প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন

কিট সংকট

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সারা বিশ্বেই করোনা পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে দেখা দিয়েছে। এই মহামারির প্রভাব পড়েছে সর্বত্র। এ ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশেও দ্রম্নত বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে যখন প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, তখন কিট স্বল্পতায় ব্যাহত হচ্ছে করোনা পরীক্ষা। দেশে কিটের অভাবে কয়েকটি ল্যাবরেটরিতে ইতোমধ্যে করোনা পরীক্ষা স্থগিত রাখতে হয়েছে বলেও জানা গেছে। সঙ্গত কারণেই কিট স্বল্পতার বিষয়টি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার এ ক্রান্তিকালে কিট সংকট ভীষণ উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কেননা এর কারণে যে শুধু আক্রান্তদের শনাক্ত করাই বিলম্বিত হচ্ছে তা নয়, আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠছেন কিনা তাও জানা যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, বিভিন্ন সময়েই বারবার টেস্ট করানোর বিষয়টিতে আলোচনায় এসেছে। আর দেশে যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে তখন যদি কিটের সংকট হয় তবে এই ভয়াবহ বাস্তবতাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেশের জনসংখ্যার বিচারে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষা করছে না। এখনো প্রতিদিন করোনা পরীক্ষা ১৭ হাজারের মধ্যে রয়েছে, যা কিনা অন্তত ২০ হাজার হওয়া উচিত। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া অপরিহার্য। তথ্য মতে জানা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ডওমিটারের হিসাবে বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ লোকের মধ্যে ৪ হাজার ২৯ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা ৮৯ হাজার ৩৫১ জন, ইতালিতে ৮৩ হাজার ৫৮৫ জন এবং ভারতে ৫ হাজার ৩২৯ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার প্রতি ২৫০ জনে একজনকে পরীক্ষা করতে পারছে। অথচ আলোচনায় আসছে যে, দেশে করোনা মহামারির প্রকৃৃত চিত্র তুলে ধরতে এ সংখ্যা খুবই নগণ্য। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, কিট স্বল্পতার কারণে নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলেছেন, অনেকে করোনা সন্দেহে হাসপাতালে নমুনা দিতে এলেও পর্যাপ্ত কিট মজুত না থাকায় সবার নমুনা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ তীব্র কিট সংকটের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে। এরপর কিছু কিট পেয়েছে। পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী দুই থানার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেছেন. হাসপাতালেও কিট সংকট হওয়ায় একজন ব্যক্তি বেসরকারিভাবে ১০০ কিট অনুদান দিয়েছেন, যা দিয়ে আপাতত কাজ চালানো হচ্ছে। এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিট স্বল্পতার বিষয়টি সামনে আসছে। এ ছাড়া আইইডিসিআরের তথ্যে জানা যায়, কিটের অভাবে জামালপুর ও ঢাকার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা বন্ধ আছে। আমরা বলতে চাই, কিটের অভাবে যদি করোনা পরীক্ষা বন্ধ থাকে তবে তা কতটা ভয়ানক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা আমলে নিতে হবে এবং যত দ্রম্নত সম্ভব এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এটা মনে রাখা সঙ্গত যে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মহামারিকালে দেশের বিপুল জনসংখ্যার বিপরীতে করোনা পরীক্ষার সক্ষমতা খুবই অপ্রতুল। এখন করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা প্রতিদিনই বাড়ানো উচিত। ফলে কিট স্বল্পতার সমাধানের পাশাপাশি পরীক্ষার ব্যবস্থা বাড়াতেও উদ্যোগী হতে হবে। আমরা মনে করি, কিট সংকটের বিষয়টি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনিভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সচেতনতা এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নও অপরিহার্য। তা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হবে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। ভুলে যাওয়া যাবে না, দেশে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা। ফলে কিট সংকট সমাধানসহ জোনভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্তের যেমন যথার্থ বাস্তবায়ন জরুরি তেমনি এটাও মনে রাখা দরকার, প্রত্যেকের সচেতনতা ছাড়া এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে না। সঙ্গত কারণেই সামাজিক দূরত্ব, বিচ্ছিন্নতাসহ প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকুক এমনটি কাম্য।