পাঠক-মত

ধর্ষিতা এবং আমাদের সমাজ বাস্তবতা

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে ধর্ষণ একটি নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পত্রিকার পাতা খুললে কখনো কখনো গণধর্ষণ নামক পাশবিকতার চিত্রও কম দেখি না। আবার কখনো নির্মম এই দৃশ্য দেখেও দর্শকের ভূমিকা পালন করে এ থেকে আমোদ খুঁজে নেয়া মানুষও এ সমাজে রয়েছে। ধর্ষণকে মানুষের কাছে দর্শন উপযোগী করার জন্য ভিডিও ধারণ করে ওই মেয়েটিকে সারা জীবনের জন্য সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার মতো উন্মাদের অভাবও সমাজে নেই। কিন্তু একটি মেয়ে ধর্ষিতা হলে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে যে সুবিচার পাওয়া উচিত তার কতটুকু পাচ্ছে সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। প্রতিদিন দেশের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু আমরা সামাজিকভাবে কয়জন ধর্ষককে বয়কট করতে পেরেছি? আমরা শুধু পেরেছি ধর্ষিতার পেছনে পড়ে তার জীবনের অতীত ইতিহাসের খেরোখাতা থেকে কাজের অকাজের কিছু তথ্য বের করে ধর্ষিত হওয়ার জন্য সমানভাবে নারীকে দায় দিয়ে হেনস্তা করতে। যাতে দিন শেষে নিজে ধর্ষিত হওয়ার পেছনে নিজেকেই দোষ কাঁধে নিয়ে আত্মহত্যার মতো নির্মম মৃতু্যর স্বাদ গ্রহণ করতে অনেকে বাধ্য হয়। অথচ ধর্ষক তখনও বুক ফুলিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় এবং কারও কারও পাশবিক বাহ্বার ফুলঝুরিতে অভিষিক্তও হয়। একটি ধর্ষণের পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। কিন্তু অপরাধ তো অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হওয়া উচিত। হাজারটা ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে শতজনকেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে আমরা দেখতে পাই না, যেখানে হাজারটা মামলা দিনের পর দিন ঝুলে থেকে একসময় তা বিস্মৃতির অন্তরালে চলে যায় সেখানে বিচারব্যবস্থার নাজেহাল অবস্থাকেই আমাদের মলিন মুখে মেনে নিতে হচ্ছে দিনের পর দিন। একটি মেয়ে যখন ধর্ষণের শিকার হয় তখন থেকেই তার জীবনে সূচনা হয় দুর্বিষহ যন্ত্রণার অধ্যায়। যা তার পুরো জীবনকেই তছনছ করে দেয়। সমাজের মানুষের কটূক্তি সহ্য করা, নিজের ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়া, এমনকি পরিবার থেকেও প্রয়োজনীয় মানসিক সহায়তা না পাওয়া যে কত বড় যন্ত্রণার তা সে করুন তিক্ততায় উপলব্ধি করতে থাকে। স্বপ্ন ভরা জীবনের শুরু হয়েও যেন হঠাৎ করেই থমকে যায়। সমাজের সুশীল বলে পরিচিত ব্যক্তিরাও ধর্ষিতার হয়ে কিছু করে সম্মানিত বোধ করেন না। নিজের করুন এই দিনগুলোতে ভিতরের কথাগুলো অকপটে শুনতে পারে এমন সঙ্গ দেয়ার মতোও তার কেউ থাকে না। ফলে দেখে মানুষ মনে হলেও ভিতরে ভিতরে দিন দিন তারা মরা লাশে পরিণত হয়। অন্যদিকে একজন ধর্ষককে কখনই এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। সামাজিকভাবে ধর্ষণের শিকার নারীদের প্রতি মানবিক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে হবে। যাতে তারা তাদের পেছনের তিক্ত অভিজ্ঞতা খুব সহজে ভুলে যেতে সক্ষম হয়। তাহলেই বোধ করি একজন ধর্ষিতা সুবিচার পাবে। ফরহাদ আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়