আর্থিক সংকটে সাধারণ মানুষ পরিকল্পিত উদ্যোগ প্রয়োজন

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আর্থিক সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। পেট চালাতে রাস্তায় নামতে হচ্ছে বহু মানুষকে। তারা বাধ্য হয়ে পেশা বদল করেছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ঢাকার রামপুরার একটি কিন্ডারগার্টেনের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন চক-ডাস্টার ফেলে মোটরসাইকেলের হাতলে রেখেছেন হাত। সেখান থেকে যে আয় হচ্ছে তাই দিয়ে চালাচ্ছেন সংসার। স্কুল খুলবে খুলবে বলে তিন মাস অপেক্ষা করেছিল ওই ব্যক্তি। স্কুল খোলার অনুমতি আসে না। দিন দিন খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি। এমন পরিস্থিতিতে পড়ে গত ১০ দিন ধরে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন তিনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ওই ব্যক্তি। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে রক্ষায় দূরত্ব রজায় রেখে সবাইকে চলাচলের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। মোটরসাইকেলে যাত্রী উঠালে শরীর ঘেঁষেই তাকে বসাতে হয়। কোনো যাত্রী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কি না, খালি চোখে তা বোঝার উপায়ও নেই। এমন পরিস্থিতিতে তিনি এই পেশা বেছে নিয়েছেন। তার মতোই মহামারিতে পেশা বদল হয়েছে মিরপুরের একটি মিষ্টির দোকানের বিক্রেতা এক যুবকের। তিনিও মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। এভাবে অনেকেই পেটের দায়ে পেশা বদল করেছেন। এটা সত্য করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অর্থ সংকটে পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। অনেকের চাকরি নেই, ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকেই। আবার কারো কাজ আছে কিন্তু বেতন পাচ্ছেন না। কেউ কেউ বাধ্যতামূলক ছুটিতে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সংসারের খরচ মেটাতেই এখন হিমশিম খাচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্তরা। এমন অবস্থায় সঞ্চয় ও বিনিয়োগ তো পরের কথা; জমানো পুঁজি ভেঙে চলছে বেশিরভাগ মানুষের সংসার। করোনা সংকটের কারণে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ তাদের জমানো অর্থ খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। আর যাদের জমানো টাকা নেই তারা পেশা বদল করে যে কাজে দিন শেষে টাকা আসে সে কাজ করছেন। মহামারিকালে কারো আয় কমে গেছে আবার কারো কোরো উপার্জনই নেই। এ পরিস্থিতি আর কিছুদিন চললে সামনে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে দেশের সাধারণ মানুষ পড়েছে বিপাকে। সামনের দিনগুলোতে তারা কীভাবে বেঁচে থাকবেন সে চিন্তাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। আশার কথা, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সৃষ্ট দুর্যোগে সারাদেশের সাত কোটি ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫২ জন মানুষ সরকারি ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে। সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে মানবিক সহায়তা হিসেবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে সরকার। এ পর্যন্ত সারাদেশে দেড় কোটির বেশি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ৬৪ জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২৬ জুন পর্যন্ত সারাদেশে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৭ মেট্রিক টন। বিতরণ করা হয়েছে এক লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৯ মেট্রিক টন। এতে উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা এক কোটি ৬২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩। উপকারভোগী লোকসংখ্যা সাত কোটি ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫২ জন। সরকারের এই উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। যদিও কোথাও কোথাও ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আমরা মনে করি, যারা সরকারের ত্রাণ সুবিধা পেয়েছেন, তাদের বাইরে অনেক মানুষ অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। তারা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের জন্যও সরকারের যথেষ্ট করণীয় রয়েছে। উন্নত দেশে কর্মহীনদের জন্য বিশেষ ভাতা চালু রয়েছে। করোনা সংকটকালে খন্ডকালীন হলেও কোনো ভাতার ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা সরকারকে ভেবে দেখতে হবে।