শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ এবং চিকিৎসা ব্যয়

সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এবং সব ক্লিনিকের রেজিস্ট্রেশনের নিয়মাবলি সহজ হওয়া প্রয়োজন। সরকার নূ্যনতম যন্ত্রপাতির তালিকা স্থির করে দেবেন, কয়জন ডাক্তার, কয়জন ডিপেস্নামা পাস নার্স থাকতে হবে, এ নিয়ে সরকারের কাগজে নির্দেশনা কেবল দুর্নীতি বাড়াবে, বহু রিজেন্ট সাহেদ তৈরি করছে এবং আরও নতুন করে তৈরি হবে, সঙ্গে দুর্নীতি।
জাফরুলস্নাহ্‌ চৌধুরী/শরিফুল হক রুমি
  ১৭ জুলাই ২০২০, ০০:০০

বাংলাদেশে : চিকিৎসা অপচয়ের মূল কারণগুলো

বাংলাদেশে ব্যক্তি স্বাস্থ্য খাতে (ঙঁঃ ড়ভ চড়পশবঃ : ঙঙচ) প্রায় ৭০% ব্যয় হয় যা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। এত অধিক ব্যয়ের মূল কারণ বাংলাদেশে কোনোরূপ উন্নতমানের প্রাইভেট স্বাস্থ্য বিমা (চৎরাধঃব ঐবধষঃয ওহংঁৎধহপব) কিংবা সরকার নিয়ন্ত্রিত জাতীয় স্বাস্থ্য বিমা (ঘধঃরড়হধষ ঐবধষঃয ওহংঁৎধহপব) না থাকা। রোগীরা চিকিৎসকদের কাছ থেকে নূ্যনতম ৫ মিনিট পরামর্শের সময় না পাওয়ায়, রোগী ও আত্মীয়-স্বজন চিকিৎসকের ওপর আস্থা হারায়, এমনকি নামিদামি চিকিৎসকের ওপরও। রোগীর উপসর্গগুলোর বর্ণনা শেষ করার আগে চিকিৎসক রোগীকে একটি ব্যবস্থাপত্র (চৎবংপৎরঢ়ঃরড়হ) ধরিয়ে দেন, কোনো ওষুধ কোনো উপসর্গ উপসমের জন্য দিয়েছেন, কখন সেবন করতে হবে খাবার আগে না পরে তা চিকিৎসক বুঝিয়ে বলার পূর্বে পরবর্তী রোগী পরামর্শ কক্ষে প্রবেশ করেন, কোনটা কোন রোগের ওষুধ এবং এসব ওষুধের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (ঝরফব ঊভভবপঃং), মিথস্ক্রিয়া (ঈড়হঃৎধরহফরপধঃরড়হ) রোগী জানার সময় পান না, রোগী ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কিত পুরো তথ্য না জানার অসন্তোষ নিয়ে চিকিৎসকের চেম্বার ত্যাগ করেন। সামান্য সমস্যা হলে রোগী ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন এবং অনেক সময়ে অন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। রোগীরা চিকিৎসকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দামি ওষুধকে বেশি ভালো ওষুধ মনে করেন। রোগী এবং চিকিৎসক উভয়ে জানেন না যে, দামি (ঈড়ংঃষু) ওষুধ বেশি নকল (ঈড়ঁহঃবৎভবরঃ) এবং ভেজাল ও নিম্নমানের (ঝঁনংঃধহফধৎফ) হয়। রোগী দামও বেশি দিলেন, আবার অকেজো খারাপ ওষুধও সেবন করলেন। রোগ না সারায় প্রতি বছর কয়েক লাখ বাংলাদেশি রোগী ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এমনকি কতক আমেরিকা, ইংল্যান্ড যাচ্ছেন এবং চিকিৎসা ব্যয়ের কারণে তাদের দুর্নীতি ও দরিদ্রতা বাড়ছে। গবেষক ড. হোসেন জিলস্নুর রহমান বিআইডিএসে (ইওউঝ) কর্মরত থাকাকালে ১৯৯৪ সালে তথ্য প্রকাশ করেছিলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয় এবং পুলিশের হয়রানির কারণে বাংলাদেশে দরিদ্রতার অবসান হচ্ছে না। চিকিৎসকরা বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন। সোজা কথায়, ঘুষ নিচ্ছেন। তারা আর্থিক বিবেচনায় নির্ধারিত কোম্পানির ওষুধ লেখা ও অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত রোগ নির্ণয় পরীক্ষা করানোর জন্য ক্লিনিক/ ল্যাবরেটরি থেকে ৫০-৬০% এর বেশি কমিশন বাবদ পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ চিকিৎসকরা অতিরিক্ত দামি ওষুধ লিখছেন এবং অতিরিক্ত রোগ নির্ণয় পরীক্ষাও (উরধমহড়ংঃরপ ঞবংঃং) করাচ্ছেন। চিকিৎসকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রোগীরা ওঈট/ঈঈট-এর সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে, এমনকি নাম গোত্রহীন ক্লিনিকে। কতক হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ভেন্টিলেটর, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, ডিফিব্রিলেটর, কার্ডিয়াক মনিটর, ইসিজি ও ইকো এবং বিবিধ সিরিঞ্জ পাম্প থাকলেও ওঈট পরিচালনার জন্য সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ওঈট/ঈঈট বিশেষজ্ঞ নেই।

* ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র ** মেডিকেল অফিসার, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল

অথচ হাসপাতালের বিছানার চাদর, মাস্ক, পেপার গাউন, তোয়ালে, জুতার কভার ও বালিশের কভার পরিবর্তন এবং সময়ে অসময়ে বিভিন্ন চিকিৎসক রোগীকে পরিদর্শন (ঈড়হংঁষঃধঃরড়হ) করে রোগী থেকে ফি আদায় করছেন। ওঈট/ঈঈট-তে ভর্তি থাকা সময়ে ভেন্টিলেটর, কার্ডিয়াক মনিটর, পালস অক্সিমিটার, সিরিঞ্জ পাম্প, ওষুধের ডোজ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র প্রভৃতি ব্যবহারের জন্য আলাদা আলাদা চার্জ আদায় করা হয়। এটা অনৈতিক এবং দূর্নীতির অংশ। দৈনিক কত লিটার অক্সিজেন ব্যবহার করা হয়েছে তার হিসাব নেই, অথচ ওঈট বিদায়কালে ৪০,০০০/৫০,০০০ টাকা অক্সিজেন চার্জ বাবদ রোগী থেকে আদায় করা হয়। দিনে দুপুরে ডাকাতি। দুদক কি করছেন? উলেস্নখ্য, রোগী বা তাদের আত্মীয়-স্বজনরা এমনকি চিকিৎসকরা প্রতি হাজার লিটার ঙ২ (অক্সিজেন) ক্রয়মূল্য জানেন না। তাই প্রাইভেট হাসপাতাল মালিকরা রোগীদের ঠকায়, প্রতারণা করে। ফলে প্রতিদিন ওঈট বিল বাড়ে দ্রম্নতগতিতে, যা দৈনিক ৫০,০০০ থেকে ১৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার থেকে দেড় লাখ) টাকাও হতে পারে।

সৌভাগ্যবশত গণস্বাস্থ্য ওঈট-তে এমন একজন দায়িত্বে আছেন যিনি অত্যন্ত নিবেদিত এবং কানাডা, ব্রিটেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। ওঈট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজীব মোহাম্মদ ২০০১ সালে ইউরোপিয়ান ডিপেস্নামা ইন ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন (ঊউওঈ) অর্জন করেছেন। সম্ভবত বর্তমানে বাংলাদেশে অধ্যাপক নজীবের চেয়ে অধিকতর জ্ঞানসম্পন্ন সিনিয়র কোনো ওঈট বিশেষজ্ঞ নেই। পরে তিনি ক্রিটিকাল কেয়ার (ঈৎরঃরপধষ ঈধৎব টহরঃ), খরাবৎ ওঞট (ওঈট) ও গঁষঃরফরংপরঢ়ষরহধৎু ওঈট-তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত হাসপাতালগুলোয় এবং সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল ও ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন হাসপাতালে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ও বিশেষ কর্মদক্ষতা অর্জন করে দেশে ফিরেছেন।

ওঈট-তে রোগী থাকলে তিনি দৈনিক ১৬-১৮ ঘণ্টা সময় হাসপাতালে কাটান। ওঈট বিশেষজ্ঞরা জুনিয়র চিকিৎসক বা নার্সদের ফোন পাওয়ার পর কত দ্রম্নত হাসপাতালে পৌঁছেন তার ওপর ওঈট রোগীর জীবন নির্ভরশীল। তাকে দ্রম্নত ডাকার জন্য তিনি হাসিমুখে সব জুনিয়রদের ধন্যবাদ জানান, তাদের সঙ্গে নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিয়ে রোগী দেখেন, রোগী পরীক্ষা করা শেখান এবং পরে আলাদাভাবে প্যারামেডিক, ওয়ার্ডবয়, ক্লিনার এবং রোগীর আত্মীয়-স্বজনকে সযত্নে রোগীর সমস্যা বুঝিয়ে বলেন।

৫. সব প্রাইভেট হাসপাতাল মালিক এবং দুর্নীতিতে অংশগ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের বিরুদ্ধে দ্রম্নত ব্যবস্থা নিন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে। উদাহরণ ছাড়া চরিত্র পরিবর্তন হবে না।

৬. বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা একটিও আন্তর্জাতিক জার্নাল কিনে না পরায় তাদের জ্ঞানের পরিধি সীমিত হয়ে যাচ্ছে এবং সহজে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হচ্ছেন, আস্থাহীনতায় ভুগছেন। চিকিৎসকরা ওষুধের মূল্য জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না। দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি। বাণিজ্যিক (ইৎধহফ/ ঞৎধফব ঘধসব) নামের ওষুধে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে রোগের উপসম না হলে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক বদলিয়ে দেন। প্রকৃতপক্ষে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনীয়তাই নেই। চিকিৎসকরা ওষুধ লেখেন জিনেরিক (এবহবৎরপ) নামে নয়, ফলে রোগী ওষুধের প্রকৃত নাম জানতে পারেন না। তারা ওষুধের প্রকৃত দামও জানেন না বলে অপ্রয়োজনে বেশি মূল্যের অধিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সমন্বিত ওষুধগুলোর বিধিব্যবস্থাপত্র (চৎবংপৎরঢ়ঃরড়হ) লিখে থাকেন। খেয়াল করেন না যে, বিভিন্ন ব্রান্ড নামের ওষুধ লিখছেন যা মূলত একই জিনেরিক গোত্রের।

বাংলাদেশের গ্রামে প্রথম স্বাস্থ্য বিমার (ঐবধষঃয ওহংঁৎধহপব) প্রচলন।

স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৩ সালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সাভার এলাকায় একই দরের কিস্তিতে (প্রিমিয়ামে) গণস্বাস্থ্য বিমা (এড়হড়ংযধংঃযধুধ ঐবধষঃয ওহংঁৎধহপব) চালু করে। স্থানীয় প্রত্যেক পরিবার প্রত্যেক মাসে দুই টাকার কিস্তি (প্রিমিয়াম) দিতেন। বিনিময়ে রোগী বিনা ফি-তে বিবিধ স্বাস্থ্য বিমা সুবিধা পেতেন। যেমন- পারামেডিক ও চিকিৎসকদের ফ্রি পরামর্শ, ওষুধ এবং রক্ত, পায়খানা, প্রস্রাবের সাধারণ (ইধংরপ) পরীক্ষাগুলোর সুবিধা পেতেন বিনা খরচে। দুর্ভাগ্যবশত এই নীতিতে না দরিদ্র পরিবার না ধনীরা খুশি ছিলেন। মধ্যবিত্ত ও ধনীরা লাইন করে দরিদ্র রোগীর পিছনে দাঁড়াতে অস্বস্তি বোধ করতেন। ধনী ও মধ্যবিত্তরা আলাদাভাবে প্রাইভেটে বাড়িতে ডাক্তার নিয়ে দেখাতে চান। অন্যপক্ষে দরিদ্র রোগীরা মনে করতেন যে ধনীদের আয় এত বেশি কিন্তু তাদের কাছে থেকেও মাসিক দুই টাকা চাঁদা ধার্য করা যৌক্তিক নয়, গরিবের হক হরণ করা হচ্ছে, তাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে, অবস্থাপন্নদের বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে, খাতির করা হচ্ছে।

একই শ্রেণির স্বাস্থ্য বিমার পরিবর্তে ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার জনসাধারণের সঙ্গে একাধিক আলোচনা সভা করে সাভারসহ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সব কর্ম এলাকায় জনসাধারণকে ৬টি সামাজিক শ্রেণিতে বিভক্ত করে সামাজিক শ্রেণিভিত্তিক গণস্বাস্থ্য বিমা চালু করা হয়- (১) অতি দরিদ্র, (২) দরিদ্র, (৩) নিম্ন মধ্যবিত্ত, (৪) মধ্যবিত্ত, (৫) উচ্চ মধ্যবিত্ত, (৬) ধনী/উচ্চবিত্ত। স্বাস্থ্য বিমাহীনরা ৭ নম্বরে নিবন্ধিত হন। দরিদ্ররা নগণ্য প্রিমিয়াম দিয়ে বেশি সুবিধা পান, ঙচউ-তে পরামর্শ ফ্রি। কিন্তু অবস্থাপন্ন উচ্চবিত্ত পরিবাররা দেন অনেক বেশি প্রিমিয়াম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে অবস্থাপন্নরা বেশি ফি দেন। অধূমপায়ী দরিদ্র পরিবার দেন বছরে ২০০ টাকা, অন্যপক্ষে উচ্চবিত্ত ধনী পরিবার স্বাস্থ্য বিমা দেন বছরে ২ হাজার ৮০০ টাকা, উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার দেবেন ২ হাজার ৪০০ টাকা এবং অধূমপায়ী মধ্যবিত্ত পরিবার দেন মাত্র এক হাজার আটশ) টাকা। এত কম প্রিমিয়ামে পৃথিবীর কোথাও নেই। কিন্তু এ বিষয়ে পরীক্ষা বা প্রচারে সরকারি আগ্রহ কোনোটাই নেই। প্রতি দুই বছর পর পর পর্যালোচনা করে স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামের পরিবর্তন করা হয়।

ঢাকা শহরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাত্র ৪ হাজার ৯৮২ পরিবারের গণস্বাস্থ্য বিমা আছে। অন্যপক্ষে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গ্রামীণ কর্ম এলাকায় প্রায় ১৫ লাখ লোকসংখ্যার ২ লাখ ২৮ হাজার ৭৬২ পরিবারের মধ্যে মাত্র ৪৭ হাজার ৬০৪ পরিবার গণস্বাস্থ্য বিমা (চবড়ঢ়ষব'ং ঐবধষঃয ওহংঁৎধহপব) নিবন্ধিত। প্রকৃতপক্ষে যথেষ্ট প্রচার-প্রচারণার অভাবে পলস্নী এলাকায় গণস্বাস্থ্য বিমার প্রসার হয়নি। ফলে জনসাধারণ একটি আধুনিক জনসেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ এবং চিকিৎসা

চীনের সবচেয়ে বড় শিল্পাঞ্চল উহান প্রদেশে ২০১৯ সালের নভেম্ব্বর মাসে নভেল করোনা কোভিড-১৯ ভাইরাস আত্মপ্রকাশ করে এবং দ্রম্নত বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রবেশ করে প্রথম মৃতু্য ঘটে ৮ মার্চ ২০২০ তারিখে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৬ মার্চের সতর্কবাণীকে বাংলাদেশ সরকার গুরুত্ব দেয়নি। ফলে রোগটি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং করোনা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে মাগুরার চিকিৎসক ডা. খলিলুর রহমান (ফোন- ০১৭১২৮১৯৪০৫, ০১৯৬০৪৬৩৭৩৫) তার অভিজ্ঞতার আলোকে তিনপর্যায়ে ভাগ করে করোনা রোগ ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে একটি ছোট লেখা লিখেছিলেন তা শিক্ষনীয় বলে কিছু অংশ আমি পুনঃউলেস্নখ করছি।

'কোভিড-১৯ একটি স্পর্শকীয় ভাইরাস (ঞড়ঁপযরহম ঠরৎঁং) যা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশি থেকে বা আশপাশের ৩-৬ ফুটের মধ্যে অবস্থিত বস্তু থেকে ব্যক্তিদের অসতর্কতার কারণে ছড়িয়ে পড়ে। স্টেফাইলো কক্কাস, স্ট্রেপটোকক্কাস, নিউমোকক্কাস প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে সংক্রমিত হয়। সাধারণত ৩-১৪ দিনের মধ্যে কোভিড-১৯ উপসর্গ প্রকাশ পায় (ওহপঁনধঃরড়হ চবৎরড়ফ) তিনপর্যায়ে।

প্রথমপর্যায়ে ১-৩ দিন : শুরু হয় সাধারণ জ্বর, গায়ে, মাথায় সামান্য ব্যথা ও শুষ্ক কাশি দিয়ে, যোগ হয় নাক দিয়ে হালকা পানি পড়া (জঁহহরহম ঘড়ংব), হাঁচি-কাশি ও তৃতীয় দিনে মৃদু শ্বাসকষ্ট। চুলকানি ও হাঁচি-কাশি এলার্জির লক্ষণ।

দ্বিতীয়পর্যায় ৪-৬ দিন : হঠাৎ জ্বর বেড়ে ১০২০ থেকে ১০৪০ ফারেন হিটে ওঠে, শুকনা কাশির সঙ্গে শ্লেষ্মা যুক্ত হয়। সর্বত্র মৃদু ব্যথা বিশেষত গলায় (ঝড়ৎব ঞযৎড়ধঃ), শ্বাসকষ্ট ক্রমান্বয়ে বেড়ে যায়, (চৎড়মৎবংংরাব উুংঢ়হড়বধ) শ্লেষ্মাসহ হাঁচি-কাশি বৃদ্ধি এবং খাওয়ায় অরুচি ও অনিদ্র্রা যোগ হয়। নিউমোনিয়ার (চহবঁসড়হরধ) লক্ষণ প্রকাশমান এবং রোগীর অস্বস্তি রোধের সফঙ্গ ভীতি সঞ্চার ও লক্ষণীয়।

তৃতীয়পর্যায় : রক্তে অক্সিজেন সংমিশ্রন (ঙ২- ঝধঃঁৎধঃরড়হ) বিভ্রাটে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ও কফ শ্লেষ্মা বৃদ্ধি বুকের ভিতর গড়গড় শব্দ শোনা যায় এবং স্বাভাবিকভাবে শুয়ে থাকায় অসুবিধা হয় রোগী ক্রমে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

করোনা রোগীর চিকিৎসা ও ব্যয়

প্রথমপর্যায়ে রোগীকে আলাদা ঘরে রেখে আলাদাভাবে দেখাশোনা করাই মূল কাজ। এলাকার একজন চিকিৎসকের (এবহবৎধষ চৎধপঃরঃরড়হবৎ) নিয়মিত পরামর্শ নিলে ভালো হয়। প্রায় ৭০ থেকে আশি ভাগ (৭০-৮০%) রোগী নিরাময় হয় নিজ বাড়িতে স্বল্প খরচে, স্বল্প সময়ে ও স্নেহ ভালোবাসায়। বোকামি করতে হবে না একই ওষুধ অকারণে বেশি দামে কিনে, এতে ভালোর চেয়ে অন্য সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।

দিনে ১টা বা ২টা করে ৫০০ মিলিগ্রামের প্যারাসিটামলের (চধৎধপবঃধসড়ষ) ট্যাবলেট দিনে এক থেকে তিনবার সেবন যুক্তিসঙ্গত। প্যারাসিটামলের সঙ্গে অন্য উপাদান যেমন কফিন বা ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত না থাকা ভালো, এতে অন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের প্যারাসিটামল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডঐঙ) নির্দেশ মতো উৎপাদিত, জিনেরিক নাম জি-প্যারাসিটামল, প্রতি ট্যাবলেটের মূল্য ৭০ পয়সা (০.৭০ টাকা) অর্থাৎ ৭ (সাত) টাকায় ১০টি জি-প্যারাসিটামল কিনতে পাওয়া যায়। অন্যপক্ষে বাণিজ্যিক নামে বাজারজাতকৃত নাপা, নাপা পস্নাস, নাপা এক্সট্রা, প্রভৃতি এবং অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত উৎপাদনে প্রস্তুত প্রতি ট্যাবলেট দুই টাকা থেকে আড়াই টাকায় বিক্রি হয়। এতে রোগ দ্রম্নত সারে না, কিন্তু অর্থের অপচয় হয়।

হাঁচি-কাশি অর্থাৎ এলার্জি নিবারণের অ্যান্টি এলার্জি (অহঃর অষষবৎমু)-এর ওষুধ ৪ মিলিগ্রামের ক্লোরফেনারামিন (ঈযষড়ৎঢ়যবহবৎধসরহব/এ-অহঃরযরংঃধসরহ ঞধনষবঃ) দিনে একটি করে খেলে ভালো উপকার হয়। প্রতি ট্যাবলেটের মূল্য মাত্র পঁচিশ পয়সা (অর্থাৎ ১ টাকায় ৪টি অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট কিনতে পাওয়া যাবে)।

গরম চা, মধু ও আদায় গলায় আরাম পাওয়া যায়। চুষে চুষে জি-ভিটামিন জি-২৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট দিনে ৩-৪টা খাওয়া যেতে পারে, প্রতি ট্যাবলেট জি-ভিটামিন মূল্য ১ টাকা ৩০ পয়সা (১০টি টেবলেটের মূল্য ১৩ টাকা) অনেকে প্রতিদিন ২০ মিলিগ্রামের একটা বা দুটো জিংক ট্যাবলেট (এ-তরহপ) গ্রহণের পরামর্শ দেন, খরচ প্রতি ট্যাবলেট ১ টাকা অর্থাৎ ১০টি জিংক ট্যাবলেটের মূল্য ১০ টাকা।

কোয়ারেন্টিন (একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পৃথক থাকা) রুমে অবশ্যই ১ বোতল ১০০ মিলিলিটারের জাইনানল বা জি-ক্লোরহেক্সাডিন (৫-ঈযষড়ৎযবীরফরহব) ব্যবহার অবশ্য কর্তব্য। ১০০ মিলিলিটারের মূল্য ১০০ টাকা। সাবানও ব্যবহার করবেন।

ভালো উপকার পাওয়া যায় গরম পানিতে কয়েক ফোটা টিংচার আয়োডিন কিংবা ইউকেলিপট্যাস তেল মিশিয়ে গরম বাষ্প নিলে।

অন্য সমস্যা যেমন পেট বা বুক জ্বালা-পোড়া বা এসিড ভাব লাগলে দিনে একটি বা দুটি ২০ মিলিগ্রামের জি -ওমিপ্রাজল (এ- ঙসবঢ়ৎধুড়ষব) ক্যাপসুল সেবন করলে নিরাময় নিশ্চিত। খরচ প্রতি ক্যাপসুলের মূল্য ৩ টাকা ৩০ পয়সা)

প্রথমপর্যায়ে নিরাময়ে ব্যর্থ ২০% রোগীকে অবশ্যই নিকটবর্তী সরকারি বা বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে (ওংড়ষধঃরড়হ টহরঃ) ভর্তি হতে হবে। তবে ভর্তির আগেই নিশ্চিত হতে হবে, সেখানে ছোট অক্সিজেন পালস অক্সিমিটার (চঁষংব ঙীুসবঃবৎ) যন্ত্র এবং রোগীকে প্রয়োজন মাফিক সরাসরি অক্সিজেন দেওয়ার সুবিধা আছে। রক্তে পরিমিত অক্সিজেন সংমিশ্রিত না হলে (ঙীুমবহ ঝধঃঁৎধঃরড়হ) রোগীকে মুখে বা নাক দিয়ে অক্সিজেন (ঙীুমবহ) কিছুক্ষণ দিতে হয়। দেখতে হবে অক্সিজেন সংমিশ্রণ ৯২%- ৯৫% মধ্যে যেন থাকে। অতিরিক্ত অক্সিজেন দেওয়া অপচয় তো বটে, অনেক সময় ক্ষতিকরও।

ঢাকা বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক তারিক আলম করোনা পজিটিভ একটি দ্বিতীয়পর্যায়ের রোগীদের প্রতিদিন একটি অ্যান্টি হেলমিনথির আইভারম্যাকটিন (ওাবৎসবপঃরহব) যার প্রতি ট্যাবলেটের মূল্য ৫ টাকা এবং ১০০ মিলিগ্রামের ডক্সিসাইক্লিন ট্যাবলেট দিনে দুইবার পাঁচদিন সেবন করিয়ে রোগ নিরাময় লক্ষ্য করেছেন।

হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি প্রথম দিন ইনজেকশন মিথাইল প্রেডনিশোলন ২৫০ মিলিগ্রাম ২টি কিংবা ইনজেকশন ডেক্সামসন ৪ মিলিগ্রাম (এ-উবীধসবঃযংড়হব ৪ সম ওহলবপঃরড়হ) মূল্য প্রতি ইনজেকশন মাত্র ১৫ টাকা দিনে দুইবার ৩ দিন, খরচ ৯০ টাকা।

নিউমোনিয়ার চিকিৎসার জন্য কো- অ্যামক্সিক্লেভ (ঈড়- অসড়ীরপষধা) ১-২ গ্রাম দিনে তিনবার কিংবা অ্যারিত্রোমাইসিন/ অ্যাজিথ্রোমাইসিন কিংবা ক্যাপসুল সেফেক্সিন (এ- ঈবভরীরসব ২০ সম, মূল্য ২০ টাকা) ৫ দিন সেবনের জন্য দেওয়া হয়।

দিনে কয়েকবার গরম জলের বাষ্প বা মেডিসালের মাধ্যমে সালবুটামল (এ-ঝধষনঁঃধসড়ষ ঝড়ষঁঃরড়হ .০৫% সম) মূল্য প্রতি ভায়াল ৮০ টাকা কিংবা বুডিসোনাইড (ইঁফবংড়হরফব ০.৫সম) অথবা এনএসিটি (ওহলবপঃরড়হ ঘ- অপবঃুষ ঈুংঃবরহব-ঘঅঈ) সংমিশ্রণে নেবুলাইজার ব্যবহারে শ্লেষ্মা বের করায় খুব উপকার পাওয়া যায়।

ব্যয়বহুল অ্যান্টিভাইরাল রেমসিডিসিবির (জধসংরফবংরারৎ) ব্যবহারে নিরাময়ে তিনদিন সাশ্রয় করায়। অন্য অ্যান্টি ভাইরালের ব্যবহারে সুফলের প্রমাণ নেই। অর্থের অপচয় মাত্র। শিক্ষিত পেশাজীবী ও প্রতারিত হচ্ছেন অপ্রমাণিত বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় কিনে, তাদের জ্ঞানচক্ষু করে উন্মালিত হবে?

আইসোলেশন (ওংড়ষধঃরড়হ) ওয়ার্ডে ৮-১০ দিন ভালো নার্সিং সেবা ও নিয়মিত চিকিৎসা পেলে দ্বিতীয়পর্যায়ের প্রায় সব রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান, অনধিক ১০% রোগী বিভিন্ন জটিলতা ও (ঈড়সঢ়ষরপধঃরড়হং) ও একাধিক বিকল অঙ্গের সমস্যা নিয়ে তৃতীয়পর্যায়ে প্রবেশ করে।

তৃতীয়পর্যায়ের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং মূলত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (ওঈট)-তে চিকিৎসা করাতে হয়। করোনা রোগে মৃতু্যহার ২-৩% সীমিত।

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন

সারা পৃথিবীতে এমনকি উন্নত বিশ্বের চিকিৎসকরা সহজে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সুলভ ওষুধ থাকা সত্ত্বেও অযাচিতভাবে অধিকতর মূল্যের নতুন ওষুধের ভুল প্রয়োগ রহিত করার লক্ষ্যে প্রায়ই পরামর্শ প্রকাশ করে থাকেন ঘওঈঊ (ঘধঃরড়হধষ ওহংঃরঃঁঃব ঋড়ৎ ঐবধষঃয ধহফ ঈধৎব ঊীবষষবহপব)। সময়মতো চিকিৎসা না হলে বা চিকিৎসা বিভ্রাট হলে কোভিড-১৯ রোগের মূল সমস্যা হাসপাতালে ভর্তির সময় বা ভর্তির ৪৮ ঘণ্টা আগে বাড়ি ও এলাকার পরিবেশ থেকে অর্জিত নিউমোনিয়া (ঈড়সসঁহরঃু অপয়ঁরৎবফ চহবঁসড়হরধ) অথবা হাসপাতালে অন্য কারণে আসা রোগীরা হাসপাতালের পরিবেশ থেকে অর্জিত সংক্রমণ (ঐড়ংঢ়রঃধষ ওহভবপঃরড়হ) দ্রম্নত ফুসফুসের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। সে সমস্যার দ্রম্নত চিকিৎসার জন্য মে, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক চিকিৎসাবিষয়ক পরামর্শ কমিটি ঘওঈঊ (ঘধঃরড়হধষ ওহংঃরঃঁঃব ঋড়ৎ ঐবধষঃয ধহফ ঈধৎব ঊীবষষবহপব)-এর সুপারিশগুলো বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত ৫ দিন সেব্য। তবে ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষত ফুসফুসের সমস্যায় ২-৩ সপ্তাহ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।

* মেথিসিলিন প্রতিহতকরণে সমর্থ (গবঃযরপরষষরহ জবংরংঃধহঃ) স্টাফাইলোকক্কাস অরিয়স (ঝঃধঢ়যুষড়পড়পপঁং অঁৎবড়ঁং) প্রদাহে অবশ্য দেয়- ঠধহপড়সুপরহ (ভ্যানকোমাইসিন) প্রতি কিলোগ্রাম ওজনে ২০ মিলিগ্রাম হিসেবে সর্বোচ্চ ২ গ্রাম দিনে তিনবার আন্তঃশিরায় বা ঞবরপড়ঢ়ষধহরহ (তাইকোপস্নানিন) প্রতি কিলোগ্রাম ওজনে ৬ মিলিগ্রাম দিয়ে শুরু দিনে তিনবার করে পরবর্তীতে দিনে একবার দিলে কার্যকর হয়।

* খরহবুড়ষরফ (লানোজোলিড) ৬০০ মিলিগ্রাম দিনে দুই বার মুখে সেব্য কিংবা বিশেষজ্ঞের উপস্থিতি একবার ইনজেকশন দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওষুধের মূল্যের প্রতি ক্লিনিসিয়ান/ বিশেষজ্ঞদের নজর রাখা উচিত।

দুর্ভাগ্যের বিষয় যে ঘওঈঊ মত সর্বোচ্চ বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশগুলো দেশের ক্লিনিশিয়ান/ বিশেষজ্ঞরা সতর্কতার সঙ্গে অনুসরণ না করায় দেশে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিহতকরণ জীবাণু (জবংরংঃধহপব) প্রতি নিয়ত বেড়ে যাচ্ছে।

মৃতু্যর দ্বার থেকে ফিরে আসা একজন ওঈট রোগীর চিকিৎসা ব্যয়

* করোনা আক্রান্ত সব গণস্বাস্থ্য কর্মী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের খরচে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্যান্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিনা খরচে সব পরীক্ষা ফ্রি চিকিৎসা পেয়ে থাকেন। কর্মীকে কেবল খাওয়া খরচ বহন করতে হয়।

\হ

শেষের কথা : সরল কথা

১. নিজ বাসায় পরিবারের স্নেহ ভালোবাসায় আলাদা ঘরে থেকে সাধারণ চিকিৎসায় প্রায় ১০০% রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। খরচ খুবই কম। গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের জি-প্যারাসিটামল ( মূল্য প্রতি ট্যাবলেটের ৭০ পয়সা, জি-অ্যান্টিহিস্টামিন ২৫ পয়সা, জি-ভিটামিন সি ১ টাকা ৩০ পয়সা) ও স্টিম বাষ্প দিনে কয়েকবার ব্যবহার করুন, মধুও খাবেন।

২. হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিলে হাসপাতালে বিশেষ খরচ দৈনিক দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। তবে নিরাময়ের হার প্রায় দ্বিতীয়পর্যায়ে ৯০%।

৩. ওঈট-তে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয় বহুল। ব্যয় দিনে ৫০ হাজার -১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, নামিদামি অপ্রমানিত ও ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহারে এবং অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরীক্ষায়। দেশের সব ওঈট-তে পর্যাপ্ত সেবার ব্যবস্থা নেই। ওঈট-তে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পর্যাপ্ত জুনিয়র চিকিৎসক ও নার্স ওঈট-তে নেই; ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান সীমিত এবং তারা দ্রম্নত দৌড়ে সেবা দিতে অভ্যস্ত নন। দেশের সেরা ওঈট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজীব মোহাম্মদকে দ্রম্নত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা প্রচলনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

স্মরণ রাখবেন চিকিৎসক ও সেবিকাদের অক্লান্ত সেবার পরও ওঈট-তে মৃতু্যহার খুব বেশি। ওঈট-তে ও মৃতু্যহার ৫০% অতিক্রম করতে পারে।

৪. ওষুধ কোম্পানি নিয়ন্ত্রিত ওহফরপধঃরাব চৎরপব (ওচ) প্রথা অনতি বিলম্বে বাতিল করে সরকার ১৯৮২ সালের 'জাতীয় ওষুধনীতি ১৯৮২'-এর পুরো অনুসরণ করা এবং সুনির্দিষ্টভাবে রোগ নির্ণয় পরীক্ষার এবং অপারেশনের দর স্থির করে দিয়ে পুরোপুরি কার্যকর করলে ওষুধের সর্বোচ্চ ক্রয়মূল্য (গজচ) প্রয়োগ করলে ক্রয়ে এবং বিভিন্ন পরীক্ষার চার্জগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৫০% কমবে।

৫. সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এবং সব ক্লিনিকের রেজিস্ট্রেশনের নিয়মাবলি সহজ হওয়া প্রয়োজন। সরকার নূ্যনতম যন্ত্রপাতির তালিকা স্থির করে দেবেন, কয়জন ডাক্তার, কয়জন ডিপেস্নামা পাস নার্স থাকতে হবে, এ নিয়ে সরকারের কাগজে নির্দেশনা কেবল দুর্নীতি বাড়াবে, বহু রিজেন্ট সাহেদ তৈরি করছে এবং আরও নতুন করে তৈরি হবে, সঙ্গে দুর্নীতি। প্রাইভেট প্রাকটিসে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ফি (ঈড়হংঁষঃধঃরড়হ) চিকিৎসক নিজে স্থির করবেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের নাক না গলানোই উত্তম।

৬. সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে সব নাগরিকের সুলভে সহজে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা প্রাপ্যতা। বাংলাদেশে সামাজিক শ্রেণিভিত্তিক জাতীয় স্বাস্থ্য বিমা (ঝড়পরধষ ঈষধংং ইধংবফ ঘধঃরড়হধষ ঐবধষঃয ওহংঁৎধহপব) বিবেচনার সময় এসেছে। কয়জন চিকিৎসক, কয়জন নার্স (সেবিকা) টেকনিশিয়ান দিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক মালিকরা স্থির করবেন। ব্যক্তি মালিকরা লাভ ও সেবা দুটোই ভালো বুঝবেন। সামাজিক শ্রেণিভিত্তিক জাতীয় স্বাস্থ্য বিমা (ঘধঃরড়হধষ ঐবধষঃয ওহংঁৎধহপব) সৃষ্টি বিবেচনা অত্যাবশ্যক।

জাফরুলস্নাহ্‌ চৌধুরী : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি

শরিফুল হক রুমি : গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<106082 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1