করোনার পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণা! কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সারা বিশ্বই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি। দেশেও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা। মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা থমকে গেছে। দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি আছে- এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। অর্থনীতিসহ নানা ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। আর এমতাবস্থায় যদি করোনা পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রতারণার ঘটনা ঘটে, তবে তা কতটা ঘৃণ্য ও ভয়ংকর বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ায় এবং মেয়াদপূর্তির পরও লাইসেন্স নবায়ন না করায় রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় মেডিকেল প্র্যাক্টিস, প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরি রেগুলেশন অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ওই হাসপাতালের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপরই গত মার্চে রিজেন্ট হাসপাতালকে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করেছিল সরকার। কিন্তু কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার জাল সনদ তৈরি ও বিক্রির অভিযোগ পেয়ে সোমবার উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রম্নপের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালায়র্ যাব। আর সেখানেই অনুমোদনহীন টেস্ট কিট ও বেশ কিছু ভুয়া রিপোর্ট পাওয়ার পর ওই হাসপাতাল ও রিজেন্টের কার্যালয় সিলগালা করে দেওয়া হয়। আমরা বলতে চাই, যেখানে সারা বিশ্বের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে করোনার কারণে। একের পর এক বাড়ছে লাশের সংখ্যা। সেই করোনা নিয়ে প্রতারণা করলে তা কতটা ঘৃণ্য হতে পারে সেটা বর্ণনাতীত। সঙ্গত কারণেই এ ঘটনা আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। মনে রাখা দরকার, শুধু রিজেন্ট হাসাপাতালই নয়, এর আগে বাসায় গিয়ে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ এবং সেই নমুনার কোনো পরীক্ষা ছাড়া একদিন পরেই পরীক্ষার ফল দেওয়া হতো। এমন অভিযোগ ওঠে জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার (জেকেজি হেলথকেয়ার) বিরুদ্ধে। করোনার উপসর্গ থাকা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া রিপোর্ট প্রদানকারী প্রতারকচক্রের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ছিলেন জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও। তখন অন্তত ৩৭ জনকে ভুয়া ফল দেওয়ার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিতও হয় পুলিশ। অধিকতর তদন্তের জন্য পাঁচটি ল্যাপটপ, দুটি ডেস্কটপ এবং করোনার নমুনা সংগ্রহের তিন হাজার কিট জব্দ করা হয়। আমরা বলতে চাই, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে পুরো বিশ্বই অসহায় হয়ে পড়ছে। এখন পর্যন্ত একে অপরের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি বারবার বলা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নমুনা পরীক্ষা নিশ্চিত করতে বলছে। এমন অবস্থায় যদি এই ধরনের কুচক্রীরা করোনাভাইরাসের পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণা করে, পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দেয় তবে তা কতটা ভয়ংকর পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে তা অনুধাবন করে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত বলা দরকার, রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান শেষের্ যাবের নির্বাহী হাকিম সারোয়ার আলম বলেছেন, রিজেন্ট হাসপাতাল যে পরিমাণ পরীক্ষা করিয়েছে, তার প্রায় ৩ গুণ বেশি নমুনা সংগ্রহ করলেও পরীক্ষা না করেই ইচ্ছামতো প্রতিবেদন দিয়েছে। এভাবে তারা ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, এরকম অপরাধের ক্ষেত্রে যেমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, তেমনিভাবে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর হতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, করোনার সুযোগ নিয়ে যারা বাণিজ্যে মেতে উঠছে- তাদের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অনুকম্পা প্রদর্শন নয়, বরং আইন মোতাবেক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ যেখানে অসহায় হয়ে পড়ছে, সেই অবস্থার সুযোগ নিয়ে যারা স্বার্থ আদায়ে মরিয়া তাদের ক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে এই ধরনের অপরাধমূলক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।