পাঠক-মত

প্রকৃতি বনাম মানব লড়াই

প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্কটা মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই। তবে প্রকৃতির বনাম মানুষের লড়াইটা শুরু হয়েছিল তখনই, যখন মানুষ গাছ কেটে ঘর বাড়ি; পাহাড় কেটে রাস্তা; কিংবা নদীতে বাঁধ বানিয়ে নতুন নতুন সভ্যতার সূচনা করেছিল। তবে সে লড়াইটা ছিল টিকে থাকার লড়াই; বেঁচে থাকার লড়াই। তাই হয়তো নির্মল ধরিত্রীও তা মেনে নিয়েছিল কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া ছাড়াই। এটা তখনই সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে, যখন মানুষ বনাঞ্চল উজাড় করে; শিল্প-কারখানা ও বিদু্যৎকেন্দ্রের নামে কয়লা পুড়িয়ে বায়ুমন্ডলে কার্বনের অদৃশ্য ছাদ তৈরি করেছে। তাই ধরিত্রীও হিমালয় কিংবা আটলান্টিকের বরফ গলিয়ে তার প্রতিশোধ নিচ্ছে বরাবর। কেননা ধরিত্রীও তো আর সর্বংসহা নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল নিয়ে নিয়ে বহুবছর ধরে আলোচনা চললেও এবছর এর চরম প্রভাব লক্ষ্য করেছে বিশ্ব। কুয়েতের তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এমনকি শীতপ্রধান ইউরোপের দেশ ফ্রান্সেও গত পহেলা জুলাই তাপমাত্রা ছিল ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস; চালু করা হয়েছিল রেড অ্যালার্ট। এ তো হলো ভিনদেশের খবর। খোদ বাংলাদেশের তাপমাত্রাও এবছর আগের সব রেকর্ড ভেঙে পৌঁছে গেছে ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। 'পৃথিবীর গতিশীল উষ্ণায়নের ফলে আটলান্টিকের বরফ গলে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়বে; সমুদ্র তটবর্তী শহরগুলো ডুবে যাবে; এবং গ্রীষ্মকালে তাপদাহ প্রচন্ডরকম বাড়বে।' এমন সব আশঙ্কার কথা তারা তখনই জানিয়েছিল; বলেছিল এর কারণ এবং সমাধানের কথাও। গবেষকরা গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ এবং বন উজাড়করণকেই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রধান কারণ হিসেবে উলেস্নখ করেছিল। একবিংশ শতাব্দীতে এসে শিল্প-কারখানা ও বিদু্যৎকেন্দ্রের নামে কার্বন নিঃসরণ এবং বন উজাড়করণ বেড়ে চলছে জ্যামিতিক হারে। উন্নত দেশগুলোর এ নিয়ে মাথাব্যথা না থাকাটাই স্বাভাবিক। কেননা এর সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক বিষয়টি জড়িত। পুরো বিশ্বকে ডুবিয়ে হলেও তারা তাদের অর্থনৈতিক লাভটাকেই বেছে নেবে। তবে বাংলাদেশের মতো ভুক্তভোগী দেশকে এ বিষয়ে ভাবতেই হবে। কেননা বিশ্ব জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০১৮ অনুযায়ী বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তাই এ অবস্থায় সরকারের বনভূমি রক্ষায় জোরালো ভূমিকা রাখা দরকার। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের ৭০% বনভূমি নিধন হয় সরকারি নানান প্রকল্প এবং অনুমোদন নিয়ে। ফলে বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ কমতে কমতে ১১.২% নেমেছে। জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী যা কিনা ২৫% থাকা দরকার। এমন পরিস্থিতিতেও সরকার বনাঞ্চল বিধ্বংসী নতুন নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী আমাদেরই রেখে যেতে হবে। খায়রুল আহসান মারজান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়