পাঠক মত

সীমান্ত হত্যা বন্ধে পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যে কতটা মধুর তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ভৌগোলিকভাবে তিন দিক দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে। গাণিতিক হিসাবে যার পরিমাণ ৪,১৫৬ কিলোমিটার (২,৫৮২ মাইল)। ব্যবসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি, খেলাধুলাসহ সার্বিকভাবেই আমাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ। আমরা কখনো চাই না যে কোনো ঠুনকো বিষয়ে আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাক। কিন্তু সম্প্রতি, পত্রিকা ও টেলিভিশনে প্রচারিত সীমান্তের খবরগুলো আমাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে; দুই দেশের সম্পর্কেও তা হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। গত ৪ জুলাই একটি পত্রিকার খবর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার তেলকুপি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে জাহাঙ্গীর নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। এবং তার আগের দিন বেনাপোলের ধান্যখোলা সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে রিয়াজুল নামে আরও একজন নিহত হন। গত মাসের ১৫ তারিখে একটি জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টালের খবর, নওগাঁর পোরশা নীতপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সুভাস রায় নামে এক রাখালের মৃতু্য হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমগুলোতে চোখ রাখলে প্রায়ই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যার খবর চোখে পড়ে। চলতি বছরের শুরুর দিকে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনাও বেশ উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিল। শোকাহত মনে কিছু প্রশ্নের উদয় হয়- এরকম হত্যা কি প্রতিনিয়ত ঘটেই যাবে? বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এত প্রাণহানি কেন? সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া আর বন্দুকের বুলেট বাংলাদেশিদের জীবন কি এভাবেই কেড়ে নেবে? খুব সাধারণভাবেই বলা চলে, এই হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো পারস্পরিক সম্পর্ককে নড়বড়ে করে দিতে পারে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হত্যা ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি ছিল (৩৫ জন)। কিন্তু চলতি বছরের দৃশ্য বলছে, এরকম চলতে থাকলে বিগত বছরের পরিসংখ্যান পালটে যেতে পারে। বন্ধুত্বের পরও দুই দেশের সীমান্তকে রক্তপাতমুক্ত করা যাচ্ছে না কিছুতেই। গত এক দশকে সীমান্তে ২৯৪ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। গত বছর সংসদে এমন তথ্য জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ২০০৯-১০ সালের চিত্র ছিল আরও ভয়াবহ। এসব হত্যাকান্ডের কোনো কৈফিয়তও পাওয়া যায়নি; আর বিচার পাওয়া তো চন্দ্র স্পর্শ করার মতোই নিছক কল্পনা। এ ছাড়া ২০১১ সালের ফেলানি হত্যার বিচার আজও পাওয়া হয়নি। বন্ধুত্ব রক্ষায় সীমান্তে হত্যা দ্রম্নতই কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য দ্বি-রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ একান্ত জরুরি। এবং সেই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে দুই দেশেরই আন্তরিক হতে হবে। একেকটা ঘটনার পর পতাকা বৈঠক, জরুরি সম্মেলন যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তের। বাংলাদেশের পক্ষে বুদ্ধিদীপ্ত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যাতে সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনা যায়। বিএসএফ এসব হত্যাকান্ডকে 'অনাকাঙ্ক্ষিত মৃতু্য' বলে আসছে। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃতু্যর হার এত বেশি হবে কেন? ভারতের পক্ষ থেকে সবসময়ই আমরা নমনীয় ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ কামনা করি। দুই দেশের মধ্য দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমানায় চোরাচালান ও বাংলাদেশ থেকে কথিত অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিতর্কিত 'শু্যট-অন-সাইট' (দেখামাত্র গুলি) নীতি বহাল আছে, যার প্রেক্ষিতে বিএসএফ কারণে কিংবা অকারণে গুলি করতে পারে। এই নীতিটি সীমান্ত হত্যার জন্য অনেকাংশে দায়ী। বাংলাদেশের নেতাদের সমীপে আবেদন থাকবে- ভারত যাতে এই আইন অবিলম্বে বাতিল করে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। অতীতে কয়েকটি বৈঠক ও আলোচনা হয়েছে কিন্তু সেগুলো সীমান্ত হত্যা হ্রাস করতে পারেনি। নানা সময়ে বিজিবি ও বিএসএফের শীর্ষ পর্যায়ের সম্মেলনে সীমান্তে 'নন-লিথ্যাল উইপন' (প্রাণঘাতী নয়) অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। ভারত-চীন সীমান্তে এই নীতি বহাল আছে। কোনো পক্ষই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারে না। এমন আইন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেও বহাল থাকলে সীমান্তে এত প্রাণহানি ঘটত না। গত বছরের ২৫-৩০ ডিসেম্বর ভারতে মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন হয়েছিল। সেখানে 'যৌথ আলোচনার দলিল' স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে নয়াদিলিস্নতে বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে মহাপরিচালক পর্যায়ে ৪৯তম সীমান্ত সমন্বয় সম্মেলনও হয়েছিল। সেই সম্মেলনেও বিএসএফের সঙ্গে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু সীমান্ত হত্যা আজও কমেনি। আইনবহির্ভূত কোনো কাজ হলে উভয়পক্ষের সদস্যরা আলোচনার মাধ্যমেই তা মীমাংসা করতে পারেন। কোনো চোরাচালানকারী, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়লে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করলে তারা উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারেন। কিন্তু কোনো বাছ-বিচার না করে দেখামাত্রই গুলি করে মেরে ফেলা বা ধরে নিয়ে বেধড়ক মারধর করা দুই দেশের সম্পর্ককে শীতল করতে পারে। তাই এই নীতি থেকে সরে আসতে হবে। সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্রম্নত পদক্ষেপ নিতে হবে। সাইফুল ইসলাম হাফিজ শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ