করোনার সংক্রমণে বিপর্যস্ত বিশ্ব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সারা বিশ্বই বিপর্যস্ত ও ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি। এ ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, করোনাভাইরাসের উৎপত্তির ছয়মাস অতিবাহিত হতে চললেও এটির বিস্তার কমার কোনো লক্ষণ তো নেই-ই, বরং দিনে দিনে যেন আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। অর্থাৎ করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিপর্যস্ত হচ্ছে বিশ্ব। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, মাত্র পাঁচ দিনে ১০ লাখের বেশি রোগী শনাক্তের মধ্যে দিয়ে বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৩৩ লাখ ছাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটারে'র তথ্য অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণ সবচেয়ে দ্রম্নতগতিতে বিস্তার লাভ করছে লাতিন আমেরিকায়। আর দুই আমেরিকা মহাদেশে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, অর্ধেকের বেশি মৃতু্যর ঘটনাও সেখানে ঘটেছে। আমরা বলতে চাই, প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা এই ভাইরাস যেভাবে বিস্তার ঘটিয়ে কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণ, একের পর এক সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে সৃষ্ট পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আমলে নেওয়া জরুরি যে, যেহেতু সংক্রমণ বাড়ছে- ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। প্রসঙ্গত বলা দরকার, আক্রান্ত ও মৃতু্যতে বিশ্বে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলেও রোগীর সংখ্যা দ্রম্নগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ও ইংল্যান্ডের লেস্টার শহরসহ বিশ্বের কয়েকটি এলাকায় ফের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। হংকংয়ে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ শুরুর আশঙ্কায় সামাজিক দূরত্ব পালনে ফের কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি এমন এক ভয়ংকর আশঙ্কা- যা বারবার সামনে আসছে- তা আমলে নিয়ে বিশ্ব নেতৃত্বকে ভাবতে হবে এবং সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এটাও আমলে নেওয়া দরকার, শীতকালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। ব্রিটিশ গবেষকরা বলছেন, শীতে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণে কেবল যুক্তরাজ্যেই এক লাখ ২০ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে। যদিও দ্রম্নত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে মৃতু্যর এই সংখ্যা কমে আসবে বলেও মনে করছেন তারা। ৩৭ জন বিজ্ঞানী ও অ্যাকাডেমিশিয়ান মিলে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। সম্ভাব্য সর্বোচ্চ খারাপ পরিণতির কথা বিবেচনা করে তারা একটি মডেল দাঁড় করিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, শীতে দ্বিতীয় দফার সংক্রমণে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা যেতে পারে। সর্বোচ্চ মৃতু্য হতে পারে আগামী বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রম্নয়ারি মাসে। ফলে সামগ্রিক এই পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই বলেই আমরা মনে করি। আরেকটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আমলে নেওয়া জরুরি যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে তিন হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মীর মৃতু্য হয়েছে। মূলত পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রীর অভাবই এসব মৃতু্যর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়ী- মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আমরা বলতে চাই, যারা সেবা দিয়ে মানুষকে সুস্থ করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে, তাদের সুরক্ষাসামগ্রী অনিশ্চিত থাকবে এই বিষয়টি হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে এই সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তা আমলে নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করত হবে। সারা বিশ্বের করোনা পরিস্থতি বিশ্লেষণ সাপেক্ষে বিশ্ব নেতৃত্ব এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জারি রাখতে হবে। দেশেও ক্রমাগত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে- এই বিষয়টি আমলে নিয়ে বাংলাদেশে সংশ্লিষ্টদেরও সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখা দরকার, পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, অকারণে ঘোরাফেরা না করাসহ প্রয়োজনীয় সচেতনতা এ সময়টা সবচেয়ে বেশি জরুরি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।