কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

করোনায় দারিদ্র্য বেড়েছে

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে বহু দেশ থেকে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বাড়বে। করোনাভাইরাস সংকটের অর্থনৈতিক পরিণতি বিশ্বের ৬ কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় গত কয়েক দশকে শিশু স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও কোভিড-১৯ মহামারির আঘাতে এই অঞ্চলের লাখ লাখ পরিবার আবারও দারিদ্র্যে ডুবে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও। বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে দেশে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের কাতারে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বলে ধারণা করছে বিআইডিএস। এই পরিস্থিতিতে সরকার দারিদ্র্য হ্রাসের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, তা অর্জন করা সম্ভব হবে না। পাশাপাশি কোভিডের সময়ে শহরের শ্রমিকের আয় কমেছে ৮০ শতাংশ এবং গ্রামীণ শ্রমিকের আয় কমেছে ১০ শতাংশ। বুধবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) এক ওয়েবিনারে এই তথ্য জানানো হয়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব কাটাতে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি বা আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ লকডাউন অর্থনৈতিকভাবে টেকসই নয়। এতে যেমন দারিদ্র্যের হার বেড়েছে, অন্যদিকে কোভিডের আগেই যারা দরিদ্র ছিলেন, তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। \হদেশের সচেতন মানুষ ও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে এই ক্ষতি পূরণ করা যাবে না। বরাদ্দ বাড়িয়েও লাভ হবে না, কারণ এই ভাতা ও সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে ভুল মানুষ বাছাই করার প্রবণতা আছে এ দেশে। ফলে যাদের দরকার, তাদের অনেকেই তালিকায় ঢুকতেই পারেন না। এখানে বিশেষভাবে উলেস্নখ্য, সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন ভাতা বিতরণে অদরিদ্র ও সচ্ছল মানুষের সংখ্যা ৩০ শতাংশ, খাদ্য সহায়তার ক্ষেত্রে সেটা ৩২ শতাংশ, মাতৃত্বকালীন ভাতার ক্ষেত্রে ৪৪ শতাংশ, বৃত্তির ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ। হতাশার কথা হচ্ছে, কোভিডের অভিঘাতে দেশে দারিদ্র্য বিমোচনের হার কমে যাবে। এর ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাবে। পাশাপাশি সরকারকে আরও সমতাভিত্তিক মডেল অনুসরণ করতে হবে। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। সাময়িকভাবে প্রণোদনা দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। অবাক ব্যাপার, করোনায় যেমন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, পাশাপাশি দেশে বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, নানা সংকটের মধ্যেও দেশে বাড়ছে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব। বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩ হাজার ৮৩৯টি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য উঠে এসেছে। এর ফলে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য অনেক বেড়েছে। এই বৈষম্য যত তীব্র হবে তত দরিদ্রের সংখ্যা বাড়বে। সরকারের পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগই কেবল পারে দেশ থেকে দারিদ্র্য কমাতে।