যৌক্তিক সমাধানে আসতে হবে

করোনাকালে শিক্ষার্থীদের বেতন

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। তারা মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত। অধিকাংশ স্কুল এখন অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করলেও তারা বেতন নিচ্ছে স্বাভাবিক সময়ের মতোই। অভিভাবক মহল থেকে অনলাইনে লেখাপড়ার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বাসায় স্মার্টফোন না থাকায় কিংবা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে স্কুল না খোলা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বেতন ৫০% কমানোর দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে বেশ কয়েকটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অভিভাবক। কারণ এর মধ্যে অনেক অভিভাবকের চাকরি চলে গেছে, কারও বেতন কমে গেছে আবার অনেক ব্যবসায়ীরা আছেন লোকসানের মধ্যে। এমন অবস্থায় তাদের পক্ষে স্কুলের অতিরিক্ত ফিস বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি স্কুলের অভিভাবক স্কুলের বেতন অর্ধেকে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল পরিচালনার কথা বলে পুরো ফি আদায়ে অটল অবস্থানে রয়েছে। আবার ছোটখাটো বেসরকারি স্কুলগুলোয় অনেক অভিভাবক বেতন দিতে না পারায় শিক্ষক ও কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। ঢাকার মোহাম্মদপুরে স্কুল বিক্রির নোটিসও টানানো হয়েছে। অনেক বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক বেতন না পেয়ে সংসার চালাতে না পেয়ে পেশা বদল করেছেন। যা অত্যন্ত হতাশাজনক চিত্র। \হকরোনাকালে দেশের বেসরকারি স্কুলগুলোয় এমন দুমুখী সংকট সৃষ্টি হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস মেলেনি। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, স্কুল ও অভিভাবক দুপক্ষকেই কিছুটা ছাড় দিয়ে মানবিক সমাধানে আসতে হবে। আমরা তার সঙ্গে সহমত পোষণ করছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বলছে ভবন ভাড়া, বিশেষ করে শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন চালিয়ে নেয়ার কারণে তাদের পক্ষে বেতন কমানো সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে স্কুল পরিচালনা করতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ছোটখাটো বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বড় ধরনের সংকটের মধ্যে আছে। এই স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী স্বল্পআয়ের পরিবার থেকে আসায় বেশিরভাগই বেতন পরিশোধ করতে পারছে না। আর এই কারণে মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না শিক্ষক ও কর্মচারীরা। এমন অবস্থায় স্কুলগুলোকে টিকিয়ে রাখতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। অভিভাবকদের অভিযোগ বেতন পরিশোধ না করায় অনেক স্কুল রেজাল্ট প্রকাশ না করাসহ নতুন ক্লাসে নাম তুলবে না বলে চাপ দিয়ে আসছে। এই প্রবণতাও শিক্ষাসহায়ক নয়। আমরা মনে করি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উভয় পক্ষকে একটি যৌক্তিক সমাধানে আসতে হবে। এই মহামারিকালে অনেক অভিভাবক যে বিপদে পড়েছেন, তারা বেতন দিতে অক্ষম এই বাস্তবতাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে উপলব্ধি করতে হবে। আবার অনেকেই রাজধানী ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। তারা ফিরবে কি না তার নিশ্চয়তাও নেই। সুতরাং এমন অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মানবিক হওয়াই যুক্তিসঙ্গত। বেতন কমিয়ে কীভাবে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করা যায় সে দিকেই অগ্রসর হওয়া উচিত।