প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা

এ বর্বরতার শেষ কোথায়?

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আবারও প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, পূর্বশত্রম্নতার জেরে কুমিলস্না নগরের চাঙ্গিনী এলাকায় কয়েকশ মানুষের সামনে আক্তার হোসেন (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কুমিলস্না মহানগর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও কুমিলস্না সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন, তার ভাই ও পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় আক্তারকে বাঁচাতে গিয়ে আরও অন্তত ছয়জন আহত হন। এ ধরনের বর্বর ঘটনার নিন্দা জানাই। এটা সত্য সামাজিক অবক্ষয় দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করছে। এই অবক্ষয়ের কারণে নানাভাবে মানুষ হত্যার শিকার হচ্ছে। মানুষের অকাল মৃতু্য হচ্ছে। এই হত্যা কিংবা অকাল মৃতু্য রোধ করা যাচ্ছে না। মানুষ পথে, রাজপথে, খরায়, বন্যায় ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় গ্যাস বিস্ফোরণে মহামারিতে মারা যাচ্ছে। এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না আমাদের কোমলমতি শিশুরাও। বাংলাদেশে এখন আর স্বাভাবিক মৃতু্যর নিশ্চয়তা নেই। যাদের এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা রয়েছে তারা উদাসীন। কেউ করোনায় মারা যাচ্ছে, আবার কাউকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। কেউ মারা যাচ্ছে অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। মানুষকে বলা হয় সৃষ্টির সেরাজীব, আশরাফুল শাখলুকাত। বর্তমান সমাজের মানুষ মানবিকতা হারিয়ে যেভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, তাতে তাদের কী অভিধায় চিহ্নিত করা যেতে পারে। এ কোন সমাজে আমরা বসবাস করছি? এমন অপরাধপ্রবণ, অসহিষ্ণু ও অবক্ষয়গ্রস্ত সমাজ কি আমরা চেয়েছিলাম। হেন কোনো অপরাধ নেই, যা সমাজে সংঘটিত হচ্ছে না। স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী স্ত্রীকে, মা-বাবা নিজ সন্তানকে, ভাই ভাইকে অবলীলায় হত্যা করছে। প্রেমের কারণে অর্থ সম্পত্তির লোভে সমাজে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অন্যদিকে হতাশা, নিঃসঙ্গতা, বঞ্চনা, অবিশ্বাস আর অপ্রাপ্তিতে সমাজে আত্মহননের ঘটনাও বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকের অর্থ জোগাড় করতে না পেরে ছেলে খুন করছে বাবা-মাকে, স্বামী খুন করছে স্ত্রীকে কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে। অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য কিংবা কাউকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার নিমিত্তে নিজের সন্তানকে হত্যা পর্যন্ত করছে। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন, স্নেহ, ভালোবাসা, মায়া-মমতা, আত্মার টান সবই যেন আজ স্বার্থ আর লোভের কাছে তুচ্ছ। আসলে আমরা আজ যে সমাজে বাস করছি সে সমাজ আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। আমরা নানারকম সামাজিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছি। পা পিছলে ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছি। সমাজের একজন সুস্থ এবং বিবেকবান মানুষ হিসেবে এমন পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কি সামাজিক ক্ষেত্রে, কি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে- সর্বক্ষেত্রেই অবক্ষয় দেখতে পাচ্ছি, যা একজন শান্তিকামী মানুষ হিসেবে আমরা স্বাধীন ও একটি গণতান্ত্রিক দেশে কল্পনা করতে পারছি না। এ অবক্ষয় ইদানীং আরও প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। সামাজিক মূল্যবোধ তথা ধৈর্য, উদারতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃষ্টিশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ, পারস্পারিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি লোপ পাওয়ার কারণেই সামাজিক অবক্ষয় দেখা দেয়। যা বর্তমান সমাজে প্রকট। সামাজিক নিরাপত্তা আজ ভূলুণ্ঠিত। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, দেশের সামগ্রিক যে অবক্ষয়ের চিত্র এর থেকে পরিত্রাণের কোনো পথই কি আমাদের খোলা নেই? আমাদের অতীত বিস্মৃতির অতল গহ্বরে নিমজ্জিত, বর্তমান অনিশ্চিত এবং নিরাপত্তাহীনতার দোলাচলে দুলছে এবং ভবিষ্যৎ মনে হচ্ছে যেন পুরোপুরি অন্ধকার। যারা সমাজকে, রাষ্ট্রকে পদে পদে কলুষিত করছে, সমাজকে ভারসাম্যহীন ও দূষিত করে তুলছে, সমাজের মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার ক্ষুণ্ন করছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।