা সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে উত্তরাধুনিক যুগে উপনীত হয়েছি এই শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তির কল্যাণে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিও আমাদের দাঁড় করিয়েছে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। সারা বিশ্বের এই অসহায়ত্ব অবস্থা এটাই ভাবায় যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আরও বাস্তবমুখী ও সময় উপযোগী হওয়া এখন সময়ের দাবি। চিলড্রেনস কমিশনার ফর ইংল্যান্ডের অ্যানি লংফিল্ড দাবি করেছেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশ্ব যা হারিয়েছে এটি পূরণ করতে অন্তত এক দশক লেগে যাবে। তিনি বলেন, বিশ্বযুদ্ধের সময়ও সব রাষ্ট্রে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান এতদিন বন্ধ থাকেনি। দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা তিনি বলেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় শিক্ষাঙ্গন সেপ্টেম্বরের পরে খুলতে পারে। অ্যানি লংফিল্ড বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অনেক প্রাণহানি ঘটলেও অনেক দেশে শিক্ষাঙ্গন এতদিন বন্ধ থাকেনি। যেসব দেশে যুদ্ধের আঁচড় লাগেনি সেসব দেশে শিক্ষাঙ্গন খোলা ছিল। এরকম প্রায় ৫১ দেশে মাত্র ২২ দিন পর স্কুলে শিক্ষাদান কার্যক্রম চালু ছিল। কিন্তু এবার কোভিট-১৯ সংক্রমণের ফলে সারা বিশ্বে মাসের পর মাস শিক্ষাঙ্গন বন্ধ। ইউনেস্কো এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ এর ফলে পারিবারিক অর্থসংকট, শিশুশ্রম, বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি, ঝরেপড়া, অপুষ্টিজনিত প্রতিবন্ধকতা ও বাল্যবিবাহের কারণে বিশ্বব্যাপী শিক্ষা খাতে বিগত দুই দশকে যে অগ্রগতি হয়েছে তা বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হবে। এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চাহিদা এবং অধিকারের কথা বিবেচনা করে মানবসম্পদ উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাবিষয়ক জটিলতা এড়াতে টেলিভিশনে ছেলেমেয়েদের ক্লাস নেওয়া শুরু হয়েছে। কোটি কোটি টাকার বাজেটে এসব রেকর্ডেড ক্লাসগুলোতে ভুল গণিত করানোর বিষয়টি নিয়েও হতাশ করেছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থী মহলকে। ছেলেমেয়েরা সেগুলো কতটুকু দেখার সুযোগ পাচ্ছে, তাদের কতটুকু লাভ হচ্ছে সেগুলো নিয়ে আলোচনাও চলছে ব্যাপকভাবে। কেউ কেউ আবার ই-লার্নিং পদ্ধতির কথাও তুলেছেন। একটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোনো স্থান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার প্রক্রিয়াকে ই-লার্নিং বলা হয়ে থাকে। ই-লার্নিংয়ের ৮০ শতাংশের বেশি পাঠ কার্যক্রম ইন্টারনেটনির্ভর। তাই একে 'ডিসট্যান্ট লার্নিং'ও বলা হয়। এতে গতানুগতিক ধারায় শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত থেকে পাঠদান কিংবা পাঠগ্রহণ করতে হয় না। অনেকেই হয়তো মতামত দেবেন, এই লার্নিং পদ্ধতির মাধ্যমে করোনাকে জয় করা যাবে! কিন্তু, বাস্তবিক সমস্যা হলো, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী তৃণমূল পর্যায়ে, যাদের অভিভাবক এখনো পর্যন্ত সন্তানকে স্কুল ড্রেস, জুতো, ব্যাগ, খাতা, কলমের জোগান দিতে অপারগ সেখানে কম্পিউটার, ল্যাপটপ এমনকি টেলিভিশনের ব্যবস্থা করা স্বপ্নের সোনার হরিণের মতোই। তাছাড়া বিদু্যৎ সমস্যাতো রয়েছেই। এ ছাড়া অনেক এলাকায় এখনো বিদু্যতের আলোই পৌঁছেনি। বলা হয়ে থাকে- মানব সক্ষমতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর বরাবরের মতোই এবারও শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বেশি দেখানোর জন্য অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের বাজেটকে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা ও প্রযুক্তি মিলিয়ে ৮৫,৭৬০ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট বাজেটের ১৫.১০% বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ মিলিয়ে মোট ৬৬, ৪০১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষা খাতে প্রকৃতপক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১১.৬৯ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় মাত্র ০.০১% বেশি। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি এবং জাতীয় প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় প্রকৃত অর্থে শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ কমে গেছে, যা করোনা ক্রান্তিলগ্নে অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক! একেকজন শিক্ষিত মানুষ একেকটি মূল্যবান রত্নের মতো। কেন না, তারা মানসম্পন্ন জীবনযাপনের মূল্য বোঝে। একটি দেশের একেকজন মানুষ মানবদেহের একেকটি কোষের মতো। প্রতিটি মানুষ যদি সুশিক্ষিত হয় তাহলে দেশ হবে অন্যরকম। সুশিক্ষিত মানুষ পরিবেশের মূল্য বোঝে, মানুষ ছাড়াও অন্যান্য জীব ও গাছের মূল্য বোঝে, নদী, নালা, খাল-বিলের মূল্য বোঝে। তাই একটি শিক্ষিত জাতি গঠনে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। এটাই হওয়া উচিত উন্নয়নের প্রাথমিক ভিত্তি। কিন্তু আমরা কী করছি? স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছি, পারমাণবিক বিদু্যৎ তৈরি করছি, মেট্রোরেল-ওভারব্রিজ নির্মাণে মনোযোগী হচ্ছি! আমরা সম্পূর্ণ অন্য দেশের টাকার ঋণে, অন্য দেশের কারিগরি সহযোগিতায় এবং অন্যদেশের বিজ্ঞানীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় এসব প্রজেক্টে ব্যয় করছি। অথচ যদি আগে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতাম তাহলে এর সুদূরপ্রসারী সুফল অনেক বেশি হতো। সুদূরপ্রসারী সুফল বোঝার জন্য আলোকিত নেতৃত্বের একটা অভাববোধ যেন সবসময় আমাদের মধ্যে হাহাকার তৈরি করে আসছে। এক ধরনের চাকচিক্যময় উন্নয়ননামক মরীচিকার পেছনে আমরা ছুটছি। অথচ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোই হলো উন্নত মানবসম্পদ তৈরির কারখানা, যা করোনার করাল আঘাতে চরম বিপর্যয়ে পতিত। এখন সময় এসেছে শিক্ষাব্যবস্থার হাল শক্ত হাতে ধরার। সে ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় উপবৃত্তি কার্যক্রম সম্প্রসারণ, প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা, আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার মতো এসব কার্যক্রম মিলিয়ে শিক্ষা খাতে নূ্যনতম ২০% বরাদ্দ দেওয়া সময়ের দাবি। সহজশর্তে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া, শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান, শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য রেশন কার্ডের ব্যবস্থা, সহজশর্তে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা, নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মিত দেখভাল করা, বিদ্যালয় অফিস খোলা রেখে লেখাপড়া বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া এখন মানবিক দাবি। শিক্ষকদের অভাব দুঃখ ও কষ্টের বর্ণনা করতে গিয়ে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর রচিত পাদটিকা গল্পের পন্ডিত মশাইর কথাগুলো স্মৃতিতে ভেসে ওঠে। পন্ডিত মশাই ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন, 'বল তো দেখি লাট সাহেবের কুকুরের পেছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয়, আর কুকুরটার যদি ৩টি ঠ্যাং হয় তবে প্রতি ঠ্যাঙের জন্য কত টাকা খরচ হয়?' ছাত্র আস্তে উত্তর দিল পঁচিশ টাকা। তারপর পন্ডিত মশাই বললেন, 'উত্তম প্রস্তাব। আমি ব্রাহ্মণী। গৃহে বৃদ্ধ মাতা, তিনকন্যা, বিধবা পিসি, দাসী একুনে আট জন। আমাদের সবার জীবনধারণের জন্য আমি মাসে পাই পঁচিশ টাকা। তাহলে বল দেখি, এই ব্রাহ্মণ পরিবার লাট সাহেবের কুকুরের কটা ঠ্যাঙের সমান।' একেকজন শিক্ষক সমাজ ও জাতির আলোকবর্তিকা। তারা কখনোই বেতনের অঙ্ক কষে জীবিকা নির্বাহ করেন না। তাদের ছোট-বড় বিচার করা অসম্মানের। তাই করোনা ক্রান্তিলগ্নে শিক্ষকদের পাশে সরকার দাঁড়াবে এই প্রত্যাশায় আমার মতো কোটি শিক্ষানুরাগীর। শান্তা ফারজানা : প্রতিষ্ঠাতা, সাউন্ডবাংলা স্কুল