বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক খাতে আমানত কমছে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে

নতুনধারা
  ০৭ জুলাই ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাস সারা বিশ্বকেই এক ভয়ানক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা যেমন ব্যাহত হয়ে পড়েছে, তেমনি প্রত্যেকটি খাতেই নেমে এসেছে বিপর্যয়। দেশেও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এমতাবস্থায় সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে জানা গেল, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষজন ব্যাংকে সঞ্চয় করা কমিয়ে দিয়েছেন। বেশির ভাগ মানুষ নগদ অর্থ হাতে রাখতে শুরু করেছেন। তথ্য মতে, চলতি বছরের এপ্রিল শেষে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা দরকার. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বড় অঙ্কের আমানত কমেছে ব্যাংক খাতে। এপ্রিল শেষে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। অথচ জানুয়ারি শেষেও আমানতের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। প্রতি মাসে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের গড় প্রবৃদ্ধি হয় ১০ শতাংশ হারে।

আমরা বলতে চাই, করোনা পরিস্থিতি যেন সব কিছুর ওপরই প্রভাব বিস্তার শুরু করেছে ভয়ানকভাবে। তবু এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। বড় অঙ্কের আমানত কমেছে ব্যাংক খাতে- এই বিষয়টি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বলা দরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, এপ্রিল শেষে দেশের ব্যাংকব্যবস্থার বাইরে মানে জনগণের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময় মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা বা ২৩ শতাংশের বেশি। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, হিসাব বলছে, সরকারের সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে ৭৫ শতাংশের মতো। সুদের হার বেশি হওয়ার কারণে ব্যক্তিগত বিনিয়োগের বড় আস্থার নাম সঞ্চয়পত্র। পরিবার, পেনশনারসহ দশটিরও বেশি স্কিমে আমানত রাখা যায় সঞ্চয়পত্রে। জানা যাচ্ছে, চলতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। ফেব্রম্নয়ারিতে ১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা, মার্চে ১ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা, এপ্রিলে ৬২১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। আগের বছরের (২০১৮-১৯) একই সময় বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে ৭৫ শতাংশের মতো।

আমরা মনে করি, সঞ্চয় কমেছে এই বিষয়টি আমলে নেওয়া জরুরি। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, সার্বিকভাবে সঞ্চয় কমে গেছে। আয় কমা এবং বেকারত্ব বাড়ার ফলে ব্যক্তিগত সঞ্চয় কমেছে। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো না চলায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও সঞ্চয় কমেছে। এ ছাড়া সঞ্চয় কমার আরও একটি কারণ হলো নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ অনিয়শ্চতা। চলমান করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে শুধু সরকারের সঞ্চয়পত্রে নয়, এই সময় ব্যাংকে টান পড়েছে আমানতেরও। ফলে এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, অনেক মানুষের চাকরি চলে গেছে অথবা বেতন কমে গেছে। আর তা না হলে বেতন পেতে দেরি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মানুষের সঞ্চয়ের ওপরই চাপটা পড়েছে বলে যে বিষয়টি সামনে আসছে সেটাও বিবেচ্য।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক এই পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, তিন মাসে ৬৫ হাজার কোটি টাকার আমানতের পতন আমরা দেখতে পাচ্ছি, এটা কিন্তু শুভ লক্ষণ নয়। ফলে আমরাও মনে করি, ব্যাংকিং খাতের আমানত কমে গেলে অর্থনীতি ভালো থাকতে পারে না- এই বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং করণীয় নির্ধারণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। কেননা এতে ব্যাংকিং খাতের সামর্থ্য কমে যাচ্ছে ও ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে, যে বিষয়টি এড়ানো যাবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105017 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1