পাঠক মত

ছাত্ররাজনীতিতে সুদিন আসবে কবে?

প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

রাবাত রেজা খান শিক্ষাথীর্, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে মিশে আছে ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস। বাঙালির প্রত্যেকটি স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল বাংলার ছাত্র সমাজ। কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেনি বাংলার দামাল ছেলেরা। তাই যুগে যুগে ছাত্র রাজনীতির বন্দনা করা হয় সহস্রবার। কিন্তু এখনকার ছাত্র রাজনীতিতে আমরা কি দেখছি? খুব সহজেই বোঝা যায় বতর্মানের ছাত্র রাজনীতি আর অতীতের ছাত্র রাজনীতির মধ্যে বিস্তর ফারাক। ছাত্র রাজনীতির সোনালি দিনগুলির ইতিহাস, ইতিহাসের পাতায় আছে বতর্মানে এর ছিটেফেঁাটাও অবশিষ্ট নেই। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নিবার্চন, ৬২ এর কুখ্যাত শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৬৬ এর ঐতিহাসিক ৬ দফা, ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান, ৭০-এর সাধারণ নিবার্চন, ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজ ও ছাত্র রাজনীতির ছিলো গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। বিশেষ করে ভাষা আন্দোলনের সবর্দলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন অতীতের ছাত্র রাজনীতির বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহাবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানে ছাত্র সমাজ অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলার ছাত্র সমাজ গজের্ উঠেছিল। হাজার হাজার ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল। তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সাবের্ভৗম বাংলাদেশ। ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল ছাত্ররা। তাই অতীতের ছাত্র রাজনীতির আছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। মানুষের কাছে ছাত্র রাজনীতির আলাদা একটা গ্রহণযোগ্যতা ছিল। বতর্মানে ছাত্র রাজনীতি আর আগের মতো নেই। জনগণ এখন ছাত্র রাজনীতি কে আগের মত দেখে না। মানুষের কাছে ছাত্র রাজনীতি এখন একটা ভীত হওয়ার মত বিষয়। বতর্মানে ছাত্র রাজনীতি মানে আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি। কে কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে এটাই মুখ্য চচার্র বিষয়। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো সহাবস্থান নেই। ছাত্র রাজনীতি যারা করছে , সাধারণ মানুষ তাদের আদশর্হীন, চঁাদাবাজ, অস্ত্রবাজ, অথের্লাভী, মাস্তান গুন্ডা ইত্যাদি ভাবতে শুরু করেছে। কেন এমন হচ্ছে? অতীতের ছাত্র রাজনীতির হাতিয়ার ছিল মেধা, বইখাতা, কাগজ কলম, আদশর্, সততা, নৈতিকতা ইত্যাদি। ছাত্র নেতারা সৎ ছিলেন। দেশ ও স্বাধিকার আন্দোলনে তারা ছিলেন সোচ্চার। ভিন্ন ভিন্ন মতাদশের্র অনুসারী হলেও সবার মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছিল। মারামারি, চঁাদাবাজি, টেন্ডারবাজি ছিল না। এখন কলমের বদলে হাতে উঠেছে রড, পিস্তল, আগ্নেয়াস্ত্র। চঁাদাবাজি চলছে দেদার। অনেক ছাত্র নেতা মাদক বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছে। বতর্মানে এমন অবস্থা হয়েছে যে ছাত্র নেতা হতে হলে পড়াশোনা বাদ দিতে হবে। ছাত্র নেতারা পড়াশোনা বাদ দিয়ে শুধু ছাত্রত্ব ধরে রাখার জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। বিভিন্ন গ্রæপ, উপগ্রæপ সৃষ্টি হচ্ছে। টেন্ডারবাজি, চঁাদাবাজি অহরহ ঘটছে। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে নিজ ছাত্র সংগঠনের নেতাকমীর্রারা নিজেরা মারামারি করছে। ছাত্র রাজনীতিতে এখন কোন্দল, গ্রæপিং নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন সেই সরকারের ছাত্র সংগঠনগুলো আধিপত্য বিস্তার করে। সাধারণ শিক্ষাথীের্দর অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্র সংগঠনগুলো আর কাজ করে না। সাধারণ শিক্ষাথীর্রা ছাত্র রাজনীতি কে ঘৃণা করতে শুরু করেছে। মেধাবীরা আর ছাত্র রাজনীতি তে আসছে না। সৎ ও নৈতিকতা গুণসম্পন্ন ছাত্র নেতা তৈরি করতে হলে মেধাবীদের ছাত্র রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে। ডাকসু সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ নিবার্চনের ব্যবস্থা করতে হবে। মারামারি, টেন্ডারবাজি বাদ দিয়ে ফিরে যেতে হবে পড়াশোনায়। আদশর্, চরিত্র, সততা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, সম্পকর্ ও শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। তাহলেই ছাত্র রাজনীতির সোনালি সুদিন ফিরে আসবে। দেশ পাবে সৎ ও যোগ্য ছাত্র নেতা।