কার্যকর পদক্ষেপ নিন

দেশের স্বাস্থ্য খাতে বেহাল দশা

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের স্বাস্থ্য খাতে বেহাল দশা বিরাজ করছে। সারা দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চিকিৎসা খাতে রীতিমতো নৈরাজ্য বিরাজ করছে। একদিকে মানুষ ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না, অন্যদিকে ভুল চিকিৎসা ও ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়েছে। করোনাকালে এই সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, প্রভাবশালীদের মদদে ভুয়া চিকিৎসক ও লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসিতে ভরে গেছে খুলনার বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজার, পাড়া-মহলস্না। কথিত এ চিকিৎসকদের দ্বারা খুব সহজেই প্রতারিত হচ্ছেন গ্রামের সহজ-সরল মানুষ। কিন্তু এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন কোনো নড়াচড়া নেই। এই চিত্র কেবল খুলনায় নয়, সারা দেশেই। প্রায়ই আমরা জানতে পারি ভুয়া ডাক্তার গ্রেপ্তারের কথা। অন্যদিকে দেশে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ এবং জেকেজি হেলথ কেয়ারের আরিফ ও সাবরিনা। এরা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে ভুয়া করোনা রিপোর্ট দিয়ে। সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে এরা। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আমরা দীর্ঘদিন থেকে লক্ষ্য করে আসছি, দেশের স্বাস্থ্য খাতে যখন কোনো সমস্যা হয়, তখন তাতে তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তারপর সব কিছুই আগের মতো। এখানে সরকারের আন্তরিকতা বা রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব আছে কিনা তা তলিয়ে দেখতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে পুরনো ধাঁচের ব্যবস্থাপনা। সে কারণে কোনো সংকট দেখা দিলে তাতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু স্থায়ী কোনো পরিকল্পনা হয় না। এটা সত্য করোনা চিকিৎসায় সমন্বয়হীনতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় একে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। প্রকৃত অর্থে স্বাস্থ্য বিভাগে এখন যে সংস্কার দরকার তা হলো আমূল পরিবর্তন। যদি স্বাস্থ্য খাতের আমূল পরিবর্তন করা যায় তা হলে সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি কমে আসবে বলে আমরা মনে করি। দেশে ভুয়া ডাক্তারও আর থাকবে না। কেবল ভুয়া ডাক্তার নয়- ঢাকা শহরের প্রায় ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। যা রোগীর জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া কয়েক দফা ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে। করোনাকালে আরও দাম বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ফার্মেসিভেদেও দামের মূল্য পার্থক্য রয়েছে। কোনো কোনো ওষুধের দাম ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিগুণও রাখা হচ্ছে- যা রীতিমতো অন্যায়। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে দেশ। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ১৫১টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। দেশের ৯৮ শতাংশ ওষুধের চাহিদা মিটিয়ে এসব দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ঔষুধ শিল্পের স্থানীয় বাজারের পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন ডলার। দেশে এখন ২৫৭টি নিবন্ধিত ওষুধ কোম্পানি আছে। এর মধ্যে ১৫০টি সক্রিয়ভাবে তাদের কাজ করে যাচ্ছে। এটা দেশের জন্য ইতিবাচক দিক। এই ইতিবাচক সংবাদের মধ্যে যদি দেশের স্বাস্থ্য খাত টালমাটাল থাকে, অনিয়ম-দুর্নীতি তীব্র হয়ে ওঠে তা হলে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।