করোনার ছোবলে বিপর্যস্ত দেশের শিক্ষা খাত

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে অধ্যয়ন করছে সাড়ে ২৪ লাখ শিক্ষার্থী। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে প্রায় পৌনে চার লাখ শিক্ষার্থী। করোনাকালে শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোকে অনলাইনে ক্লাস শুরুর তাগিদ দিয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর সরকারি কলেজগুলোতে অনলাইনে ক্লাস শুরুর নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু বড় কিছু সরকারি কলেজ ছাড়া অন্যরা অনলাইনে ক্লাস শুরু করতে পারেনি। কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগ অনলাইনে শতভাগ শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই হচ্ছে সার্বিক পরিস্থিতি।

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২০, ০০:০০

আর কে চৌধুরী
করোনার ছোবলে বিপর্যস্ত দেশের শিক্ষা খাত। চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্থগিত হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। করোনা মহামারিতে প্রকট হচ্ছে সেশনজটের আশঙ্কা। পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। সংকট সমাধানে অনলাইন ক্লাসের ব্যাপ্তি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৬ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এর ফলে পিছিয়ে যায় এইচএসসি পরীক্ষাও। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় দেখা দিচ্ছে সেশনজটের আশঙ্কা। শিক্ষা কার্যক্রম যাতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সে আশঙ্কা থেকে প্রথমে মাধ্যমিক স্কুলের জন্য সংসদ টিভিতে ক্লাস পরিচালনা শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে শুরু হয় প্রাথমিকের ক্লাস। করোনার প্রভাবে শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকরাও বিপাকে পড়েছেন। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেসরকারি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিও বন্ধ। কারিগরি শিক্ষার প্রসারে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে ৫৫৩টি বেসরকারি পলিটেকনিক গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠান শুধু শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের বেতন-ভাতার সংস্থান হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণের এ সময়ে স্বাভাবিক পড়াশোনায় বেশ সমস্যা হচ্ছে। সে সমস্যা কিছুটা লাঘব করতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ সংসদ টেলিভিশনে প্রচার করা হচ্ছে। কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুল অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে বা পাঠ দিচ্ছে। তবে সেটা শ্রেণিকক্ষে পাঠের যথাযথ বিকল্প নয়। অনলাইনে বা টিভি সম্প্রচারে শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট রাখা হয়তো সম্ভব হচ্ছে; কিন্তু করোনাকালে শিক্ষা কার্যক্রম যে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে তা অস্বীকার করা যায় না। উচ্চশিক্ষার ৩২ লাখ শিক্ষার্থীর ২৮ লাখই এখনো পড়ালেখার বাইরে। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের সেশনজটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ১৭ মার্চ থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত এ ছুটি বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পোষাতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ৬ আগস্টের পরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা তেমন নেই। ফলে ছুটি আরো বাড়তে পারে। এর ফলে বড় রকমের সেশনজটজনিত সমস্যায় পড়তে হবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। বর্তমানে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা করছে প্রায় ৩২ লাখ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় তিন লাখ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে অধ্যয়ন করছে সাড়ে ২৪ লাখ শিক্ষার্থী। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে প্রায় পৌনে চার লাখ শিক্ষার্থী। করোনাকালে শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোকে অনলাইনে ক্লাস শুরুর তাগিদ দিয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর সরকারি কলেজগুলোতে অনলাইনে ক্লাস শুরুর নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু বড় কিছু সরকারি কলেজ ছাড়া অন্যরা অনলাইনে ক্লাস শুরু করতে পারেনি। কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগ অনলাইনে শতভাগ শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই হচ্ছে সার্বিক পরিস্থিতি। সময় গড়াচ্ছে, বিকল্প ভাবনা ভাবতে হবে বৈকি। কিছু বাস্তব সমস্যা অবশ্যই আছে, যেমন বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর গ্রামে-মফস্বলে অবস্থান করা, অনলাইন ক্লাসের সামগ্রীর সংকট, ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য, কিছু শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন না থাকা প্রভৃতি। সরকারের যে বাস্তব এবং ইন্টারনেট অবকাঠামো রয়েছে তাতে এখন আর এ সমস্যা থাকার কথা নয়; বরং বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনলাইনে ক্লাস নিতে অনীহা এবং ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা। শিক্ষাঙ্গনকে সেশনজটের সমস্যা থেকে রক্ষার জন্য শিক্ষা বিভাগকে তৎপর হতে হবে; সরকারি অবকাঠামো ব্যবহার করে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পুরোদমে চালাতে হবে। অবস্থা বুঝে উপায় অবশ্যই বের করতে হবে। আমি মনে করি, সামনে এইচএসসিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। ভর্তির ক্ষেত্রে নিজ এলাকার প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যাতে করোনারকালীন শিক্ষার্থীরা ঝামেলাবিহীন প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে। আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ