যথাযথ পদক্ষেপ নিন

আলুর দাম বৃদ্ধি

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ভাতের বিকল্প হিসেবে আলুর কথা এক সময় খুব ভাবা হতো। বলা হতো 'ভাতের পরিবর্তে আলু খান ভাতের ওপর চাপ কমান।' খাদ্যমান ও পুষ্টিগুণের দিক থেকে আলুর কদর অনেক বেশি। আলুতে প্রচুর পরিমাণে কার্বহাইড্রেট রয়েছে। আলুর সাহায্যে নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি হয়। তরকারিতে আলু একটি অপরিহার্য পণ্য। অথচ প্রতি বছরই আলু নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় দেশের কৃষকদের। অবাক ব্যাপার করোনাকালে সেই আলুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া গোল আলুর দাম নতুন করে আরও বেড়েছে। কোনো কোনো বাজারে আলুর কেজি ৩৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মাধ্যমে মাসের ব্যবধানে ৩০ শতাংশের উপরে এবং বছরের ব্যবধানে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে আলুর দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গোল আলু এমন একটি পণ্য যা সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার ডালজাতীয় পণ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এমনকি সব ধরনের মাছ, মাংস ও সবজি রান্নার ক্ষেত্রেও গোল আলু ব্যবহার হয়। ফলে সারা বছর গোল আলুর চাহিদা থাকে। কিন্তু বছরব্যাপী চাষ হয় না। গোল আলু এখন আর চাষিদের কাছে নেই। সব বড় বড় ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের কাছে চলে গেছে। এসব ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের ওপরই এখন গোল আলুর দাম নির্ভর করছে। তারা চাইলেই বাজারে সংকট তৈরি করতে পারেন। বাজারে এখন আলুর যে পরিমাণ চাহিদা আছে, সরবরাহ তার তুলনায় কম। এ কারণে দাম বাড়ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই কথার সঙ্গে একমত পোষণ করা যায় কিনা? উলেস্নখ্য, চলতি বছর দেশে ৪ দশমিক ৭১ লাখ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৯৬ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। যা আলুর উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৬৯-৭০ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল মাত্র ৮ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪ লাখ ৭১ হেক্টর জমিতে ৯২ দশমিক ৫৪ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন করা হয়েছিল। হিসাব অনুযায়ী দেখা যায়, দেশে স্বাধীনতার পরে আলু উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ গুণ। এ ছাড়া আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে সপ্তম। এ সাফল্য বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে আলু উৎপাদনকারী শীর্ষ দশ দেশের কাতারে। স্বীকৃতিটি দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। এ ধরনের সংবাদ আমাদের আশাবাদী করে তোলে। দেশে আলুর বাম্পার ফলন হলেও একদিকে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছে না অন্যদিকে ক্রেতারাও কম দামে আলু কিনতে পারছে না। এর সুফল ভোগ করছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। এটা উৎপাদন ও বিক্রিকেন্দ্রিক চিরাচরিত চিত্র। এই চিত্র বদলাতে হবে। মনে রাখতে হবে উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্যই কেবল নয়, আলু এখন দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসলও। অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও। কৃষকরা যাতে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। পাশাপাশি আলু যেহেতু পচনশীল পণ্য তাই পর্যাপ্ত হিমাগার তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি মূল্যও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।