দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

সাহেদ করিম গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সারা বিশ্ব করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি। দেশেও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা। মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা থমকে গেছে। অর্থনীতিসহ নানা ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় যদি করোনা পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রতারণার ঘটনা ঘটে, তবে তা কতটা ঘৃণ্য ও ভয়ঙ্কর বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। উলেস্নখ্য, করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার মতো ভয়ঙ্কর প্রতারণার সাথে জড়িত সাহেদ করিমের নাম এখন সর্বত্রই আলোচিত। সম্প্রতি তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। প্রকাশিত খবরে জানা গেল, সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্রসহ রিজেন্ট গ্রম্নপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব)। তথ্য মতে, বুধবার ভোর ৫টার দিকে সাতক্ষীরা সীমান্তের দেবহাটা থানার লবঙ্গপতি এলাকা থেকে নৌকায় পালিয়ে থাকা অবস্থায় তাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাহেদের প্রতারণা কাজের অন্যতম সহযোগী রিজেন্ট গ্রম্নপের এমডি মাসুদ পারভেজকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব। প্রসঙ্গত, গত ৬ জুলাই করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগের্ যাব উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। এরপর রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেওয়া হয়। ৭ জুলাই করোনা পরীক্ষা না করেই সার্টিফিকেট প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করের্ যাব। আমরা বলতে চাই, যেখানে করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের জীবন জীবিকা সবকিছু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, এই বিষয়কে সামনে রেখেও যারা প্রতারণা করে তারা কতটা ঘৃণ্য মানসিকতার তা বলার দরকার পড়ে না। মনে রাখা দরকার, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য আমলে নিলেও এটা স্পষ্ট যে, নানা ধরনের প্রতারণার সাথে জড়িত ছিলেন গ্রেপ্তার রিজেন্ট গ্রম্নপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও বলছেন যে, রিজেন্ট গ্রম্নপের চেয়ারম্যান 'মহাপ্রতারক'। দেশে মহামারি করোনাকালে যিনি চিকিৎসাসেবা নিয়ে প্রতারণা করতে পারেন তিনি নিজের স্বার্থের জন্য সব করতে পারেন। তার এমন প্রতারণার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে- এমন বিষয় যখন উঠে আসছে; তখন আমরা বলতে চাই, আইনের আওতায় এনে এই প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখতে হবে সাহেদ করিমের প্রতারণা সহযোগি কারা, তাদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। লক্ষ্যনীয়, খবরের মাধ্যমে জানা যায়, সাহেদ করিম বিভিন্নভাবেই প্রতারণার সাথে জড়িত। ২০০৭ সালে রিজেন্ট হাসপাতালের অনুমোদন নেন সাহেদ করিম। কিন্তু তিনি ওই সময় হাসপাতাল করেননি! চালাতেন ক্লিনিক। এছাড়া গত পাঁচ বছর ধরে সেন্টার ফর পলিটিক্যাল রিসার্চ (রাজনীতি গবেষণা কেন্দ্র) নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালাতেন। নিজেকে কথিত বুদ্ধিজীবী বা রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবেও পরিচয় দিতেন। আরো উলেস্নখ্য, ২০০৯ সালের জুলাই মাসে প্রতারণার মামলায় সাহেদ গ্রেপ্তার হয়েছিল। তখন কয়েক মাস জেলেও খেটেছেন তিনি। তবুও প্রতারণা থামেনি, বরং মাত্রা আরো বেড়ে যায় বলেও জানা যাচ্ছে। ২০১০ সালের দিকে সাহেদ ধানমন্ডি এলাকায় বিডিএস কিক ওয়ান এবং কর্মমুখী কর্মসংস্থান সোসাইটি ( কেকেএস) নামে দুটি এমএলএম কোম্পানি খুলেন। ২০১১ সালে শত শত গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫শ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া 'বিডিএস কুরিয়ার সার্ভিসে' চাকরির নামে অনেক আবেদনকারীদের কাছ থেকেও টাকা হাতিয়ে নেন। ২০১১ সালে তাকে প্রতারণা মামলায় আবারও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে টাকার বিনিময়ে দ্রম্নত জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে এমএলএম প্রতারণায় আত্মসাৎ করা টাকা দিয়ে রিজেন্ট গ্রম্নপের নামে ব্যবসা শুরু করেন। চালু করেন ঢাকা রিজেন্ট হাসপাতাল! সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যারা করোনার সুযোগ নিয়ে বাণিজ্যে মেতে উঠতে পারে, নানা ধরনের প্রতারণার মধ্য দিয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়, তাদের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন নয়, বরং কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সাহেদ করিম এবং তার সহযোগিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে করোনা নিয়ে প্রতারণাসহ নানা ধরনের অপরাধ করতে যারা তৎপর তাদের রুখে দিতে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।