নেশার নাম ধূমপান

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০২০, ০০:০০

রিফাত মাহদী শিক্ষার্থী, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পৃথিবীতে প্রচলিত সর্বাধিক মারাত্মক একটি নেশার নাম ধূমপান। এক সময় এটা বিলাসিতা, আভিজাত্য কিংবা স্মার্টনেস হিসেবে গণ্য হলেও বর্তমানে মরণঘাতী ভাইরাসরূপেই সর্বজনবিদিত। 'ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর', 'ধূমপান ক্যান্সারের কারণ' ধূমপানের কারণে স্ট্রোক হয়, ধূমপান মৃতু্য ঘটায় এই শিরোনামগুলো ছবিসহ মোড়কের পঞ্চাশ শতাংশ স্থানের উপর লেখা থাকলেও ধূমপায়ীদের কাছে এগুলো যেন শুধু ডায়লগ ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় দেখা গেছে ধূমপান এখন প্রায় আত্মহত্যারই শামিল। চিকিৎসাবিষয়ক জার্নাল দ্য ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ধূমপানের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনে একজন মারা যাচ্ছে। কোনো কোনো দেশ উচ্চ করারোপ, সিগারেটের মোড়কের ওপর সতর্কবার্তা এবং প্রচার কাজের মাধ্যমে ধূমপান আসক্তি কিছুটা কমাতে সক্ষম হলেও বাংলাদেশ, ফিলিপাইন্স ও ইন্দোনেশিয়ায় গত ২৫ বছরেও এর কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি। ধূমপান কিংবা সিগারেটে আসক্তির পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। পারিবারিক প্রভাব, ধূমপায়ী বন্ধু-বান্ধবের সংস্পর্শ, স্মার্টনেস বৃদ্ধি, হতাশা, অবসাদ কিংবা কৌতূহলবশতও অনেকে এই নেশায় জড়িয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কোনোভাবে যদি কেউ একবার ধূমপান করেছে তাদের অনেকেই পরবর্তীতে পুরাদস্তুর ধূমপায়ী হয়ে গেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে ধূমপানের প্রতি টানের সময় কয়েক সেকেন্ডের জন্য ফুসফুস অকেজো হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়- যদি কারোর শরীরে একই সঙ্গে ২০টি সিগারেটের নিকোটিন প্রবেশ করে তাহলে তার মৃতু্য অনিবার্য। তবে নিকোটিনের প্রভাব মানবদেহে খুব ধীরে ধীরে কাজ করে বলে প্রতিক্রিয়াও হয় ধীরে ধীরে। তাই মানুষ এর ক্ষতি বুঝতে পারে না। যক্ষ্ণা, ক্যান্সার, ব্রংকাইটিস রোগের মূল কারণ ধূমপান। এর কারণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রিক আলসারের মতো রোগও হয়। ধূমপানের কারণে পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। গর্ভবতী নারী ও গর্ভের শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হয়। শিশুকে প্রতিবন্ধী হয়েও জন্ম নিতে দেখা যায়। ধূমপানই মাদকসেবনের প্রবেশপথ। ধূমপায়ীরা ধূমপানে আসক্ত হয়ে একসময় আরও নতুন কিছু করতে চায়। প্রথমে সিগারেটে ঢুকিয়ে গাঁজা, পরে হেরোইন, কোকেন, ইয়াবা ইত্যাদির প্রতি আসক্ত হয়ে যায়। তা ছাড়া কয়েকজন ধূমপায়ী বন্ধুর মধ্যে দুই একজন মাদকসেবীও থাকে। এদের সংস্পর্শে অন্যরাও মাদকে জড়িয়ে যায়। যার ফলে শুধু তাদের ক্যারিয়ারই নয় জীবনও হুমকির মুখে পড়ে। শুধু ব্যক্তিগত জীবনেই নয়- পরিবারেও ধূমপান প্রভাব বিস্তার করে। বাবা-মায়ের কাছে দেখে সন্তানরাও এর প্রতি আকৃষ্ট হয়। জনজীবনও এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। যত্রতত্র ধূমপান অধূমপায়ীদের জন্যও স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ধূমপান পরিত্যাগে প্রয়োজন প্রবল ইচ্ছাশক্তি। ক্ষতির দিক বিবেচনায় মানুষ চাইলে এটা ত্যাগ করতে পারে। তাই অকালমৃতু্যর কথা চিন্তা করে হলেও আমরা ধূমপান থেকে বিরত থাকার প্রতিজ্ঞা করি। \হ