বিশ্ববিদ্যালয় নাকি কারিগরি শিক্ষার প্রসার, কোনটি বেশি প্রয়োজন?

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মান ও বেকারত্ব দুটো বিষয় নিয়ে আমাদের আসলেই ভাবতে হবে, যদিও ইউজিসি বলছে বেকারত্বের হার এবং শিক্ষার মানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের কোনো সম্পর্ক নেই।

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০২০, ০০:০০

মাছুম বিলস্নাহ
আমাদের দেশে ইতিমধ্যে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চলছে, আরও তিনটির অনুমোদন আছে কিন্তু এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এর মধ্যে নতুন আরও ৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাচ্ছে। এগুলো হচ্ছে নারায়ণগঞ্জে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, নাটোর সদর উপজেলায় ডক্টর ওয়াজেদ আলীর নামে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নাটোরের সিংড়া উপজেলায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের নির্বাচনী এলাকা মেহেরপুরে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে কি না এই মুহূর্তে। শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশে ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেগুলোরর মধ্যে অনেকগুলোই প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষার্থী পাচ্ছে না- এগুলো নিয়ে ভাবা উচিত, নাকি এগুলো একটি গ্রহণযোগ্য ও যুগোপযোগী কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার চিন্তা করা উচিত নাকি কৃষির আধুনিকায়ন বাদ দিয়ে, জনগণের চিকিৎসাসেবা বাদ দিয়ে, কারিগরি শিক্ষার প্রসারের কথা চিন্তা না করে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়াব? বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংকট থাকায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে সব জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে নাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বানাতে হবে? আমাদের বেহাল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাকে একটি শক্ত কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এসে মানসম্পন্ন ও বিশ্বমানের শিক্ষাদানের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে, নাকি আরও শিক্ষিত বেকার বানানোর কারখানা তৈরি করতে হবে? আমাদের বর্তমানের ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান, প্রকৃত গবেষণা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চিন্তা করতে হবে নাকি রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ে আরও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা জরুরি? চীনে সমাজতান্ত্রিক দল ক্ষমতায় আসার পর নাকি দেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছিল- কারণ তারা হিসাব করে দেখেছিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া গ্র্যাজুয়েটদের কর্মসংস্থান করা আসলেই বড় কঠিন কাজ। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের চেয়ে তারা কারিগরি শিক্ষার প্রতি জোর দিয়েছিল। কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রের কাছে চাকরির জন্য ধরনা দেবে না, রাষ্ট্রকে জিম্মি করবে না। আমি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার বিষয়টি একেবারেই সমর্থন করি না। শুধু উদাহরণ হিসেবে কথাটি বললাম। চীন কারিগরি ও প্রকৌশল বিদ্যায় কতটা এগিয়েছে সেটি আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের দেশে যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেগুলোর দিকে রাষ্ট্রীয় নজর ঠিকমতো দিলে আমরা বিশ্বমানের শিক্ষাদান করতে পারতাম। আমরা আমাদের চলতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে আসলেই যদি নজর দেই তাহলে সেগুলো বিশ্বমানের শিক্ষার্থী তৈরি করবে, গবেষক তৈরি করবে, রাজনৈতিক নেতা তৈরি করবে। এখন কী হচ্ছে? আমরা যদি বাংলার অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকাই তাহলে কী দেখতে পাই? দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে এসে কীভাবে সরকারি ছাত্র সংগঠনের কাছে কত অসহায় হয়ে পড়ে! হলে সিট নেই, ডাইনিংয়ে খাওয়া অত্যন্ত নিম্নমানের। তাকে ক্লাসে যেতে হবে তাই হলে থাকতে হবে। হলে থাকতে চাইলে ক্যাডারের আশ্রয় নিতে হয়। তারপরে ঠাঁই মেলে গণরুমে যেখানে পড়াশুনার পরিবেশ নেই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো অবস্থা নেই। এই অবস্থায় তার মন রাষ্ট্রের প্রতি শুধু বিদ্রোহীই হতে থাকে। তারপর তাদের ওপর চলে অকথ্য নির্যাতন বড় ভাইদের নির্দেশে। সারারাত জেগে পার্টির কাজ করতে হয়, চিকা মারতে হয়, মিটিং মিছিল ও অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনের মহড়ায় নামতে হয়। এগুলোর দিকে নজর দিলে, এখানে অর্থ ব্যয় করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে, গবেষণার পরিবেশ ফিরে আসবে। তরুণ ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা শুধু হলে থাকার জন্য, অর্থের জন্য আর ভবিষ্যৎ লাভের জন্য পার্টির স্স্নোগান দিয়ে বেরোবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোকে মাল্টিস্টোরাইড বিল্ডিংয়ের রূপান্তরিত করে শিক্ষার্থীদের থাকার সুবন্দোবস্ত করা উচিত। চীনের কথায় যদি আবার আসি, চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় সবই রাষ্ট্র পরিচালিত। কিছু কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে। পাবলিক প্রাইভেট সবগুলোই পুরোপুরো আবাসিক। এটি একটি চমৎকার ব্যবস্থা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া আলাদা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে থাকাই একটি বড় ধরনের শিক্ষা, যেটি বাসায় থাকলে আর মেসে থাকলে হয় না। চীন থেকে এ ব্যাপারে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। বাংলাদেশে একমাত্র জাহাঙ্গীরনগর ছাড়া অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি আবাসিক নয়। সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রথমে আবাসিক করতে হবে। তারপর অন্য চিন্তা। কারণ শিক্ষার্থীরা যদি সুন্দরভাবে হলেই না থাকতে পারে তাহলে তারা কীভাবে পড়াশোনায় মনোযোগ দেবে, গবেষণায় মনোযোগ দেবে, দেশের কাজে মনোযোগ দেবে? হলে সিট পাওয়া নিয়ে সারাজীবনে চলে রাজনীতি। এই রাজনীতি, ছাত্র রাজনীতির নামে অপখেলা চিরতরে বন্ধ করা উচিত। শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, সহমর্মিতা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি কীভাবে শেখানো যায়, তার চর্চা করতে হবে। বিটিভির ইত্যাদি অনুষ্ঠানে দেখলাম একজন বৃদ্ধ তার ছেলে সন্তান হারিয়েছেন, একটি ছেলে নাকি বিদেশে আছে সেও তার কোনো খোঁজখবর নিচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় বৃদ্ধ প্রায় অচল। তিনি আশ্রয় নিয়েছেন একটি ভা্যনে। সেখানে বিস্কুট, চকলেট বিক্রি করে দিনাতিপাত করেন। রাতের বেলা সেখানেই ঘুমান। সেই দৃশ্য চোখে পড়ে এক অশিক্ষিত রিকশাওয়ালার। সে তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিজের বাসায় নিয়ে গেছেন। নিজের পিতার মতো শ্রদ্ধা-ভক্তি করছেন, যত্ন নিচ্ছেন তার সীমিত উপার্জন দিয়ে। অবাক করার মতো যে, রিকশাওয়ালার স্ত্রীও তাকে নিজ শ্বশুরের মতো যত্ন করছেন। এই রিকশাওয়ালা তো কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েনি। আর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি সৃষ্টি করছি? নিজের রুমমেটকে, সিনিয়র ভাইদের হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানো, জীবনের তরে পঙ্গু করে দেয়া। আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছি। দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যিালয়। হলে সিট ছিল। নিজ সহপাঠীরা যারা তখন এরশাদ বাহিনীর ক্যাডার তাদের ভয়ে রাতের অন্ধকারে ঢাকায় চলে আসতে হয়েছিল। ঢাকা থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। নিজের রুমে থেকে পরীক্ষা দিতে পারিনি। এইতো শেখাচ্ছি আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসব শিক্ষার্থীরা যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তারা তখন সেই পার্টির ক্যাডার। কি শেখাচ্ছি আমরা? তাদেরই আমরা লালনপালন করি, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে অনেকেই কলম দিয়ে পুকুর চুরি করে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ কুক্ষিগত করে আর রাষ্ট্রের কোনো সেবা খাতে নিয়োগ পেলে জনগণের প্রভু হয়ে বসে, তাদের অধিকারকে বঞ্চিত করে। আমরা চারদিকে রাষ্ট্রীয় অনিয়ম, দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার দেখছি- এগুলো কারা করছেন? আমার দেশের ওই নিরীহ কৃষক কিংবা খেঁটে খাওয়া মানুষ তো এই কাজ করছেন না, বেশিরভাগ উচ্চশিক্ষিতরাই তো এই কাজগুলো করছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কী শেখাব, সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা কী পরিবর্তন নিয়ে বের হবে, রাষ্ট্রেরসেবা, জনগণেরসেবা তারা কীভাবে করবে। এই প্রশ্নগুলোর মীমাংসা হওয়া উচিত আগে, তারপরে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা বা চিন্তা করা উচিত বলে আমরা মনে করি। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু বিষয় পড়ানোর জায়গা নয়। বিশ্বমানবতা শেখানোর জায়গা। প্রকৃত গবেষণার জায়গা। গবেষণা তো নেই। গবেষণা কারা করবে? গবেষণার জায়গা দখল করেছে রাজনীতি, টেন্ডারবাজি আর লাল দল, নীল দল, সাদা দলে বিভক্ত শিক্ষকরা। কাজের জন্য গবেষণা নেই, গবেষণা আছে প্রমোশনের জন্য জোড়াতালি দিয়ে, কাটপেস্ট করে পাবলিকেশন। সেও অধিকাংশ 'প্রিডেটরি জার্নালে' পাবলিকেশন। এই গবেষণা দিয়ে না হয় কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাজ আর রাষ্ট্রীয় তো নয়ই। \হহাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করছে, সেগুলোতে মোটামুটি শিক্ষাদানের পরিবেশ রয়েছে কিন্তু অধিকাংশগুলোতেই তা নেই। কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় তো আমাদের দেশে একটি বাস্তবতা। রাষ্ট্র এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে পারে। এখানে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ হলে একদিকে যেমন জবাবদিহিতা সৃষ্টি হবে, যেটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই, অন্যদিকে এগুলোর অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, মানসম্মত শিক্ষাদানে তারা আরও বেশি উৎসাহিত হবে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে। উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের বিদেশে যেতে হবে না অনেককেই। পূর্বে যেমন ইউরোপসহ পার্শ্ববর্তী দেশে প্রচুর শিক্ষার্থী যেত, এখন সেই হার অনেকটাই কমে গেছে। বেঁচে যাচ্ছে অনেক রাষ্ট্রীয় অর্থ। আমরা সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে যদি ভালোমানের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে পারি সেটি হবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আর একটি হাতিয়ার। এজন্য প্রয়োজন সুস্থ পরিকল্পনা, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। এটি আমরা না করলে অন্যরা করে ফেলবে তখন আমাদের আর সুযোগ থাকবে না। কোচিং সেন্টার টাইপের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেগুলোকে একত্রিত করে এক একটি বড় মানের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যেতে পারে যেখানে সরকারি নির্দেশনা, উপদেশ ও উদ্যোগ প্রয়োজন। দেশে আবাদি জমির যে সংকট তার ওপর নিত্যনতুন আবাসন, কলকারখানা, বাজার, শহর, অফিস আদালত হচ্ছে- এগুলোর অধিকাংশই অপরিকল্পিত। জনসংখ্যা বাড়ছে অথচ আবাদি জমি কমছে। আমাদের যেন এদিকে কোন ভ্রম্নক্ষেপই নেই। এদিকে আবার ৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে জমির ওপর চাপ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করছি। ঢাকার শেরে বাংলানগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অনেক জায়গা পড়ে আছে। এটি একদিকে যেমন ঢাকা সিটিতে অন্যদিকে এটি হতে পারে একটি নন্দনতাত্মিক জায়গা, ফুলে-ফলে-শস্যে ভারা একটি বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পরে সবাই ঢাকায় চলে আসে চাকরি খোঁজার জন্য। ঢাকার প্রতি সবার আগ্রহ। আমরা যদি এখানে আরও হল বাড়িয়ে বিভাগের শিক্ষার্থীসংখ্যা বাড়িয়ে, বিভাগ বাড়িয়ে, প্রকৃত গবেষণার সুযোগ বাড়িয়ে এটিকে আরও বড় করি, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও বড় করি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়াই তাহলে তো নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার কোনো প্রয়োজনই নেই। বরং এই অর্থ আমরা সরাসরি কৃষি বিপস্নবে ব্যয় করতে পারি। ধানপেকে গেলে হঠাৎ বৃষ্টি কিংবা ঝড় কিংবা বন্যা হলে ধান কাটা যায় না, প্রতিবছর প্রচুর উৎপাদিত শস্য নষ্ট হয়। আমরা ধান কাটার মেশিন আমদানি করতে পারি। ধান লাগানোর ক্ষেত্রে ম্যানুয়ালি এটি করতে করতে প্রচুর বিলম্ব হয়, সিডড্রিল মেশিন ক্রয় করে গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারি। কৃষি গ্র্যাজুয়েট বানিয়ে তাদের আমরা চাকির দেব কোত্থেকে? তারা তো শুধু প্রথম শ্রেণির অফিসার হওয়ার জন্য বিসিএস পরীক্ষার দিকে তাকিয়ে থাকবে। \হদেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, এছাড়াও বেসরকারি ও ব্যক্তিপর্যায়ে রয়েছে আরও ৬৫ হাজারেরও বেশি। বেসরকারিগুলো বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যারা পাস করে তাদের টার্মিনাল কম্পিটেন্সি অর্জন করার কথা ছিল পুরোটাই- কারণ এখানে প্রশিক্ষিত শিক্ষক রয়েছেন, বিদ্যালয়ে ঘর ও আঙ্গিনা আছে, শিক্ষকদের চাকরি সরকারি কিন্তু শিক্ষার মানের একেবারেই বেহাল অবস্থা প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে, অন্য দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া। আর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা তো বেসরকারি পর্যায়েই চলছে। শিক্ষার্থীদের যে শ্রেণিতে যা পারার কথা, যে দক্ষতা অর্জন করার কথা তা অর্জিত হচ্ছে না প্রাথমিকে, মাধ্যমিকে। মাধ্যমিকের নন-এমপিও ও এমপিও শিক্ষকরা প্রায়ই আন্দোলন করছেন। তাদের দাবি মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করা হলে শিক্ষার মান বাড়বে। কিন্তু সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। একেতো অর্থনৈতিক সমস্যা; দ্বিতীয়ত, সরকারি হলে মান আরও কমে যেতে পারে; যে দশা হয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর। এই এক অমীমাংসিত অবস্থার মধ্যে চলছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা। এগুলোর মীমাংসা না করে শুধু উচ্চশিক্ষা বিস্তারের চিন্তা খুব একটি যৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে না। শিক্ষারভিত্তি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরকে দুর্বল রেখে উপরের স্তুর শক্ত করার চেষ্টা করলেও সেটি তো শক্ত হবে না। \হবিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মান ও বেকারত্ব দুটো বিষয় নিয়ে আমাদের আসলেই ভাবতে হবে, যদিও ইউজিসি বলছে বেকারত্বের হার এবং শিক্ষার মানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের কোনো সম্পর্ক নেই। মাছুম বিলস্নাহ : শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক