বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যায় এখন পর্যন্ত আটজনের মৃতু্য হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭২ জন মানুষ। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করায় দেশের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল নতুন করে পস্নাবিত হওয়ায় বন্যার অবনতির আশঙ্কার বিষয়টি এর আগেই সামনে এসেছিল। আমরা মনে করি, বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। উলেস্নখ্য, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয় থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত বন্যায় ১৮টি জেলার ৯২ উপজেলার ৫৩৫টি ইউনিয়ন দুর্গত হয়েছে। ২২ লাখ ২৬ হাজার ৪৭২ জন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর জামালপুরে চারজন এবং লালমনিরহাট, সুনামগগঞ্জ, সিলেট ও টাঙ্গাইলে একজন করে মোট আটজনের মৃতু্য হয়েছে বন্যাজনিত কারণে। আমরা বলতে চাই, বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগ কত তীব্র হতে পারে তা নতুন করে বলার দরকার পড়ে না। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। প্রসঙ্গত এটাও বলা দরকার, জানা যাচ্ছে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ১২ জেলায় ১ হাজার ৫৪৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং সেখানে ২০ হাজার ৭০৫ জন মানুষ এবং ৫৬ হাজার ৩১টি গবাদিপশু আশ্রয় পেয়েছেন। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আনসার, গ্রাম পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক ও এনজিও প্রতিনিধিরাও কাজ করছেন। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতির সুষ্ঠু ব্যস্থাপনা নিশ্চিত হোক এটি কাম্য। একই সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলয়া সার্বক্ষণিক সতর্কও থাকতে হবে। ভুলে যাওয়া যাবে না, এ সময় বন্যা কবলিত মানুষ বিপর্যস্ত। ফলে তাদের পাশে দাঁড়ানো অপরিহার্য। একদিকে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের মধ্যে মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। নানা ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ সচেতন থাকার বিষয়টি বারবার বলা হচ্ছে। আবার এর মধ্যে যখন মানুষ বন্যা কবলিত, তখন তা কতটা আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে, বলার অপেক্ষা রাখে না। এর আগে এমন বিষয়ও সামনে এসেছিল, কেউ পানিবন্দি আবার কেউ কেউ পাশের নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে আবার কেউ রাস্তা বা বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ ঘরে খাট চৌকি দিয়ে মাচাং বানিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চরম বিপাকে পড়ার খবর উঠে এসেছিল বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী আর শিশুদের। এ ছাড়া অব্যাহত বন্যায় ডুবে গিয়েছিল উঠতি ফসল বাদাম ও ভুট্টাসহ নানান জাতের সবজি। শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছিল। এখন যখন জানা যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২২ লাখের বেশি মানুষ তখন বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। জানা গেছে, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি সবাইকে মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, একদিকে বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষ দিশাহারা, অন্যদিকে করোনাভাইরাস- ফলে এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। তাই এই দুঃসময়ে মানুষ যেন সচেতন হয় সেই প্রচেষ্টাও জারি রাখতে হবে। যে কোনো মূল্যে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণসহ যথাযথ উদ্যোগ জারি রাখতে হবে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি একটি বড় সংকট এবং পানিবাহিত রোগের শঙ্কা থাকে এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখেও সব ধরনের উদ্যোগ জারি রাখতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুযোর্গপ্রবণ দেশ। প্রতি বছরই বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই, কিন্তু প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। মানুষের দুর্ভোগ ও সার্বিক চিত্র আমলে নিতে হবে সঙ্গত কারণেই। সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক এমনি কাম্য।