কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে

পোশাক রপ্তানি আয়ে ধস

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পুরো বিশ্বই করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে ঘিরে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, দেশেও ক্রমাগত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। আর করোনাকালে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রত্যেকটি খাত। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে গত দশকের যে কোনো সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় উলেস্নখযোগ্য হারে কমেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনের প্রশ্নে রপ্তানি আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে দেশের প্রধান রপ্তানি খাতের আয়ে যদি ধস নামে তবে তা কতটা উদ্বেগের সেটা আমলে নেওয়া অপরিহার্য। প্রসঙ্গত, তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা মনে করছেন, করোনা বিস্তারের আগেই কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও মুদ্রার বিনিময় হারের অবমূল্যায়নের কারণে রপ্তানি সূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল। এমন সময়ে করোনার আঘাত শিল্পটিকে কঠিন এবং দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তথ্য মতে, রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, বিদায়ী অর্থবছরের পোশাকের রপ্তানি ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২৭ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমকি ৬ বিলিয়ন ডলার কম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে এ খাতটি। ৬ দশমকি ৬ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বছরের প্রথমার্ধে এবং বাকি ৫.৬ বিলিয়ন কমেছে। আমরা বলতে চাই, যখন শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে কারখানাগুলোতে তাদের সামর্থ্যের ৫৫ শতাংশের সমান অর্ডার আছে, যা বছরের শেষের দিকে অর্থাৎ ডিসেম্বরে কিছুটা বাড়তে পারে। আর ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে আশা করা যায় যে নিয়মিত রপ্তানির ৮০ শতাংশই ফিরে আসতে পারে- তখন এটি আশাব্যঞ্জক। তদুপরি রপ্তানি আয়ে যে ধস নামার বিষয়টি সামনে আসছে, তা আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। মনে রাখা দরকার, চলমান ভাইরাস পরিস্থিতিতে উদ্বেগগুলো এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরাও। তাদের মতে, অধিকাংশ কারখানা এখনো নগদ অর্থের প্রবাহ এবং মূলধন নিয়ে লড়াই করছে। ফলে চলমান সংকট থেকে উত্তরণ বেশ কঠিন হবে। বলা দরকার, মার্চের পর থেকে ১৭৯টি কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে আরও অনেকই ট্রেইলটি অনুসরণ করতে পারে বলেও ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। সঙ্গত কারণেই দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের এই খাতের সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। লক্ষণীয় যে, রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো, শুল্ক ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে আয় ছিল ২.১২ বিলিয়ন ডলার। তবে এক বছরের আগের জুনের তুলনায় যা ১১.৪৩ শতাংশ কম কিন্তু গত মে মাসের তুলনায় ৭২.৪ শতাংশ বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া দরকার, খাতটি এ বছরের এপ্রিলে শিপমেন্টের জটিলতায় পড়েছিল। ফলে ৪০ বছর আগে শুরু হওয়া পোশাক রপ্তানি থেকে উপার্জন দাঁড়ায় ০.৩৭ বিলিয়ন ডলারে। যা এই শিল্পের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। আমরা বলতে চাই, বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে কার্যত থমকে গেছে পুরো বিশ্বই। ব্যাহত হয়েছে মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা। আর এমনটিও সামনে এসেছে, মহামারির প্রভাবে মার্চ থেকেই পশ্চিমা বিশ্বে টানা লকডাউনে বিভিন্ন ব্রান্ডসহ সংশ্লিষ্ট মার্কেট বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। পাশাপাশি বন্ধ ছিল বাংলাদেশে কারখানাগুলোও। যদিও ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতারা মে থেকে তাদের দোকানগুলো পুনরায় চালু করা শুরু করলেও দেশের করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় সংকটে পড়ে দেশীয় কারখানাগুলো। অর্ডার বাতিলসহ কর্মীদের বেতন-বোনাসের হিসাব সংকট আরও জটিল হয়। ফলে স্থানীয় কারখানায় পোশাকের অর্থপ্রবাহ এবং উৎপাদন অনেকটাই মন্থর হয়ে যায় বলেও জানা যায়। আমরা বলতে চাই- সৃষ্ট সংকটকে সামগ্রিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পোশাক খাতে যে পরিস্থিতি নেমে এসেছে, তা সার্বিকভাবে বিবেচনায় নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখবে এমনটি কাম্য।